'একজন নেতার মৃত্যু কেবল তার শারীরিক প্রস্থানে হয় না, তার প্রকৃত মৃত্যু ঘটে যখন তার আদর্শের মৃত্যু হয়'- ভ্লাদিমি ইলিচ লেনিনের এই উক্তিটি যেমন অমরগাথা। আমরা পৃথিবীর দেশে দেশে দেখি, মহান নেতারা তাদের মৃত্যুর পর আরও প্রভাবশালী হয়েছেন, চিরঞ্জীব হয়েছেন। অক্টোবর বিপ্লবের নায়ক লেনিনের দেহাবসান তার আদর্শের মৃত্যু ঘটায়নি। রুশ বিপ্লবের ধারায় কমিউনিজমের লালঝাণ্ডায় তিনি ছিলেন আরও বেশি শক্তিশালী, আরও জাগ্রত। গর্বাচেভের গ্লাসনস্ত-পেরেস্তাইকার মাধ্যমে আসলে লেনিনের দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে। আজ লেনিন কেবল বইয়ের কপচানো বুলি, কারণ তার আদর্শের মৃত্যু ঘটেছে। তাই নেতাকে হত্যার চেয়েও কঠিন কাজ হলো তার আদর্শকে হত্যা করা। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সভাপতি তাই যথার্থই বলেছেন, 'ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি।' সত্যি '৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল; কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করা যায়নি। সপরিবারে হত্যার পরও বঙ্গবন্ধু আবার জেগে উঠেছেন বাংলায় তার কন্যা শেখ হাসিনার চেতনার মশাল হয়ে।
কিন্তু জাতির পিতার হত্যার ৪০তম বার্ষিকীতে এসে মনে হলো, আমরা কি তার আদর্শকে হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছি? চাটুকার, মতলববাজরা কি জাতির পিতার প্রকৃত হত্যার মঞ্চ প্রস্তুত করে ফেলেছে? বঙ্গবন্ধু কি তার দ্বিতীয় মৃত্যুর অপেক্ষায়?
এবার বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এবার ছিল জাতির পিতার ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী। আওয়ামী লীগ তাই এবার ৪০ দিনব্যাপী শোক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী ১ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বাসে করে গিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে শোক জানান। আগস্টের প্রথম দিন মনে হলো কালো বিলবোর্ডে ঢাকা যেন ঢেকে গেছে। ফার্মগেটে এক বিলবোর্ড দেখলাম যেখানে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাওয়া গেল না, পাওয়া গেল গোটা ছয় নেতার ঢাউস সাইজের ছবি। একই অবস্থা খামারবাড়ির সামনে, ধানমন্ডিতে, গুলশানে সর্বত্র।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর চেয়ে পাতি, আধাপাতি নেতাদের ছবিই বড়। কোথাও আবার এসব বিলবোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর ছবি বড় করে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছোট করে রাখা হয়েছে। লাগামছাড়া ধৃষ্টতা ছাড়া এসব আর কি? এসব বিলবোর্ড কি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, নাকি ওইসব মতলববাজের আত্দপ্রচারের জন্য? এরা কি বুঝতে পারে এর মাধ্যমে এরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা করছে? এর মাধ্যমে আসলে এরা বাংলাদেশকে অপমানিত করছে। সংসদ ভবন থেকে খামারবাড়ি সংযোগ সড়কে ঢাউস সাইজের একটা বিলবোর্ডে দুই অর্বাচীনের ঢাউস সাইজের ছবি। কোনায় বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবি। এরাই কি ছোট মোশতাক নয়। আগস্ট মাসের শুরু থেকে সারা দেশের অলিগলি সড়ক-মহাসড়কে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে সয়লাব অথচ কোথাও যেন বঙ্গবন্ধু নেই। এ যেন স্যামুয়েল টেইলার কোলরিজের কবিতার পঙ্ক্তির মতো ‘Water water every where, not a drop to drink.’