মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওতপেতে ছিল ছিনতাইকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার সকাল ৬টা। নগরীর অলিগলিতে কোলাহল শুরু হয়নি তখনো। চা-সিগারেট, লন্ড্রির দোকানদাররা কেবল সাটার খুলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৯টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। যেতে হবে ঢাকার আশুলিয়ার ক্যাম্পাসে। তাই হালকা নাস্তা খেয়েই বেরিয়ে পড়েন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনালের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকার (২২)। রাজধানীর টিকাটুলীর ১২/৪ কেএম দাস লেনের বাসা থেকে বেরিয়েই রিকশায় ওঠেন তিনি। এরপর আর কে মিশন রোড হয়ে মানিকনগর গিয়ে বাসে ওঠার কথা ছিল। রিকশাটি বাসার একটু সামনে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছে যেতেই গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা। নিয়ে নেয় তালহার ব্যবহূত মোবাইল ফোনটি। ছিনতাইকারীরা হুমায়ুন সাহেবের বাড়ির দক্ষিণ পাশে থাকা বায়তুল হুদা জামে মসজিদের দিকে ওতপেতে ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানিয়েছেন তালহাকে বহনকারী রিকশাচালক। কিছুক্ষণ পর একই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন আরেকটি রিকশায় যাওয়া তালহাদের প্রতিবেশী দুই ভাই-বোন। তাদেরও ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাইকারীরা। তালহা সেদিকে এগিয়ে গিয়ে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে ইট নিক্ষেপ করলে এক ছিনতাইকারী রাস্তায় পড়ে যায়। তখন ওই ছিনতাইকারীকে পেছন দিক থেকে জাপটে ধরেন। এ সময় অন্য দুই ছিনতাইকারী পেছন থেকে এসে তালহাকে ছুরি মেরে জাপটে ধরা ছিনতাইকারীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতে তালহা ঊরুতে দুই স্থানে আঘাত পান ও তার হাতের কব্জি কেটে যায়।স্বজনরা জানান, আহত তালহা তাদের বাসার নিচে ‘আব্বা আব্বা’ বলে চিত্কার করলে বেরিয়ে আসেন বাবা আবু রিয়াজ মো. নূর উদ্দিন খন্দকার স্বপন। তিনি তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ওয়ারীর সালাহউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সকাল ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তালহাকে মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। গতকাল তালহাদের বাড়িতে ছিল সুনসান নীরবতা। শোকে বাকরুদ্ধ বাবা-মা। চোখে ছিল ছেলে হারানোর কষ্ট। একে একে আত্মীয়রা বাসায় আসছিলেন। কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। যেন গোটা বাড়িই ঝিমিয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবেশী আজিজুল হাকিম সানি (২৬) ও তার বোন সিফাদ সাদিয়া (২৯) আর কে মিশন রোডের ৪৮৪/১২ নম্বর বাড়ির নিচে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। সিফাদ সাদিয়া বারিধারার একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ভোরে বোন সাদিয়াকে এগিয়ে দিতেই সঙ্গে ছিলেন ভাই সানি।

সূত্র জানায়, দুটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ছিল ছিনতাইকারীরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চক্রটির প্রধান লিটু ও তার সহযোগী হীরাকে। ফুটেজের বাইরে আসলাম নামে আরও একজন ছিল। লিটু-হীরা অস্ত্র মামলায় সাড়ে চার বছর জেল খেটে ৮-৯ মাস আগে ছাড়া পায়। আর ফুটেজের বাইরে ছিল আরেক ছিনতাইকারী আসিফ। ছিনতাইয়ের পর তালহাকে আঘাত করে, লিটু ও হীরা নিরাপদেই চলে যায় ঘটনাস্থল থেকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমাদের টিম ছিনতাইকারীদের ধরতে মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। শিগগিরই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়বে।

তালহার চাচাতো ভাই রাফি জানান, তালহা হোস্টেলে থেকে ড্যাফোডিলের আশুলিয়া ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করত। বৃহস্পতিবার সে দুই দিনের জন্য বাসায় আসে।

তালহাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ার দেওড়ায়। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে তাদের শোরুম আছে। এ ছাড়া তেল আমদানি-রপ্তানির সঙ্গেও জড়িত।

স্থানীয় দোকানদাররা জানান, ছিনতাই এ এলাকার প্রায় নিয়মিত ঘটনা। এর জন্য এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো দরকার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে স্বপন নামে এক রিকশাচালক আহত হন। পরে এলাকাবাসী নাদিম নামে সন্দেহভাজন এক তরুণকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর