শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ছক বিদেশে, দেশে এসে ডাকাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পার্শ্ববর্তী দেশে বসে দেশের বিভিন্ন এলাকার সোনার দোকানে নিশানা করতেন। তার সহযোগীরা সেসব দোকানের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিতেন। তিনি ‘ল্যাংড়া হাসান’। সব ঠিকঠাক হলে ল্যাংড়া হাসান সীমান্ত পেরিয়ে দেশে এসে ডাকাতিতে যোগ দিতেন। এই ডাকাত দলে রয়েছে আট সদস্য। বুধবার রাতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে হাসানসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- হাসান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাসান, তার সহযোগী আরিফ (২৬), আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), সাইফুল ইসলাম (৪৫), আনসার আলী (৫০) ও শাহীন (৩৫)।

তাদের কাছ থেকে পিস্তল, দুটি গুলি, পাঁচটি চাপাতি এবং ডাকাতি শেষে পালিয়ে যেতে ব্যবহার করা প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের ভালুকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতেন এই দলের সদস্যরা। প্রথমে বোমা ফাটিয়ে এবং পরে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছয় থেকে সাত মিনিটের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার লুট করতেন। পরে গাড়িতে করে পালিয়ে যেতেন। এই দলের সদস্যরা সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বোমা ফাটিয়ে সোনার দোকানে ডাকাতি করেছিলেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করে, সে তথ্য আমরা পেয়েছি। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে কিছু চক্র রয়েছে, যারা এসব মাল কিনে থাকেন। আমরা মালিক সমিতিকে অনুরোধ করব, এসব অসাধু চক্রকে প্রশ্রয় দেবেন না। তারা এসব মালামাল কেনার কারণেই দুর্ধর্ষ চক্র ডাকাতি করছে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনব।

ডিবি জানায়, ডাকাত দলের হোতা ল্যাংড়া হাসান ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছেন। ডাকাতি করে পাওয়া মালামাল ভাগাভাগি শেষে আবারও পাশের দেশে চলে যেতেন তিনি। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে গুলি লেগেছিল হাসানের। তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ল্যাংড়া হাসান পাশের দেশের নাগরিক কার্ড করেছে। তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। তাই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তিনি দেশে যেতেন। এরপর সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। পরে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশে অবস্থান করা সহযোগীদের পরিকল্পনা জানাতেন। একইভাবে তিনি আবার দেশে ফিরতেন। ডাকাতি শেষে আবার সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ওই দেশে ফিরে যেতেন। তার আশ্রয়দাতাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। ওই দেশে তিনি কীভাবে নাগরিক হলেন, সে বিষয়ে আমরা লোক পাঠিয়ে খোঁজ করব। আর চক্রটি হাসানের নেতৃত্বে সারা দেশে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতি করেছে। এই ডাকাতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভরি সোনা ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে ডাকাতির পর তিনি ফেনীতে ডাকাতি করেন। সেখানে ডাকাতির সময় একজনকে গুলি করেন। সেই ব্যক্তি পরে মারা যান। খিলগাঁওয়ে ডাকাতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দুটি আলাদা মামলা হয়েছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর এলাকার আল-আমিন জুয়েলার্সে গত ১৭ আগস্ট দুপুরের দিকে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

ডিবি বলছে, আল-আমিন জুয়েলার্সের ওই দোকান থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়। বোমা ফাটিয়ে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ডাকাতির ঘটনা ধরা পড়ে সিসিটিভি ফুটেজে। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

 ২০১২ সালে সিলেটে ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে পা হারিয়ে নাম হয় ল্যাংড়া হাসান। কিন্তু এর পরও থেমে থাকেননি তিনি। অবৈধভাবে যাতায়াত করতে থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে।

সর্বশেষ খবর