চারদিকে বঙ্গবন্ধুর এত ছবি টাঙানোর কোনোটাই হৃদয় থেকে যেন উৎসারিত নয়, সবই মেকি, সবই পোশাকি, সবই লোক দেখানো। আমার মনে পড়ল ১৯৯৪ সালের কথা। যখন জাতির পিতা নিষিদ্ধ। আমি তখন আজকের কাগজে কাজ করি। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের ব্যাখ্যায় আমি একটি প্রতিবেদন লিখলাম 'সংবিধান অনুযায়ী এখনো বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা।' ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র যেহেতু সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই ঘোষণাপত্র জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীতে বাতিল করেননি, তাই বঙ্গবন্ধু এখনো সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা। এই প্রতিবেদন লেখার পরদিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তার অফিস কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানান। সেদিনের দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে যে কেঁদেছিলেন, আবেগের যে শিহরণ সেখানে উপস্থিত সবার মধ্যে ছিল, তা অনন্য। ওই একটি ছবির ওজন যেন এখানকার লাখো ছবির চেয়ে বেশি। ওই একটি ছবি জাতির পিতার আদর্শের অমরত্বের ঘোষণা দিয়েছিল। আর এবার শোক দিবসের লাখো ছবি যেন চাটুকার আর মতলববাজদের হাতে জাতির পিতার আদর্শকে ক্ষতবিক্ষত করছে।
এবার আগস্ট মাসে চাঁদাবাজি, নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে প্রতিদিন। কুষ্টিয়ায় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বাড্ডায় গোলাগুলি, চাঁদপুরে চাঁদার দাবিতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পেটানো- এ ঘটনাগুলো শোক দিবসের তাৎপর্যকেই কেবল ক্ষুণ্ন করেনি, জাতির পিতার আদর্শকে বিবর্ণ করেছে। সাধারণ মানুষ, যাদের হৃদয়ের কোণে বঙ্গবন্ধু দীপ্যমান তাদের ভ্রু কুঁচকে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, জাতির পিতার আদর্শের পতাকা বইবার শক্তি কি এই আওয়ামী লীগের আছে?
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মাশরুমের মতো অনুষ্ঠান বানিয়েছে। অনুষ্ঠানের ধরন দেখে আমাদের মতো মূর্খ দর্শকরা ভিরমি খেয়েছে। এসব কি শোক দিবসের অনুষ্ঠান নাকি বিজয় দিবসের। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে অসমাপ্ত আত্দজীবনী থেকে পাঠ। ১ আগস্ট থেকে একটি বহুল আলোচিত চ্যানেল এটি সম্প্রচার শুরু করে। প্রথম দিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় বইয়ের ভূমিকা অংশ পাঠ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভূমিকা পাঠের আগে হঠাৎ করেই সাজানো-গোছানো ইমালসন করা স্টেজে কেতাদুরস্ত এক কবি ঝাঁপিয়ে উঠলেন। যে কবিকে চাটুকার শিরোমণিও বলা যায়। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট শোকাবহ ঘটনার পর তিনি তারুণ্যকে 'খেলারাম' খেলে যার মাধ্যমে অশ্লীলতার তালিম দিয়েছেন। তারুণ্যের মধ্যে তিনি দ্রোহ এবং আদর্শবাদিতার বদলে লাম্পট্য এবং আদর্শহীনতাকে উসকে দিতে চেয়েছেন। স্বৈরাচারকে খুশি করতে যিনি কাব্যকাথা রচনা করেছেন। ইদানীং তিনি উপাধি বিতরণ করেন, সেই উপাধি সবাইকে বাধ্যতামূলক বলারও 'ফতোয়া' দিয়েছেন। যদিও জনগণ তার এই 'ফতোয়া' গ্রহণ করেননি। কোন আশায় তিনি সরব এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমারও। ভূমিকার আগে তার প্রাককথন কেন তার বোধগম্যতা অনুভবের জন্যই এই অল্প ব্যাখ্যা দিতে হলো। এই আত্দকথন অনুষ্ঠানটি যত না বঙ্গবন্ধুর আত্দজীবনী পাঠ, তার চেয়ে বেশি হয়েছে চাটুকারিতা। চাটুকারদের জড়ো করে তাদের দিয়ে একেক দিন বঙ্গবন্ধুর আত্দজীবনী পাঠ করানো হয়েছে। অনুষ্ঠান আয়োজকরা 'পাঠ' এবং 'আত্দস্থ' দুটোর পার্থক্য করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্দজীবনী' আত্দস্থ করার বিষয়। এটা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার বিষয়। এই আত্দজীবনী যত না বঙ্গবন্ধুর জীবনী তার চেয়ে বেশি তার রাজনৈতিক দর্শন, তার চেতনা। চ্যানেলটি বঙ্গবন্ধুর আত্দজীবনীকেও একটি পণ্য বানিয়ে ফেলল। এই চ্যানেল ছাড়াও সব চ্যানেলে অনুষ্ঠান হয়েছে, তারকার অভাব হয়নি। এসব দেখেশুনে আমার স্মৃতিতে ২০০১ সালের জুলাই মাস ভেসে উঠল। বন্ধু নঈম নিজাম তখন এটিএন বাংলায়। এক সকালে আমাকে ফোন দিয়ে তার অফিসে দ্রুত আসতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান সাহেবের রুমে উপস্থিত হয়ে দেখলাম- সুলতান শরীফ খান (যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী), ইকবালুর রহিম (বর্তমানে হুইপ) বসে আছেন। দুই দিন আগে আওয়ামী লীগ বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হাতবদলের নজির স্থাপিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই এটিএন বাংলায় প্রচার শুরু হয় মাহি বি চৌধুরী পরিচালিত এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থাপিত বিএনপির প্রযোজিত অনুষ্ঠান 'সাবাস বাংলাদেশ'। তখন অল্পকটা চ্যানেল। সত্য-মিথ্যার মিশেলে অনুষ্ঠান প্রচারের পরপরই ব্যাপক সাড়া পড়ে। আওয়ামী লীগ তখন হতবিহ্বল। নঈম নিজাম বলল, তুমি আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিদিন একটি করে ডকুমেন্টারি বানিয়ে দাও। কি অবাস্তব কথা! কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া প্রতিদিন একটি করে প্রামাণ্যচিত্র বানানো। মাহফুজুর রহমান বললেন, 'আমি কোনো টাকা (চাঙ্ক ভাড়া) নেব না। আমি ভাবলাম, পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তথ্য প্রতিমন্ত্রী নিজে একজন গবেষকও বটে। অথচ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রস্তুতিহীন। যাই হোক, জাফর ভাই (প্রয়াত আবু জাফর সিদ্দিকী) এবং ফারুক ভাইকে (প্রয়াত আহমেদ ফারুক হাসান) নিয়ে আমরা 'মিশন ইমপসিবলে' ঝাঁপিয়ে পড়লাম। নঈম প্রতিদিন তদারকি করে। মোনায়েম সরকারের বাসা আমাদের ক্যাম্প অফিস। সুলতান ভাই আর মাহমুদ ভাই আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। নির্বাচনের আগে শেষ অনুষ্ঠানটি আমরা জাঁকজমক করে করতে চাইলাম। সিদ্ধান্ত হলো প্রগতিমনা শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান দিয়ে সাজানো হবে এই পর্ব। আমরা এখনকার চাটুকারদের দ্বারে দ্বারে গেলাম। একমাত্র শমী কায়সার ছাড়া কেউ রাজি হলেন না ক্যামেরার সামনে কথা বলতে। আজ যিনি সব অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা কপচান, যিনি স্বঘোষিত নাগরিক কমিটির নেতা, তিনি তো আমাদের রীতিমতো অপমান করলেন। যাক, সে কথা। শুধু প্রশ্ন, আজ যারা তোষামোদির পসার সাজিয়ে উৎসবের শোক দিবস পালন করছে, তাদের কি দুঃসময়ে পাওয়া যাবে?
