আমাদের সংবিধান বলে, রাষ্ট্র জনগণের জানমাল রক্ষার নিশ্চয়তা দেবে। আর একটা কথা সর্বত্র প্রচলিত আছে যে, আইনের হাত এত লম্বা যে, অপরাধীরা কোনো অবস্থাতেই পার পাবে না। কিন্তু ইদানীং আমাদের দেশে কী হলো? একের পর এক খুন হচ্ছে মানুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। নারী ধর্ষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গ্যাং রেইপ করে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আইনের লম্বা হাতেরও বাইরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হচ্ছে না। যে সব অপরাধী ধরা পড়ছে তাদেরও বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে থাকছে। তাই এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে যে, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই গুম, ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধ সংঘটনে অপরাধী-দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া করে তুলেছে।
ব্লগার নিলয়। নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল। বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করে ৭ আগস্ট। সারা দেশ এখন তোলপাড় ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে। গত ক'দিনে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় পরপর কয়েকটি শিশু হত্যা এবং গ্যাং রেইপ ও নারী হত্যার সব ঘটনা যেন চাপা পড়ে গেছে নিলয় বধ ঘটনায়। আমরা জানি না, ক'দিন বাদে অন্য কোনো বর্বর ঘটনা নিলয় হত্যাকাণ্ডকেও চাপা দিয়ে দেবে কিনা। প্রার্থনা করি, তেমন যেন না হয়। দেশে ক'দিন পরপরই এমন একেকটি নৃশংস ঘটনা ঘটে, আর পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনে কিছু বিবেকবান মানুষ হৈচৈ করেন। আশ্বাস মেলে, অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, একটি নৃশংস ঘটনার কোনো ধরনের সুরাহা হওয়ার আগেই ঘটে যায় আরও বড় কোনো হৃদয়বিদারক ঘটনা। সুরাহা হয় না কোনোটারই। কেন এমন হচ্ছে? জবাব খুঁজছে মানুষ; মানুষ জবাব চায়। অভিযোগটা তাৎক্ষণিক যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে; কিন্তু চূড়ান্ত অভিযোগ অবশ্যই সরকারের বিরুদ্ধে।
নিলয় প্রসঙ্গে পাঠকরা এরই মধ্যে জেনেছেন যে, রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহত নীলাদ্রি ফেসবুক ও ব্লগে নিলয় নীল নামে লেখালেখি করতেন। সক্রিয় কর্মী ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের। নিলয়ের স্বজন ও বন্ধুরা জানান, বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন নিলয়। এমনকি গত মে মাসে দুই তরুণ তার পিছু নিয়ে বাসা পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি জানান। সেই ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করলেও পুলিশ তার আবেদনে সাড়া দেয়নি। জীবনের নিরাপত্তাবিষয়ক সাধারণ ডায়েরির আবেদনও গ্রহণ করেনি। উল্টো পুলিশ তাকে দেশ ছাড়তে বলেছিল। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত স্বজনদের এসব আহাজারি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। কিন্তু এটাই সত্য; এটাই বাস্তবতা। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যে জীবন-ঝুঁকি জানানোর পরও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ নয় কি? মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগটি খতিয়ে দেখবেন আশা করি। আমরা বুঝতে পারি, নিলয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা দেশবাসীকেও জানানো হবে এবং আশ্বস্ত করা হবে যে, অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা তো খুবই খারাপ। ১২ মে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অনন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় এক ফটোসাংবাদিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্যই উদ্ধার করা যায়নি। এর আগে ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে দুই তরুণকে স্থানীয় লোকজন আটক করে। পুলিশ তাদের কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও বিস্তারিত তথ্য বের করতে পারেনি। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেকটি চাঞ্চল্যকর ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটে। একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঘাতকদের চাপাতির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন ব্লগার ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর সারা দুনিয়ায় তোলপাড় হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে আসে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেছে; এখনো তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলে গৎবাঁধা একই জবাব পাবেন, তদন্ত চলছে, অপরাধীদের গ্রেফতারেরও জোর চেষ্টা চলছে।
নিলয় হত্যার আগে মাত্র ক'দিনের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্বরোচিতভাবে কয়েকটি শিশু হত্যাকাণ্ডের নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে। এমন পৈশাচিক পন্থায় এসব শিশু হত্যা করা হয়েছে, বর্ণনা শুনেই কেঁদেছে সারা দেশের মানুষ। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে এত হৈচৈ; কিন্তু তারপরও একের পর এক ঘটেই চলেছে পৈশাচিক শিশু হত্যা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাং রেইপসহ মহিলা খুনের ঘটনাও ঘটে চলেছে একের পর এক। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেই কূলকিনারা করতে পারেনি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নয়, সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। একটা সময় শোনা যেত যে, অপরাধ দমনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই, লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। এখন মানুষ এসব দুর্বলতার অজুহাত শুনতে চায় না। আমাদের বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পেছনে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং উন্নতমানের যানবাহন ব্যবস্থাও যথেষ্ট। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাজেট বরাদ্দ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। অপরাধ দমনে এখন এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ থাকার কথা নয়। এখন খুনি অপরাধীদের পাকড়াও করা এবং আইনের আওতায় আনতে না পারার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরই প্রাথমিকভাবে বর্তায়। কিন্তু চূড়ান্তভাবে এ দায়ভার রাষ্ট্রের পক্ষে সরকারের।
বর্তমান সরকারের সাফল্য এই যে, তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তাদের দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করতে পেরেছে ও পারছে, আগের কোনো সরকার তা পারেনি। এরকম পরিস্থিতিতে পৃথিবীর যে কোনো দেশেই শৃঙ্খলা বাহিনীর শৃঙ্খলাই ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। বাহিনীর মধ্যে নানা প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষকে সার্ভিস দিয়ে বেনিফিট নেওয়ার প্রবণতা জাগে। তা ঠেকানোও মুশকিল হয়ে যায়। তখন আর বাহিনীর কাছ থেকে জনগণ প্রত্যাশিত সার্ভিস পায় না। তবে গোটা বাহিনী কখনো নষ্ট হয় না। খারাপের সংখ্যাও নিশ্চয়ই কম। কিন্তু ক্ষমতার স্পর্শ ওই সংখ্যালঘুকে অপরিসীম ক্ষমতাশালী করে তোলে। পৃষ্ঠপোষকতা পায় ওপর থেকে। ফলে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে অন্যরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। এমন একটি পরিস্থিতিই সর্বনাশ করেছে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলের। নিলয় ১৫ মে তার ব্লগে লিখেছিলেন, 'আমাকে দুজন মানুষ অনুসরণ করেছে গত পরশু। অনন্ত বিজয় দাস হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান শেষে আমার গন্তব্যে আসার পথে এ অনুসরণ করা হয়। প্রথমে একটা পাবলিক বাসে চড়ে একটি নির্ধারিত স্থানে এলে তারাও আমার সঙ্গে একই বাসে আসে। এরপর আমি লেগুনায় উঠে যাত্রা শুরু করলে তাদের সঙ্গের একজন আমার সঙ্গে ওঠে। লেগুনায় বসে সেই যুবক ক্রমাগত মোবাইলে টেক্সট করছিল। আমি আমার নির্ধারিত গন্তব্যস্থলের আগেই নেমে গেলে আমার সঙ্গে সেই তরুণও নেমে পড়ে।... এ ঘটনার পর থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি না নিয়ে উল্টো দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল।' আরও আতঙ্কের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, 'এক পুলিশ অফিসার ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছিল যে, এ ধরনের জিডি পুলিশ নিতে চায় না, কারণ ব্যক্তির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে যে কর্মকর্তা জিডি গ্রহণ করবে তার অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকবে সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার জন্য। যদি সেই ব্যক্তির কোনো সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে।' কী সর্বনাশা কথা! জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই জনগণের অর্থে এসব বাহিনী পোষা হয়। সে দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি তো তাদের নিতেই হবে। তা না হলে কী প্রয়োজন এসব বাহিনীর?
নিলয় হত্যাকাণ্ডের আগে আরও ব্লগার খুন হয়েছেন। পরপর বেশ ক'টি শিশুর নির্দয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গ্যাং রেইপ ও হত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে একের পর এক। গত তিন মাসে যত ঘটনা ঘটেছে, একটি ঘটনার ব্যাপারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার মানুষের মনে নূ্যনতম আশাবাদ জাগাতে পারেনি যে, তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। সব হত্যা-ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী খুন নিয়ে একটি লেখায় বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর ব্লগার হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে, বিশেষ করে বিদেশে এবং দেশের ভিতর দুই-চারটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়। নিলয় হত্যা তদন্তে সহযোগিতা করতে এফবিআই এসে হাজির ঢাকায়। এর আগেও অভিজিৎ হত্যা তদন্তে এফবিআই ঢাকায় এসেছিল। অভিজিৎ মার্কিন নাগরিক ছিলেন, তার স্ত্রীও সে দেশের নাগরিক। তার ব্যাপারটা আলাদা। নিলয় কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক গুম-হত্যাকাণ্ডসহ অন্য নানা বিষয়ে এফবিআই তদন্তের জন্য আসে না। প্রশ্ন জেগেছে, সরকার ব্যর্থ হয়ে কি তাদের ডেকেছে? অথবা তারা কি বিষয়টিতে অতিশয় উদ্বেগবশত আমাদের সরকারের অনুমতি নিয়ে বা তাদের জানিয়ে এসেছে? মনে হতে পারে যে, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের অন্তর্গত বিষয় হিসেবে একে দেখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে তো এটা একটা অ্যালার্মিং বিষয়ই বটে! সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কাজটা একা সরকারের নয়, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিরও এতে সমদায়িত্ব রয়েছে। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের উত্থান বা উত্থানপ্রবণতা সবাই মিলে সর্বশক্তি দিয়েই রোধ করতে হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব সরকারকে কাজের মাধ্যমে দিতে হবে। শুধু ব্লগার হত্যা নয়, সব হত্যা, গুম, ধর্ষণ, গ্যাং রেইপ এবং নারী-শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা মুখে বললেই হবে না, অ্যাকশনে প্রমাণ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার দেশে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী জুজুর ভয় দেখিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের যে পরামর্শ, তাদের সেই অবস্থান বদলানোর মতলবে কোনো কোনো ঘটনার সঙ্গে নিজেরা জড়িত অথবা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করছে তাও খণ্ডন করতে হবে সরকারকে। ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের রহস্যময় ভূমিকার অভিযোগ এনেছে গণজাগরণ মঞ্চ। এরও জবাব দেওয়া জরুরি।
শেষ করব এই বলে যে, ব্লগার হত্যা, শিশু হত্যা, গ্যাং রেইপ, নারী ধর্ষণ ও হত্যা সবই গর্হিত অপরাধ। কথা বলতে হবে সব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গদি রক্ষার কাজে দলীয় ক্যাডারের মতো যথেচ্ছ ব্যবহার না করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার করলেই তারা অধিকতর দায়িত্বশীল হবে, জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। তাতেই রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণ।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সবার প্রতি যে স্বরে আহ্বান জানাচ্ছেন, হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের স্বরটা ততটা জোরালো নয় বলে সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন, ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিষয়টি সরকারি তরফ থেকে এতটাই গুরুত্ব পেয়েছে যে, তাতে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার সবার। কেউ যাতে মনে না করে যে, মুসলিম সমর্থন ও ভোটের হিসাব মাথায় রেখে সরকার এমন অবস্থান নিয়েছে। হিসাব যদি এমনই হয় তো বিএনপিকে গালি দিয়ে লাভ কী?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]