১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৪:২৭

শক্তি প্রয়োগের রাজনীতির ফল শুভ নয়

কাজী সিরাজ

শক্তি প্রয়োগের রাজনীতির ফল শুভ নয়

গত ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ এবং ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে শাসক লীগ আয়োজিত জনসভায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাষণের মধ্যে একটি যোগসূত্র লক্ষ করা যায়। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে সরকার গঠনের আগে তার দলের প্রতিশ্রুতি ও অর্জনের কথা উল্লেখ করে আগামী দিনের স্বপ্নের কথা বলেছেন।  সে স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অবশ্যই তার সময়ের প্রয়োজন। প্রচ্ছন্নভাবে জাতিকে সে কথাটাই হয়তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তিনি বার বার একটা কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণ করে; অন্যরা তা ধ্বংস করে। কথাটা এই দাঁড়ায় যে, উন্নয়ন চাইলে, দেশের কল্যাণ চাইলে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাখঢাক না করে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরবর্তী টার্মই শুধু নয়, আরও ‘কয়েক টার্ম’ ক্ষমতায় রাখতে হবে। দুজনের বক্তব্যেই মনে হয় তারা আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রচারণাতেই নেমে গেছেন। তারা যে দৃঢ় অবস্থানে এতদিন ছিলেন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো দলের এক্সট্রা প্লেয়াররা প্রায়শ যা বলে থাকেন, সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের আগে পরবর্তী একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা নয়। সময়ের ব্যবধান আরও প্রায় তিন বছর। এত আগে তাহলে নির্বাচনের ‘ঘ্রাণ’ ছড়াচ্ছেন কেন? দুজনের বক্তব্যে আরও একটা মিল আছে। দুজনই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ‘আসুন, দল-মত ও বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখি।’ ৫ জানুয়ারি ও ১২ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস ও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের জনসভায় দলের নির্বাহী প্রধান সৈয়দ আশরাফুলও একই কথা বলেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এসব বক্তব্যকে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দলের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্য-বক্তব্যও আছে। এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। গণতন্ত্রের দেশ বলতে আমরা যাদের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করি, সেই সারির দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থীদের পারস্পরিক আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ লক্ষ করলে আমাদের দেশের একের বিরুদ্ধে অপরের আক্রমণকে খুব একটা বড় ধরনের অপরাধ বলে গণ্য করা যাবে না। বহুদলীয় ব্যবস্থায় বহু দল, বহু মত তো থাকবেই। পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্য অভিযোগও থাকবে। রাষ্ট্র ও জনস্বার্থের মৌলিক বিষয়টিই বড়। শাসক লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর অতি সাম্প্রতিক বক্তব্যের নির্যাসটা বোধ হয় এভাবেই বের করে আনা যায় যে, সরকার ও সরকারি দল দেশে বোধ হয় একটি আগাম ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি জাতীয় নির্বাচনের কথা ভাবছে। তা না হলে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বানটা এভাবে আসত না।

 

বিএনপিও সে পথেই হাঁটছে তা স্পষ্ট। তারা জাতীয় রাজনীতিতে পর পর বেশ কিছু বড় ভুল করেছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী উদার গণতান্ত্রিক দল। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের একজন কিংবদন্তি নায়ক। দলের ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার হচ্ছে— ‘ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের সোনালি ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের পবিত্র আমানত এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার। প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির এ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় ও সুংরক্ষিত করে রাখাই হচ্ছে আমাদের কালের প্রথম ও প্রধান দাবি।’ যারা দলটির গোড়াপত্তন থেকে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং যেসব পর্যবেক্ষক দলটির কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তারা একমত যে, বিএনপি বর্তমানে সে অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এটা কারও না বোঝার কারণ নেই যে, একাত্তরে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থেকেছে তাদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকারের কথা দলীয় ঘোষণাপত্রে শপথবাক্যের মতো উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। কথায় কথায় বিএনপির ‘নও-মুসলিমরা’ (হালে বিএনপির আলখেল্লা পরা) জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্যের কথা উল্লেখ করে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যকে জায়েজ করতে চান। কিন্তু দুই ঐক্যের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। একাত্তরের ভূমিকা বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতের সঙ্গে অন্যদের যেমন-তেমন, আওয়ামী লীগের কোনো ঐক্য হতে পারে না। তবে তারা ঐক্য করেছে। ১৯৮৬ সালে। এরশাদের পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতও অংশ নিয়েছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতও যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত, জাপাকে পাশাপাশি রেখেছিল আওয়ামী লীগ। শুধু ক্ষমতার কাঙালিপনা থেকে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওই বোঝাপড়াও ভালো চোখে দেখেনি একাত্তরের চেতনার প্রকৃত ধারকরা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে জামায়াতের সমর্থন প্রার্থনা করাও আওয়ামী লীগের সমীচীন হয়নি বলে মনে করেন অনেক আওয়ামী লীগারও। কিন্তু বিএনপির সর্বোচ্চ মৌলিক পার্থক্যটি এ জায়গায় যে, তারা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে কোনো ঐক্যমোর্চা বা জোট করেননি। তারপরও তারা ‘পাপ’ স্খলন করেছেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী  অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং কিছু দণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে। জামায়াত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

 

বিএনপির ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে প্রথম চারদলীয় জোট থেকে শুরু করে বর্তমান ২০-দলীয় জোট গঠন প্রক্রিয়ার দীর্ঘ ১৭-১৮ বছরে বিএনপি তার দলের ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারই শুধু ভঙ্গ করেনি, সাংগঠনিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপির ঘাড়ে চড়ে সারা দেশে তারা সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। বিএনপির অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী ভাগিয়ে নিয়েছে। এখন বগুড়ার মতো বিএনপির ঘাঁটি এলাকায়ও জামায়াত বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও বড় বিপদের দিকও আছে। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক দল— এটা উল্লেখ করেছি আগে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু জামায়াত তো এ মুহূর্তে ক্ষমতার লড়াই বা দৌড়ে নেই। ভালো অবস্থায় তারা ক্ষমতার ছিটেফোঁটা অংশীদারিত্ব চায়। কিন্তু এখন তাদের এজেন্ডা ভিন্ন। নেতাদের বাঁচানো, দল বাঁচানো, দলের সম্পদ ও লোকবল রক্ষা করাই প্রধান এজেন্ডা। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয় তা তারা জানে। এ জন্য পথ হচ্ছে হিংসা-হানাহানি, সহিংসতা-নাশকতার। বিএনপিকে তারাই সে পথে ঠেলে দিয়েছিল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির নামে হঠকারী আন্দোলনের পথে পা দিয়ে এখন চরম মাশুল দিচ্ছে দলটি। সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া, হেজাফতে ইসলামের ‘সরকার দখল’ (বাবুনগরীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা) কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার মতো ভুলগুলোও করেছে দলটি। এসব ভুল করে দলকে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দলের বর্তমান অবস্থান থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, ভুল শোধরাতে চাচ্ছে বিএনপি। আগাম ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে তারা এখন গণতান্ত্রিক পথেই হাঁটতে চাচ্ছে বলে মনে হয়। পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত তাদের নির্বাচনমুখী অবস্থানকেই জোরদার করেছে। এটা অবশ্যই বলতে হবে যে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনটি ভালো নির্বাচন হয়নি। ইতিপূর্বেকার কয়েকটি নির্বাচন সম্পর্কে যেসব বিরূপ সমালোচনা ছিল, এ নির্বাচনও তা থেকে যে মুক্ত নয়, মিডিয়ায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনই তা প্রমাণ করে। তারপরও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি বিএনপি। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে এটা বলা যায়। সুস্থ ধারার রাজনীতি করেও গণতন্ত্রের সংগ্রামকে জোরদার করা যায়, পৌর নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ তা প্রমাণ করেছে। প্রত্যাশিত ফলাফল তারা পায়নি। কিন্তু এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কার্যত অবরুদ্ধ বিএনপি আলোর মুখ দেখেছে। ২৩৪ পৌর এলাকায় সাংগঠনিক তত্পরতা চালাতে পেরেছে, ঘরে ফিরতে পেরেছে পলাতক নেতা-কর্মীরা, ভোটের হালহকিকত দেখেছে স্থানীয় জনগণ। ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষের মধ্যে আরও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে সরকারি দলের লোকজন কী করেছে দেশে-বিদেশে আবারও তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বেগবান করে যোগ্য নেতৃত্ব ও উপযুক্ত সংগঠন থাকলে।

