১ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:৩৪

উল্টো চোখের ক্ষমাহীন জাতির ইতিবৃত্ত!

গোলাম মাওলা রনি

উল্টো চোখের ক্ষমাহীন জাতির ইতিবৃত্ত!

বাংলাদেশের বাতাস হঠাৎ করেই কেন জানি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অজানা আশঙ্কা, ভয় এবং হতাশা পুরো দেশকে অস্থির করে তুলেছে। চারদিকে হাজারও গুজব এবং উল্টাপাল্টা কথাবার্তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার এবং সরকারি দলই মূলত কথাবার্তা বলছে। আর বিরোধী দলগুলো একেবারে চুপসে গেছে। অন্যদিকে মার্কিন বলয়ের পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা নানারকম কৌশলী  কথাবার্তা এবং ভিন্নমাত্রার তৎপরতা প্রদর্শন করে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছেন। দুজন বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ড এবং পবিত্র আশুরার রাতে শিয়া সম্প্রদায়ের মিছিলে গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা বিশ্ব মিডিয়াতে এমনভাবে প্রচার করাচ্ছেন তাতে মনে হতে পারে বাংলাদেশ আফগানিস্তান, সিরিয়া কিংবা ইরাকের চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়ে গেছে।

ক্ষমতাসীন সরকার স্পষ্টতই বর্তমানের অস্থিরতা এবং অরাজকতাকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সমন্বিত ফল বলে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন। সরকারি দলের কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেও বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছেন। অর্থমন্ত্রী তো স্পষ্টই বললেন যে, মার্কিনিরা শুরু থেকেই বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। অধিকন্তু বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য গোপনে এবং প্রকাশ্যে গত ৪৪ বছর ধরে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি এবং জাতিটিকে ভিক্ষুকের জাতি আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রশাসন সুদীর্ঘকাল ধরে বাঙালিকে ভিক্ষুক বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে সরকারি দল মনে করে। তারা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, জাসদ গণবাহিনীর তাণ্ডব, পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তি, গার্মেন্ট সেক্টরে শ্রমিক বিদ্রোহ উসকে দেওয়া এবং অরাজকতা সৃষ্টি প্রভৃতির জন্য সরাসরি মার্কিনিদের দায়ী করে। আওয়ামী লীগ মনে করে যে, ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডে যেমন মার্কিনিদের হাত ছিল তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যার ক্ষমতাচ্যুতি কিংবা জীবননাশের ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। সৈয়দ আশরাফসহ আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা এ ধরনের অভিযোগ করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।

দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। ভূতাত্তি¡ক রাজনীতিতে  প্রায় ৭০ বছর ধরে মার্কিনিদের সঙ্গে পাকিস্তানের রয়েছে নিবিড় বন্ধুত্ব। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধকালীন গণহত্যা, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাওনা-দেনা এবং নব্য রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান ও অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি সব কিছুর মূলে রয়েছে মার্কিনিদের কূটচাল। গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশে যে কয়জন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ লাভ করেছিলেন তাদের সবারই আচার-আচরণ, কথাবার্তা এবং ভাবভঙ্গি ছিল রীতিমতো বিরক্তিকর, অপমানজনক এবং অসৌজন্যমূলক। তারা এমনভাবে চলাফেরা করার চেষ্টা করতেন যাতে মনে হয় তারাই বাংলাদেশের সব দণ্ড-মুণ্ডের অধিকর্তা আর এদেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান তাদের হুকুমের অধীন।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করলেন তখন তিনি কতগুলো কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন। নবম সংসদের প্রথম সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে তিনি বেশ খোলামেলাভাবে অনেক কথা বলেছিলেন। পরবর্তীতে আমি দেখেছি তিনি সেসব কথার প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে ছেড়েছেন। নিজ দলের কিছু লোককে তিনি বেইমান ও বিশ্বাসঘাতকরূপে চিহ্নিত করে রেখেছিলেন ১৯৭৫ এবং ১/১১’র প্রেক্ষাপটকে মূল্যায়ন করে। এ লোকগুলো যাতে রাজনৈতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে এবং তার কাজে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য তিনি মনে মনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছিলেন। এ ছাড়া দলের মধ্যে আরেক শ্রেণির লোককে তিনি চিহ্নিত করে রেখেছিলেন যারা সব সময় বাড়া ভাতে ছাই ঢালে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলের কৌশলগত সিদ্ধান্তে বারবার হস্তক্ষেপ করে। ১৯৮৬ সালে এরশাদের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ১৯৯১ সালের নিশ্চিত বিজয়কে পরাজয়ে রূপান্তর করার দলীয় খলনায়কদের তিনি যে কোনো মূল্যে নিষ্ক্রিয়, মূল্যহীন এবং ফালতু লোক হিসেবে জাতির কাছে তুলে ধরার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সময়ের বিবর্তনে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনা তার প্রতিজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।

শেখ হাসিনার দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা ছিল প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে এমন একটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা যাতে করে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশের পাওনাগুলো আদায় করে নেওয়া যায় এবং রাষ্ট্রটির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, শেখ হাসিনা তার জীবনের সর্বাপেক্ষা সংকটময় ক্রান্তিকালে এবং যৌবনের স্বর্ণালী সময়ে প্রায় ছয় বছর দিল্লিতে ছিলেন সে দেশের সরকারের রাজনৈতিক আশ্রয়ে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে সংকটময় সময়। ভারতীয় অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, বিদেশনীতি, ক্ষমতার পালাবদল, অস্থিরতা ইত্যাদি অনেক কিছুই খুব কাছে থেকে দেখার এবং মূল্যায়ন করার যে সুযোগ শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনীতিবিদ পাননি। অতীতের সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভারতকে এমন এক কূটনৈতিক জালে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন যেখান থেকে বাংলাদেশের পাওনা আদায়ে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হতে পারে।

২০১৫ সালে এসে বাংলাদেশি লোকজন হয়তো রাজনৈতিক কারণে শেখ হাসিনার কর্মপরিধির যথাযথ মূল্যায়ন করবে না। কিন্তু আগামী দিনে তারা যখন নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করবে তখন অবাক বিস্ময়ে স্মরণ করবে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সমুদ্রে বিজয় অর্জন এবং একই সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখা সত্যিই কঠিন ছিল। অন্যদিকে স্থলসীমানা চুক্তির মাধ্যমে গত ৭০ বছরের পুরনো এবং জটিল সমস্যাটি সমাধান করে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা যে চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না তাও দেশবাসী স্বীকার করতে বাধ্য হবে। ভারত থেকে কম মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি, বহুজাতিক ট্রানজিট চুক্তি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তি সম্পাদনও শেখ হাসিনার ভারত বিশেষজ্ঞতা এবং কূটনৈতিক সফলতা প্রমাণ করে।

শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রতিজ্ঞা ছিল মার্কিনিদের সঙ্গে সম্মানজনক এবং মর্যাদাময় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন। এ কাজে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বাজেট ঘাটতি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতি নির্ভরতা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের স্পর্শকাতর সরকারি পদগুলোতে অনেক লোক বসেছিল যাদের সবাই মার্কিন লবির এবং বিশ্বব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে জানত। প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেন। তিনি প্রাত্যহিক রাষ্ট্রীয় কর্মে মার্কিন লবির লোকজনের পরামর্শ এড়িয়ে চলতে আরম্ভ করলেন এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করার কাজে জোর তৎপরতা শুরু করলেন। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা সরকারকে নাজেহাল করার জন্য উঠেপড়ে লাগল। তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা সারা দেশে এমন তৎপরতা শুরু করলেন যা দেখলে কিংবা শুনলে যে কোনো আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন স্বাধীন দেশের নাগরিকের অপমানবোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে বাধ্য।

প্রধানমন্ত্রী নিজে চেষ্টা করলেন ড্যান মজিনাকে আপন করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু ফল হলো হিতে বিপরীত। মজিনা তার বিরক্তিকর আচরণ এবং অসংলগ্ন কথাবার্তার মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। এ অবস্থায় সরকার বিকল্প পথের সন্ধান করার লক্ষ্যে ভারত-রাশিয়া এবং চীনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. ইউনূস বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসকে ভালো জানতেন। কিন্তু রাষ্ট্রদূত মজিনা যখন গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিলেন তখন সরকারও ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে কঠোর হতে হতে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেল। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, হোয়াইট হাউস, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে এমনভাবে অবস্থান নিলেন যাতে শেখ হাসিনা মনে করলেন- একদিকে বাংলাদেশ আর অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংক এবং মার্কিন লবির পশ্চিমা গোষ্ঠী। তিনি বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন।