এবার জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। ঢাকা উত্তরের মেয়র রুচিবান মানুষ। এই একই ধরনের অনুষ্ঠান গত বছর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ করেছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। ওই অনুষ্ঠান ছিল মাসব্যাপী। ওই আইডিয়াকে আনিসুল হক আরও বিন্যস্ত আঙ্গিকে সাজিয়েছেন। কিন্তু যুবলীগের অনুষ্ঠানে যে আবেগ, শোক এবং নিস্তব্ধতা ছিল, উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানে ছিল উৎসব, আনন্দের একটা বেমানান মেজাজ। অনুষ্ঠানে আবার কবিতার প্রসার বসালেন ইদানীং তৎপর সেই কবি। অথচ ১৫ আগস্ট নিয়ে যদি একটি কবিতা পাঠ করা হয় তাহলে অবশ্যই সেটা হবে রফিক আজাদের 'এই সিঁড়ি', যে কবিতাটি বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দনকে কলমে ফুটিয়েছে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপস্থিতিতে মেয়র ভুল তথ্য দিলেন। বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব বাতিল করেছিল যা আর কোনো দিন প্রত্যাহার করা হয়নি। অথচ এ উপাচার্যের নেতৃত্বেই সিন্ডিকেটের এক সভায় বঙ্গবন্ধুর শাস্তির আদেশ বছর দুয়েক আগে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য এরকম একটি অনুষ্ঠানে ভুল তথ্য উপস্থাপন কি কাম্য? মেয়র আনিসুল হক সুদর্শন, সুবক্তাও বটে। উপস্থাপনায় তার জুড়ি ভার। কিন্তু ইতিহাস বাচনভঙ্গি দেখে না, ইতিহাস শুধু সত্য খোঁজে, ইতিহাস খোঁজে পূর্ণতা। আনিসুল হক তার বক্তব্যে দুটো গল্পের পর বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি উদ্ধৃত করলেন। 'ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।' কিন্তু এ কথাটা বঙ্গবন্ধু কোন প্রসঙ্গে বলেছেন? পুরো উদ্ধৃতিটি এ রকম- 'ভাইয়েরা আমার, পরিশ্রম না করলে, কঠোর পরিশ্রম না করলে সাড়ে ৭ কোটি লোকে ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করা যাবে না।' এটাই ছিলও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা, বঙ্গবন্ধুর দর্শন। ভিক্ষুক থেকে ধনী হওয়ার ১০১টা উপায় আছে। জিয়ার মতো রাজনীতিকে ডিফিক্যাল্ট করে কালো টাকার মালিক হওয়া যায়। এরশাদের মতো লুটপাট করে ধনী হওয়া যায়। তারেকের মতো কমিশন নিয়েও ধনী হওয়া যায়; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা পরিশ্রম এবং কঠোর পরিশ্রম করেই উন্নতি করবে। এটাই তার নির্দেশিত পথ। আনিসুল হকের বক্তৃতায় যদি পুরো কথা আসত তাহলে ভালোই হতো। তরুণ প্রজন্ম জানত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নয় বরং পরিশ্রমই উন্নতির চাবি। তারপরও তিন দিন এ প্রদর্শনীতে অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন। ভেজালের ভিড়ে এই বা কম কি?
এবার ১৫ আগস্টকে সর্বজনীন শোক দিবস করার আহ্বান জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগই কি শোকের আবহ রাখতে পেরেছে? নাকি মতলববাজ সুবিধাবাদী, চাটুকাররা গ্রাস করে ফেলেছে শোক আর আবেগ? শোক দিবস যেন চাটুকারদের উল্লাসের নৃত্যে পরিণত হয়েছে। এসব ছলনা, প্রবঞ্চনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মৃত্যুর বিপদ সংকেত স্পষ্ট।
এত হতাশার মধ্যেও শোক দিবসের দুটো ছবি সব বাঙালির হৃদয়ের ফ্রেমে বন্দী হয়ে আছে। ১৫ আগস্ট বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার দুই কন্যা যখন ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন আর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে একাকী বড় বোন যখন তার অনুজাকে পাশে নিয়ে শোকার্ত কিন্তু দৃঢ় চিত্তে দাঁড়ালেন, এটাই বোধহয় শোককে শক্তিতে পরিণত করা। এই দুজনের এ দৃশ্যটি আবার আশায় বুক বাঁধায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মৃত্যু হবে না। এসব চাটুকার এবং আবর্জনা হয়তো তারাই পরিষ্কার করবেন সহসাই।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল : [email protected]