মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পোশাকশিল্পে আরও সহায়তা প্রয়োজন

------------------ রুবানা হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা সংকটে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হওয়ার তথ্য দিয়েছেন মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি বলেছেন, ‘কভিড-১৯ সংকটে পোশাকশিল্পের সরবরাহকারী ও ক্রেতা সবাই বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। এ মহামারী পোশাকশিল্পকে সমূলে নাড়া দেয়। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কভিডের প্রাথমিক বিপর্যয় আমরা কাটিয়ে উঠেছি। তবে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। পোশাকশিল্পের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এ মুহূর্তে যে প্রণোদনা প্যাকেজটি রয়েছে, এর মেয়াদ বৃদ্ধি করুন। প্রয়োজনে নতুন সহায়তা বিবেচনা করুন।’

গতকাল অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এসব বলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ড. রুবানা হক। পরে তিনি প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘আশা করি আগামী জুনের পর সংকট থাকবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এক ধরনের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বর্তমান প্রণোদনার মেয়াদ পাঁচ বছর করা হোক। কয়েক মাসের জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ পেলে নিশ্চিতভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। প্রণোদনার টাকা ১ হাজার ৩৫৪টি কারখানা পেয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের প্রধান বাজারগুলোয় জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অক্টোবর ও নভেম্বরে আবারও উল্লেখযোগ্যভাবে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে, যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব হিসেবে আমরা দেখছি। শিল্পে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মন্দায়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবার হুমকির সম্মুখীন হয়। অক্টোবরে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ১ থেকে ২০ নভেম্বর সময়ে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ, যা এ শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অক্টোবরে বিগত বছরের তুলনায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপানে পোশাক রপ্তানি কমেছে।’

ড. রুবানা হক পোশাকের খুচরা বিক্রয় ও চাহিদায় ধসের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ফেব্রুয়ারি থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রিতে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ইউরোপে লকডাউনের প্রভাবে খুচরা বিক্রি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমছে, যার প্রভাবে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানিমূল্য উভয়ই কমছে।’

বিজিএমইএ সভাপতি পোশাকের নজিরবিহীন দরপতনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবের আগেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ এ পাঁচ বছরে পোশাক রপ্তানিমূল্য হারায় গড়ে বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সমগ্র পৃথিবীতে আমাদের পোশাকের দরপতন হয় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ দরপতন ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। দরপতনের ঋণাত্মক এ ধারা অব্যাহত রেখে সামগ্রিক বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে অক্টোবরে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ১ থেকে ২০ নভেম্বরে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।’

সর্বশেষ খবর