শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবেগঘন চিঠিতে যা লিখল নুসরাত

ফেনী প্রতিনিধি

আবেগঘন চিঠিতে যা লিখল নুসরাত

নুসরাতের লেখা আবেগঘন চিঠি

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে। সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ মঙ্গলবার তার বাড়ি থেকে চিঠিটি উদ্ধার করেছে। চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার হাতে যৌন হয়রানির পর সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশে লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারী সূত্র। ওই সূত্র জানায়, নুসরাতের পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠিতে তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে চিঠিটি। এতে ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন নুসরাত। চিঠিতে নুসরাত আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেন। তবে চিঠিতে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নুসরাত। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহত কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিতে নুসরাত লেখেন, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বলল। আরও কী কী বলল, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন, প্রেম করলে কি সে খারাপ? তোরা সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস।’

‘তোরা জানিস না, ওই দিন রুমে কী হইছে? উনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছেন এবং আরও কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উনি আমায় বলতেছেন, নুসরাত, ঢং করিস না। তুই প্রেম করিস না? ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে? ওরা তোরে কী দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন, এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না, হাজারটা ছেলে...। আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে, সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরব না। আমি বাঁচব। আমি তাকে শাস্তি দেব, যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব। ইনশা আল্লাহ।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। শনিবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেওয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। নুসরাত এতে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর