মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে পুলিশ দেখে খালের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বেতকা এলাকায় লাশটি পাওয়া যায়। ভিকটিম আবদুল কুদ্দুস সরদার (৪৫) উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের আবদুস ছাত্তার সরদারের ছেলে। তিনি ১৪টি মাদক ও চুরির মামলার আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চাষিবালিগাঁও এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে (পদ্মার শাখা নদী) ঝাঁপ দেন ওই ব্যক্তি।
ঢাকা ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডুবুরি দলের নেতা আবুল খায়ের বলেন, আবদুল কুদ্দুস নিখোঁজ হওয়ার খবর ৯৯৯-এর মাধ্যমে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারজন ডুবুরি পর্যায়ক্রমে নদীতে নেমে ওই ব্যক্তির খোঁজ করেন। ঘটনাস্থলের এক থেকে দেড় কিলোমিটার আশপাশের অংশে খোঁজ করা হয়। অন্ধকার থাকায় উদ্ধার অভিযান সাময়িক স্থগতি করা হয়েছিল। রাত দেড়টার দিকে স্থানীয় লোকজন ফোনের মাধ্যমে জানান, ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে বেতকায় ওই ব্যক্তির লাশ ভেসে উঠেছে।
খবর পেয়ে ট্রলারের মাধ্যমে লাশটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যার আগে পুলিশের একটি দল উপজেলার চাষিবালিগাঁও এলাকায় অভিযানে আসে। কুদ্দুস সরদার ও তাঁর এক সঙ্গী সেখানে ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুজনে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের পিছু নেয়। কুদ্দুস পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের পাড়ে চলে যান। একপর্যায়ে খালের পানিতে ঝাঁপ দেন কুদ্দুস।এছাক শেখ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, খালে অনেক স্রোত থাকায় কয়েকবার পুলিশ কুদ্দুসকে পাড়ে উঠে আসতে বলে। স্থানীয় লোকজনও অনেকবার বলেছেন। কুদ্দুসকে তুলতে নৌকায় থাকা লম্বা একটি বাঁশও পুলিশ এগিয়ে দিয়েছিল। তিনি তীরে না উঠে সাঁতরে অন্য পাড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কুদ্দুসের স্ত্রী বিলকিস বেগমের অভিযোগ, একসময় কুদ্দুসের বিরুদ্ধে গুলির নির্দেশ ছিল। তখন কুদ্দুস পালায়নি। এখন কেন পুলিশ দেখে পালাবে। কুদ্দুসকে ধাওয়া করায় বাধ্য হয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুলিশ ওখানেই ছিল। কুদ্দুস ডুবে যাওয়ার পরও পুলিশ পরিবারকে জানায়নি। তিনি এর সঠিক বিচার চান।
পুলিশ বলছে, কুদ্দুসের বিরুদ্ধে টঙ্গিবাড়ী থানায় চুরি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে ১৪টি মামলা আছে। মাদক বিক্রির পাশাপাশি কুদ্দুস তার বাড়িতে জুয়ার আসরও বসাতেন। তিনি একাধিকবার কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসা করেন।
টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজীব খান বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযানে গিয়েছিল। তখন কুদ্দুস পুলিশকে দেখে দৌড় দেন। পুলিশ থামানোর চেষ্টা করলে তিনি তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে ঝাঁপ দেন। তখনো পুলিশ তাকে ওপরে উঠে আসতে বলেছিল। তিনি পানিতে থেকে পুলিশকে বকাবকি করে অন্য পাড়ের দিকে সাঁতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। গতকাল রাতে কুদ্দুসের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি মাদক সেবন করা অবস্থায় ছিলেন কি না, ময়নাতদন্ত করে দেখা হবে।