শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বৃষ্টি হলেই হালদায় ডিম উৎসব

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী। প্রতি বছর মৎস্য প্রজনন মৌসুম মে-জুনে প্রাকৃতিক জোতে (তিথি) ডিম ছাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এবার সেটি ছিল ১০ থেকে ১৪ মে। তবে নদীতে মা মাছের আনাগোনা থাকলেও ডিম ছাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আর জো লাগবে না। বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে। হালদায় চলবে ডিম আহরণের উৎসব। কয়েকদিন ধরে মাঝেমধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীদের উৎসাহ বাড়ছে। পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস বলছে, আরব সাগরে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব চলছে। এটি চলে যাওয়ার পর বঙ্গোপসাগরে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এটা হলেই এ অঞ্চলে বৃষ্টি হবে। জানা যায়, প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন। এ বছরও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ১ হাজার জন ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা হালদার গড়দুয়ারা, কামদর আলী চৌধুরী ঘাট, সাত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘোনা, মাদার্শাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বৃষ্টি নামলেই নদীতে নামবেন ডিম সংগ্রহে।

ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমরা প্রায় ১ হাজার ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত। ডিম সংগ্রহে জাল, বালতি, থালা-বাসন, বাঁশ, ছাউনিসহ সব ধরনের উপকরণ নিয়ে প্রস্তুত। পরিষ্কার করা হয়েছে গড়দুয়ারার মাছুয়া ঘোনা হ্যাচারিও। এখন অপেক্ষা কেবল বৃষ্টির।’

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘ডিম ছাড়ার মৌসুম চলছে। ২৪ থেকে ২৮ মে আরও একটি জো আছে। তবে এখন আর জো লাগবে না। বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে। ডিম সংগ্রহকারীরা এখন বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন। তা ছাড়া বর্তমানে হালদায় মা মাছের আনাগোনাও বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এ বছরও ডিমের উৎসব হওয়ার আশা করি। কারণ প্রায় আড়াই বছর ধরে হালদায় দূষণ ও মা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়েছে, আশা করি এর সুফল মিলবে। এবারও রেকর্ড পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে।’

জানা যায়, অতীতের অন্তত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। কারণ প্রায় আড়াই বছর ধরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন মা মাছ নিধন, অবৈধ ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ, বালু উত্তোলন ও দূষণের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যে পরিচালিত হয়েছে ২ শতাধিক অভিযান।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘গত আড়াই বছরে ২ শতাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের কারণে মাছ শিকারিরা এখন আর দিনে নয়, রাতের আঁধারেই মা মাছ শিকার করে। কিন্তু খবর পেয়ে আমরাও রাতেই অভিযান পরিচালনা করি। এমনকি মধ্যরাতেও অভিযান পরিচালনা করে ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। তা ছাড়া নদী দূষণ রোধে এশিয়ান পেপার মিল ও হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্ট বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২২ মে হালদা থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি রেকর্ড। এর আগে ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে মাছ পুরোমাত্রায় ডিম ছাড়েনি। মাত্র ৭৩৫ কেজি নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি ও ২০১২ সালে ১ হাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর