সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বনানী কবরস্থানে চিত্রনায়ক ওয়াসিমের দাফন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে একসময়ের সাড়া জাগানো নায়ক ওয়াসিমকে। গতকাল বাদ জোহর তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াসিমের প্রথম নামাজে জানাজা এবং বনানী কবরস্থানে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সাড়া জাগানো নায়িকা কবরীর মৃত্যুর এক দিনের মাথায় ওয়াসিমের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আমিরাবাদের ফরাজীকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসিম। তাঁর পুরো নাম মেজবাহউদ্দিন আহমেদ। ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি বডি বিল্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে এস এম শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রে আগমন করেন এবং এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৩ সালে মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি তিনি তারকাখ্যাতি অর্জন করেন। পরের বছর তাঁর অভিনীত ডাকু মনসুর, কে আসল কে নকল ও জিঘাংসা চলচ্চিত্রগুলোও ব্যবসা সফল হয়। ১৯৭৬ সালে শফীর ‘দি রেইন’ চলচ্চিত্রটি তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। বাংলা ও উর্দু দুই ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি পৃথিবীর ৪৬টি দেশে মুক্তি পেয়েছিল। তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন এবং লোক ফ্যান্টাসির নায়ক হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো। কর্মজীবনে তিনি ১৫২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- বাহাদুর, লুটেরা, লাল মেম সাহেব ও বেদ্বীন, রাজ দুলারী, সওদাগর, নরম গরম, আবেহায়াত, চন্দনদ্বীপের রাজকন্যা, পদ্মাবতী, রসের বাইদানি, যখন বৃষ্টি এলো, ছন্দ হারিয়ে গেলো, রাতের পর দিন, কে আসল কে নকল, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, দুই রাজকুমার, দুশমন, আলো ছায়া, সন্ধিক্ষণ, জীবন সাথী, বাহাদুর, জীবন মরণ, এক মুঠো ভাত, তাল বেতাল, জানোয়ার, দি রেইন, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, দোস্ত দুশমন, আসামি হাজির, মিস ললিতা, মুখোশ, বিষাক্ত ছোবল, ভালবাসা ভালবাসা, মালেকা সুন্দরী, সোনার ময়না পাখি, সাথী তুমি কার, একশো কোটি টাকা, পাগলা মাস্তান, বকুল ফুলের মালা, ধনী গরীবের প্রেম, মুসা ভাই, ময়না মতির সংসার, অরুণ শান্তি, বাজাও বিয়ের বাজনা ইত্যাদি। চিত্রনায়িকা রোজীর ছোট বোনের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। এরা হচ্ছে পুত্র দেওয়ান ফারদিন এবং কন্যা বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ ১৪ বছর বয়সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে পুত্র ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

সর্বশেষ খবর