আমাদের দেশে বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকটটি ঘনীভূত হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে। গণতন্ত্র ‘বাক্সবন্দি’ রেখে উন্নয়নের যে কথা বলা হচ্ছে, অভিজ্ঞজনরা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন ও প্রকৃত জনকল্যাণ গণতন্ত্র বিবর্জিত সমাজে কখনো হতে পারে না। যে কথিত উন্নয়নে জনমতের প্রতিফলন নেই, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়, সে উন্নয়ন সমাজের উপরতলার কিছু মানুষের কল্যাণে আসে, ব্যাপক জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক কোনো মঙ্গল করে না। বড় বড় কাজে বেশি বেশি কমিশন খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিছু লোক মোটাতাজা হয়। এ জন্য উন্নয়নের ঢাকঢোল পিটিয়ে ক্ষমতায় থাকার সহজ পথ খুঁজে শাসকরা। কেউ কেউ যে কোনো প্রকারে ক্ষমতায় থাকার কুবুদ্ধি দিতে পারে সরকারকে। কিন্তু সেভাবে কতদিন থাকা যাবে ক্ষমতায়? তারপর? পুলিশি রাষ্ট্রের কত উদাহরণই তো আছে আমাদের সামনে, আশা করতে চাই, দুপক্ষ গভীরভাবে আরও চিন্তাভাবনা করবেন। বিশেষ করে সরকার পক্ষ। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে কথা বলছেন, তা যদি কথার কথা হয় এবং গায়ের জোরেই যদি ‘আরও কয়েক টার্ম’ ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের রায় অগ্রাহ্য করে এগোতে চান, জনগণ তা দিনের পর দিন মেনে নেবে এটা ভাবা কি ঠিক হবে? এ ব্যাপারে বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক পন্থায় সাহসের সঙ্গে ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারি দণ্ড নয়, এবার জনগণের দণ্ডও তাদের পেতে হবে।

ইতিমধ্যে সমাজের চতুর্দিকে দারুণ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অসম বেতন স্কেলে তাদের মর্যাদাহানির বিরুদ্ধে অবিরাম ধর্মঘটে আছেন। সচেতন সব মানুষ বলছেন, তাদের দাবি ন্যায্য। তারা বেতন বৃদ্ধির জন্য লড়ছেন না, লড়ছেন আমলাদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে তাদের অবস্থান অবনমনের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নয়, সব ভদ্রজনকেই বিস্মিত করেছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব এখন লীগপন্থিদের হাতে। শোনা যাচ্ছে, তাদের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি লোক দেখানো বৈঠক এবং ‘আশ্বাসের’ কথা বলে শিক্ষক আন্দোলনের রশি টেনে ধরার চেষ্টা চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। সরকারপন্থিরা একটি ‘আশ্বাস’ উপহার এনে শিক্ষকদের ক্ষোভ প্রশমনের গোপন তত্পরতা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন বলে শোনা গেলেও হাওয়া তাতে আরও আন্দোলনের পক্ষেই বেগবান হচ্ছে। সরকারি কলেজ শিক্ষকরাও আন্দোলনে আছে পদ অবনমনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অসন্তুষ্ট কর্মকর্তাদের গভর্নর আতিউর রহমান আপাতত ম্যানেজ করতে পারলেও সবাই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ধিকি ধিকি তুষের আগুনের মতো। কৃষিতে নানা বিস্ময়কর অবদান রাখা কৃষি বিজ্ঞানীসহ সব শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষকরাও মাঠে নেমেছেন। তাদের অবস্থানও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অষ্টম বেতন স্কেলে। প্রথম শ্রেণির কর্মচারীরা নেমে গেছেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে। প্রশাসনিক ক্যাডার ছাড়া বিসিএসের অন্য ক্যাডারদের প্রতিও অবিচার করা হয়েছে। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটেছে বিচার বিভাগের সঙ্গে। মাননীয় বিচারকরা তো বাদ-প্রতিবাদ করতে পারেন না, সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারেন না। তাদের সবার নীরব মনোবেদনার প্রকাশ ঘটেছে সম্প্রতি মহামান্য প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার একটি বক্তব্যে।  তিনি প্রকাশ্যেই বিবেকের কণ্ঠস্বর হয়ে উচ্চারণ করেছেন ‘বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে প্রশাসন বিভাগ।  সামগ্রিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্করই মনে হচ্ছে। এসবই গণতন্ত্রহীন, আইনের শাসনহীন রাষ্ট্র-সমাজেরই ভয়াবহ চিত্র। শুধু উন্নয়নের ‘মধুবাণী’ আর রাষ্ট্রশক্তির যথেষ্ট প্রয়োগ কি এসব সংকটের সমাধান দিতে পারবে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর