১৩ মে, ২০২৩ ১৮:২২
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’

দুর্যোগ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে যত প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুর্যোগ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে যত প্রস্তুতি

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা অতিপ্রবণ ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসন। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় এবং পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোখার আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আগে ও পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছে প্রশাসন।

দুযোর্গ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। জেলার সকল উপজেলার ইউএনও’দের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে। ১৪ উপজেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সকল ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৩০টি স্থায়ী ও ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বন্ধ চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বন্দরে বন্ধ রয়েছে পণ্য ওঠানো-নামানো ও খালাস কার্যক্রম। এছাড়া বন্দরের জেটি থেকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০টি জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘মোখার কারণে বন্দরের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বন্দরের সকল অপারেশনাল কার্যক্রম। বন্দরের জেটি থেকে বড় জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

রবিবার পর্যন্ত বিমান চলাচল বন্ধ

মোখার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্যক্রম রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ভোর ছয়টা থেকে বিমান বন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।

বিমান বন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা থেকে শনিবার ভোর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী, ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং পরবর্তী সময়ে যেকোনো ধরনের সেবা দিতে বিশেষ এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়।

জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের থানা ও ফাঁড়িসমূহে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার কাজ পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

সিএমপি’র মুখপাত্র স্পিনা রানী প্রমাণীক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় চলাকালানীন সেবা দিতে কন্ট্রোল রুম খুলেছে সিএমপি। যাতে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে নগরবাসীকে সেবা প্রদান করা যায়।’

মেডিকেল টিম প্রস্তুত

দুর্যোগ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি করে মোট ৭০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সাথে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।

প্রস্তুত আশ্রয় কেন্দ্র-করা হচ্ছে মাইকিং

‘মোখা’র আঘাত মোকাবিলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে স্থায়ী ৫৩০টি, অস্থায়ী ৫০০ এবং নগরী সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে আশ্রয় নিতে পারবেন ৫ লাখ ১ হাজার ১১০ জন লোক। একই সাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চাল-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে উপকূল এবং পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করা লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এছাড়া উপকূলীয় এবং পাহাড়ে বসবাস করা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর