আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে। গতকাল এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাছে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের তালিকা পাঠাতে পারবে এবং তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কাছে কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না।
ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যমান আইন/বিধির আওতায় যথাযথ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক কোনো ঋণ গ্রহীতাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক ঋণ পরিশোধপূর্বক ওই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর ৫ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না। কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের বিধান অনুসারে তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে এবং ওই তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে আপিল করা না হলে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আপিল নামঞ্জুর করা হলে সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি ওই ঋণ গ্রহীতাকে দুই মাস সময় দিয়ে তার কাছে পাওনা স¤পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য নোটিস জারি করবে। নোটিস প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা তার কাছে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি পরিচালক পর্ষদের অনুমোদনক্রমে ওই ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে। এরূপ ফৌজদারি মামলা করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি ত্রৈমাসিকে ফাইন্যান্স কোম্পানির নিরীক্ষা কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে হবে। নিরীক্ষা কমিটি ওই উপস্থাপিত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি পর্যালোচনান্তে গুরুত্ব বিবেচনায় এ বিষয়ে তাদের মতামত-সিদ্ধান্ত পরবর্তী পর্ষদ সভাকে অবহিত করবে। ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত নিয়মিত বা বিশেষ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিষয়ে পর্যালোচনাসহ একটি আলাদা অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে টীকা আকারে প্রকাশ করতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপিত বা অনারোপিত কোনো সুদ মওকুফ করা যাবে না এবং ওই হিসাব পুনঃতফসিলও করা যাবে না। কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে চূড়ান্তকৃত হলে গ্রাহক-সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবটি অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কর্তৃক হস্তান্তর করা যাবে না। ইচ্ছকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কর্তৃক গৃহীত ঋণ সম্পূর্ণ আদায়-পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।