মার্কিনিদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গিয়ে সরকারকে চীন, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সফলতা এবং মার্কিনবিরোধী যুদ্ধের স্বার্থকতা বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। তারা দেখেছে- মার্কিনিরা সব সময় শক্তের ভক্ত এবং নরমের যম। তারা প্রচণ্ড উদ্ধত, অহংকারী এবং উল্লম্ফনকারী বটে কিন্তু তাদের সামনে কেউ সাহস করে দাঁড়ালে তারা সমঝোতার পথ বেছে নেয়। অন্যদিকে কেউ যদি তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তবে দুনিয়ার তাবৎ ঝক্কি-ঝামেলা, অত্যাচার এবং অবিচার আত্মসমর্পণকারীর মাথার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। কাজেই সরকার সর্বশক্তি দিয়ে মার্কিনিদের সব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেয়। গত প্রায় সাত বছর ধরে সরকার বেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে গেলেও সাম্প্রতিককালে নতুন করে মার্কিন চাপের মুখে পড়েছে। এবারের চাপটি বেশ জটিল এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সরকারকে এ যাত্রা সব কিছু সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হবে।

সরকার বর্তমান অবস্থার জন্য একদিকে যেমন মার্কিন মদদপুষ্ট বিদেশি শক্তিকে দায়ী করছে অন্যদিকে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও সমান তালে দায়ী করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারি কাজকর্ম, কথাবার্তা এবং আচার-আচরণে বেশ অসমাঞ্জস্যপূর্ণ অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের এই নাজুক অবস্থান স্পষ্টতই সরকারবিরোধীদের যথেষ্ট আনন্দ দান করছে। অন্যদিকে এদেশীয় মার্কিন লবির লোকেরা খুশির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। আমার আজকের লেখাটি মূলত তাদেরই জন্য যারা নিজেদের মার্কিন তাঁবেদার ভাবেন এবং বিশ্বাস করেন- মার্কিন সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ একচুলও এগোতে পারবে না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি সরকারের অনেক কর্মকাণ্ড পছন্দ করি না। তাদের অনেক কিছুর সঙ্গে একমত নই। তবে মার্কিন নীতির বিষয়ে সহমত পোষণ করি। আমার মতে, মার্কিনিরা একটি ক্ষমাহীন জাতি। তারা দুনিয়ার কাউকে ক্ষমা করে না। এমনকি নিজ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও ক্ষমা করে না। স্বাধীনতা লাভের আগে মার্কিনিদের ইতিহাস খুবই লজ্জার। অন্যদিকে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৫০ বছর তারা এমন সব আত্মকলহ, নোংরা কাজ এবং গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে যে নির্মমতা দেখিয়েছে তা সমসাময়িক দুনিয়ার অন্য কোনো ভূখণ্ডে দেখা যাবে না। প্রথম মহাযুদ্ধের পর তারা বিশ্ব রাজনীতিতে আবিভর্‚ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বহু জনপদে তারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে কিন্তু ভুল করেও একটিবার দুঃখ প্রকাশ করেনি। অন্যদিকে সারা দুনিয়ায় তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য হাজার হাজার বন্ধু, লাখ লাখ তাঁবেদার এবং কোটি কোটি ভাড়াটে এজেন্ট সৃষ্টি করেছে। স্বভাব অনুযায়ী তারা এসব লোককে কেবল ভাড়াটিয়া চাকর বলেই জ্ঞান করে। তাদের সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। বরং যে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সঙ্গে হঠাৎ করে সম্পর্কের ইতি টেনে চোখ দুটো উল্টিয়ে ফেলে।

গত একশ বছরের ইতিহাসে মার্কিনিরা তাদের কোনো বন্ধুর বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে এমন একটি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।  বরং তারা তাদের বন্ধুদের বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে হাসিমুখে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে এমন উদাহরণ তালাশ করার জন্য খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার পড়বে না।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই কথাগুলো আমার মনে হলো এ কারণে যে, ব্যক্তি শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ নামক দলটির পতন ঘটাতে গিয়ে আমরা যেন বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক কিংবা লিবিয়া বানিয়ে না ফেলি। অন্যদিকে স্বদেশী প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্মূল করার জন্য যেন উল্টো চোখের ক্ষমাহীন লোকের সেবাদাসে পরিণত না হই। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল  করলে ইতিহাস কোনো দিন আমাদের ক্ষমা করবে না।

লেখক : কলামিস্ট।

 

সর্বশেষ খবর