সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখা আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম আর নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার এই প্রসিকিউটর শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্ট এবং শহীদ মিনারে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে দাফন করা হয়েছে জেয়াদ আল মালুমকে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী মালুমকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়।

জেয়াদ আল মালুম দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসে ক্যান্সারসহ নানা জটিলরোগে ভুগছিলেন। গত ২৫ মে রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে গত ২ জুন তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

জেয়াদ আল মালুমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ১৪ দলের সমন্বক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু প্রমুখ। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে জেয়াদ আল মালুম প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই পদে তিনি দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে আইনপেশার সনদপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে আইনপেশা পরিচালনার জন্য অনুমতি পান তিনি। পরে ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। জেয়াদ আল মালুম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় করটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

 

বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর হিসেবে জেয়াদ আল মালুমের অবদান উল্লেখযোগ্য।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেয়াদ আল মালুমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার চিরচেনা কর্মস্থল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জানাজায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. শাহীনুর ইসলাম, চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, তদন্ত সংস্থার প্রধান এম সানাউল হকসহ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা ও মরহুমের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

এর পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আইনজীবী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে আইনমন্ত্রীর পক্ষে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। গার্ড অব অনার প্রদান করেন ঢাকার এসি ল্যান্ড মারুফা সুলতানা খান হীরামনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর