১৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০৭:২৯

‘ভিসা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা কম হতে পারে’

অনলাইন ডেস্ক

‘ভিসা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা কম হতে পারে’

রানা দাশগুপ্ত। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তবে আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা না ঘটার বা কম ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।

বুধবার প্রকাশিত ভয়েস অব আমেরিকার সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলার ঘটনা না ঘটে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এবং ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন তারা যেন নিরাপদে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে এটা নিশ্চিত করার জন্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে ভয়েস অব আমেরিকাকে জানিয়েছেন এডভোকেট দাশগুপ্ত। 

এছাড়া, নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নাগরিকদের মানবাধিকার কোনোভাবেই যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেজন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-র নেতৃত্বাধীন কমিশনে ও পৃথকভাবে স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আগামী নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা যাতে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিতের জন্যে নির্বাচন কমিশনে ৭ দফা এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেজন্য মানবাধিকার কমিশনে ৫ দফা প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।

গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লাতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগের কর্মীরা ধাওয়া দিয়েছে, এ প্রেক্ষাপটে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট আন্তরিক কিনা, ভয়েস অফ আমেরিকার এমন একটি প্রশ্নের জবাবে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, কুমিল্লার স্থানীয় সরকারদলীয় এমপি বাহারের দুর্গাপুজো নিয়ে অশালিন উক্তি ও মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ২ জন যুবলীগ কর্মীকে গত ১৫ অক্টোবর গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে। তাছাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ২টি সমাবেশ কুমিল্লায় স্থগিত করা হয়েছে, সরকারি দল ও প্রশাসনের এই উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

এছাড়া সম্প্রতি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপুজোর সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়।

এতে পরিষদের পক্ষ থেকে  ২০২১ সালের দুর্গাপুজোর সময় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ২০২২ সালের এই সময়ে শান্তিপূর্ণ সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উৎসব অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলা হয়, সরকার চাইলে শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

এডভোকেট দাশগুপ্ত আরো বলেন, মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের তরফ থেকে এবারের শারদীয় দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। "আমরা এ অঙ্গীকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে (সরকার) যথেষ্ট আন্তরিক কি না তা সময়ই বলে দেবে।" 

চলতি বছরে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার অন্তত ১ মাস আগে থেকে দেশের নানান মন্দিরে বিগ্রহ ভাংচুর ও আক্রমণের ঘটনা তাদের সামনের পরিস্থিতি নিয়ে অধিকতর উদ্বেগ তৈরি করেছে বলেও তিনি জানান।

সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন কিনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন সে আলোচনায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রানা দাশগুপ্ত ইতিবাচক জবাব দেন। 

তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এখনো প্রায় ৩ মাস বাকি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা আমরা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার, ১৪ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, লিবারেল ইসলামিক জোটের সাথে বৈঠক হয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সাথেও আলোচনার চিন্তাভাবনা আমাদের আছে। আমরা মনে করি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্য ও তা অর্জনের জন্যে সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন যা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে আলোচনার বাইরে রেখে করা সম্ভব নয়।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর