২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৫:১৮

বিএনপি : সত্যের জয় হবেই

আবু হেনা

বিএনপি : সত্যের জয় হবেই

বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত তেমনি এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলের কতজন মারা গেছেন, কতজন গুম হয়েছেন, কতজন জেলে আছেন এর হিসাব করেই খালাস। তাদের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে চার লাখ তিন হাজার ৮৭৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৫ জন। সরকারের দুই মেয়াদে ৪৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২৬৭ জনকে গুম করা হয়েছে আর ৩৩৭ জনকে পঙ্গু করা হয়েছে। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আদালতের জারি করা সমনটি ২১ জানুয়ারি তার বাসভবনের ফটকে সাটিয়ে দিয়ে আদালত যে বার্তা দিয়েছে তা হলো এই যে আদালতের নির্দেশনা বিএনপির অন্য নেতা-কর্মীদের মতো চেয়ারপারসনের বেলায়ও একইভাবে প্রযোজ্য হবে। ৩ মার্চের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির হতে হবে। তার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ। হয়তো আগামী মাসেই এ মামলাগুলোর রায় হয়ে যাবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নাইকো এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাসহ তার বিরুদ্ধে আরও ১৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একই সঙ্গে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড বিষয়ক মামলাসহ আরও ১৭টি মামলা সচল রয়েছে। এতে আদালত তাকে সর্বোচ্চ সাজাও দিতে পারে। তার নাম ওয়ারেন্ট লিস্টে জুড়ে দিয়ে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। লন্ডনে তিনি প্রায় অবরুদ্ধ কিন্তু তিনি সেখানে প্রায়শই প্রবাসে সিলেটবাসীকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন, বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ পাকবন্ধু বলছেন। অথচ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে ‘সুপ্রিম লিডার’ বলে অভিহিত করে তার নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাকে তিনি ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন এবং তার আমন্ত্রণে বাকশালেও যোগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুই তাকে বীরউত্তম উপাধি দেন। গত ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে বেগম জিয়া মন্তব্য করেছেন— ‘আজকে বলা হয় এত লাখ লোক শহীদ হয়েছে... এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে... নানা বই... কিতাবে নানা তথ্য আছে।’ অথচ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে একটি লেখায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্পষ্টভাবে ৩০ লাখ শহীদ এবং আড়াই লাখ সম্ভ্রম লুণ্ঠিত মা-বোনের কথা উল্লেখ করে গেছেন। এসব কথা শুনে মনে হয় বিএনপি আজ একটি দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক দল, যার ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো যোগ্য এবং বৈধ সাংগঠনিক নেতৃত্ব নেই। বিএনপি এখন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়ে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বসবাসরত তারেক রহমানের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চলছে নীতিহীন, আদর্শহীন জনবিচ্ছিন্ন গুলশান অফিস- কেন্দ্রিক রাজনীতি।

‘মূল ইস্যুতে নেই বিএনপি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৩০ জানুয়ারি সংখ্যায় মাহমুদ আজহার দলটির অসারতার চিত্র তুলে ধরেছেন : ‘নেতারা ব্যস্ত এখন ইতিহাস চর্চা করে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে নেই জোরালো অবস্থান। নেতাদের মুখে মুখে এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নিয়েও কেন্দ্রে সে অর্থে কোনো প্রস্তুতি নেই। তৃণমূলে হামলা-মামলাসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নেই কেউ। অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনের সময় গুম-খুন হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের খোঁজও নেওয়া হয় না কেন্দ্রীয়ভাবে।’

আজ যেখানে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী দুঃসহ, দুর্বিষহ, মানবেতর জীবনযাপন করছেন, সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন, যখন দলে দীর্ঘ চার বছর ধরে কোনো বৈধ সংগঠন নেই, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে দলীয় প্রার্থীরা ব্যর্থ হচ্ছে, যখন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা এবং পৌর নির্বাচনের মতো বাণিজ্য হতে চলেছে, যখন তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি না করেই চেয়ারপারসনসহ দলের নির্বাহী কর্মকর্তারা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত হতে চলেছেন তখন লন্ডনে বসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মীদের বাঁচানো যাবে না, ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা। গত বছর ২৬ এপ্রিল জনসম্মুখে সংবাদ সম্মেলনে নিজের দুই পুত্রের জন্য চোখের পানি ফেলেছিলেন খালেদা জিয়া। বলেছিলেন তারা নির্যাতনের শিকার। অথচ এই নির্যাতন তারাই করেছে যাদের বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান আনুকূল্য প্রদর্শন করে বিভিন্ন সময়ে পদায়ন করেছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে। আজ তার খেসারত দিচ্ছে বিএনপি দলীয় কোটি কোটি নেতা-কর্মী আর সমর্থক। বিগত অবরোধ চলাকালে এরা ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজকর্ম ফেলে উপরের নির্দেশে আন্দোলন-সংগ্রামে নেমেছে, জেল-জুলুম ভোগ করেছে। আজ তারা কেউ ঋণখেলাপি, কেউ আত্মগোপনে, কেউ জেলে, কেউ সর্বহারা। অথচ বেগম জিয়ার গত বছরের আয় উপার্জন ৯০ লাখ টাকা। যা শেখ হাসিনার বার্ষিক ঘোষিত আয়ের দ্বিগুণ। শোনা যায়, তার ব্যক্তিগত সহকারীদের কেউ কেউ সরকারি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তারেক রহমানও লন্ডনে দুই দুইটি ফ্ল্যাট নিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিএনপির কমিটি গঠিত হচ্ছে। তার অনুমোদন দিচ্ছেন তিনি। প্রবাসীদের অনেকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। এ আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। আজ বাংলাদেশে হতসর্বস্ব নেতা-কর্মীর জন্য কাঁদার কেউ নেই। ওদের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করার কেউ নেই।

২৮ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশিষ্ট সাংবাদিক গাজিউল হাসান খানের, ‘বিএনপির আসন্ন কাউন্সিল ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক লেখাটি তাত্পর্যময়। সহজ সরলভাবে  বলা তার সাদামাঠা কথাগুলো বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলবে নিঃসন্দেহে। গাজিউল হাসান লিখেছেন : ‘এমন এক সময় আসতে পারে যখন বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাঠে নাও পাওয়া যেতে পারে। তাতে কি বিএনপির সব আন্দোলন থেমে যাবে? তেমন একটি অবস্থার জন্য কি বিএনপি প্রস্তুত? কে দেবে সে উত্তর? এখনো বিএনপিতে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলার কোনো প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়। বর্তমানে আন্দোলনে ভরাডুবি ও নেতৃত্বের কোন্দলের সীমাহীন অভিযোগের মুখে ঘোষিত হয়েছে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল।’সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন, দুর্বোধ্য অবরোধ আর খেয়ালখুশি হরতাল, হেফাজতের কর্মসূচি থেকে হঠাত্ করে সরে আসা— এসবের ফলশ্রুতিতে বিএনপির আজ যে বেহাল অবস্থা তাতে গাজিউল হাসানের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে, বাংলাদেশে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে তারেক রহমান হয়তো আর কোনোদিনই দেশে ফিরবেন না। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে তাতে তার জেল-ফাঁসি দুই-ই হতে পারে। অতএব লন্ডনে বসেই তিনি বাংলাদেশ, ইউরোপ, আমেরিকায় কমিটি অনুমোদন এবং বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন দিতে পারবেন। দেশে ফিরে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সারিতে নেমে এসে আন্দোলন-সংগ্রাম করার প্রয়োজন কি? একই কথা বেগম জিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর অন্তর কাউন্সিল না করে যদি বছরের পর বছর দলের চেয়ারপারসন থাকা যায়, দলের সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া যায়, তাহলে আন্দোলন-সংগ্রাম করে মাঠে নেমে লাভ কি? তবে এটা সত্য যে, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান না থাকলেও বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন-সংগ্রাম থেমে যাবে না। প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতের পর যেভাবে বিচারপতি সাত্তার তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তেমনি এবারও শূন্যস্থান পূরণ করবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত যোগ্য নেতৃত্ব। যোগ্য নেতৃত্বই দলের সব দুর্বলতা দূর করবে, সব বাধা অতিক্রম করে দলকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার জন্য কি করতে হবে তারও ইঙ্গিত আছে গাজিউল হাসানের লেখায় : ‘জনমনে আবার দলটির প্রতি আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপির চাই একটি সম্পূর্ণ নতুন ইমেজ। নতুবা যে ধারায় ক্ষমতা হারানো বিএনপি এতদিন চলছিল, তাতে কোনো বিস্ময়কর সাফল্য আসবে বলে কেউ মনে করে না। বরং সে অপরিণামদর্শী উল্লিখিত ধারাটি অব্যাহত থাকলে বিএনপি ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে অনেকের বিশ্বাস।’ তারপরের কথাগুলো বিশেষভাবে প্রবিধানযোগ্য। ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি কীভাবে টিকে থাকতে চায়, তা আজ তাদের দলের অনেকেই পরিষ্কার করে জানতে আগ্রহী। অনেকে শহীদ জিয়ার বিএনপি চায়, যেখানে ঘটবে দেশের সত্, শিক্ষিত, কর্মঠ ও মেধাবী মানুষের সমাবেশ। দলে থাকবে নেতা-নেত্রীর সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং দলে থাকবে অভ্যন্তরীণ গঠনতন্ত্রের চর্চা।’এই লেখাটির সারবত্তা হলো : ‘রাজনীতিগতভাবে বিএনপির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামনের পথ অতিবন্ধুর। সে অবস্থায় বিএনপির আদর্শভিত্তিক বাস্তব কর্মসূচি কি হবে তা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা নেই। দেশব্যাপী কর্মসূচি নেই, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জনগণের সামনে যুগোপযোগী কোনো রূপকল্প তুলে ধরা হচ্ছে না।’

কাউন্সিল বিষয়ে তার বক্তব্যটি সুস্পষ্ট : ‘এ কাউন্সিল বহুদিক থেকে বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কাউন্সিল শেষে বিএনপির সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা দেখতে চায় এক প্রতিশ্রুতিশীল বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগদর্শন, যা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যুগোপযোগীভাবে আরও অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আশা করি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ কথাগুলো বিবেচনায় রেখে জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিবে।’

দলের বর্তমান নাজুক অবস্থা অব্যাহত থাকলে তা বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের জন্যই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনবে। আজ দলে কোনো সংগঠন নেই, নেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা, নেই কোনো দায়িত্বশীল নেতা যিনি প্রয়োজনে দলের দায়িত্ব নিয়ে সব সংকট মোকাবিলা করবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর রায় অচিরেই হয়ে যাবে। তখন সারা দেশে তাদের মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলা বর্তমানে ভেঙে পড়া দুর্বল সংগঠনের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই দুর্যোগ মুহূর্তে তৃণমূল থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে একমাত্র একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। চাই একজন সঠিক নেতা যার কোনো হাওয়া ভবন থাকবে না, গুলশান অফিস থাকবে না। তিনি নয়াপল্টন অফিসে প্রতিদিন বসবেন, মিটিং মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন। দলের সব নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী তার সঙ্গে যে কোনো সময় দেখা করে তাদের সমস্যার কথা জানতে পারবে। আগামীতে যদি সত্যিই কোনো কাউন্সিল হয় তাহলে তার প্রথম এজেন্ডা হবে দলের সব নেতা-কর্মীকে মুক্ত করা, তাদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় এজেন্ডা হবে দলকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে যারা বাণিজ্য করছে তাদের শাস্তি দেওয়া। এখন থেকে সততা আর যোগ্যতাই হবে নেতৃত্বের একমাত্র চাবিকাঠি। এবারের কাউন্সিলে আমরা একটি শপথ নিব; আমরা সবাই সবার জন্য। আমরা কেউ কারও চেয়ে বড় নই। আমরা সবাই শহীদ জিয়ার সৈনিক-সবাই সমান।

নীতিহীন, আদর্শহীন, ব্যক্তিপূজা আর নয়। এখন থেকে দলের সর্বস্তরে শুধু ১৯ দফার চর্চা হবে। সর্বাগ্রে থাকবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। লক্ষ্য হবে মর্যাদাশীল, আত্মনির্ভর জাতি গড়ে তোলা। অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনে সর্বত্র প্রতিফলিত হবে। প্রশাসনের সর্বস্তরে উন্নয়ন কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। দেশে কোনো গৃহহীন, কর্মহীন, নিরন্ন, বস্ত্রহীন থাকবে না। সবাই চিকিত্সা সুবিধা পাবে। নারী পাবে তার সঠিক মর্যাদা। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। শ্রমিকের অবস্থার উন্নতি হবে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প অগ্রাধিকার পাবে। যুব সম্প্রদায় জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হবে। পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক  জীবনের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের ও সমাজের মৌলিক উদ্দেশ্য হবে। যুব সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব ও ভূমিকার পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের যুবসমাজ এদেশের মঙ্গল চায়। তারাই সমাজকে, জাতিকে সুসংগঠিত ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করবে। তার জন্য প্রয়োজন হবে গণমুখী যুব আন্দোলন, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাস্তবসম্মত জনপ্রিয় ও জনগ্রাহ্য কার্যক্রম। সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জনসেবা ও জাতিগঠনের মনোবৃত্তি উত্সাহিত হবে। সব বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সমতা ও বন্ধুত্বের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। প্রশাসন ও উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করে জনপ্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়নীতিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করা হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করা হবে। এর জন্য চাই নিবেদিতপ্রাণ সত্, আন্তরিক ও গঠনমূলক নেতৃত্ব এবং সংগঠন যা জাতীয় শক্তিকে ইতিবাচক বিপ্লবের দিকনির্দেশনা দিবে। এ আরাধ্য নেতৃত্ব ও সংগঠন গড়ে তোলাই হবে এবারের কাউন্সিলের মূলমন্ত্র। বিএনপির কাউন্সিলকে সামনের রেখে আশায় বুক বাধতে চাই। আর নয় লবিং, তদবির, পদলেহন আর পদসেবা; এবার ষড়যন্ত্র আর কূটকৌশলের কুটগুলো ধসে যাবে। সামনে আসবে শিক্ষিত, দক্ষ, প্রতিভাধর, মেধাবী, আদর্শবান, সমাজপতিরা। হবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত সমাজ পরিধির ব্যাপ্তি। আমরা নিজেদের মধ্যে যা কিছু গঠনমূলক, যা কিছু মহত্, যা কিছু সুন্দর তাকেই তুলে ধরব— ক্ষুদ্র ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে মেধা ও দক্ষতাকে, যোগ্যতা ও পারগতাকে আর ধুলায় লুণ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। জনজীবনে উন্নয়নে ও সমৃদ্ধির জন্য নেতৃত্বের আসনে আসবে সত্, স্থির চিত্ত, শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও কর্মনিষ্ঠ মানুষ, যারা বিশেষ গোষ্ঠী ও চক্রের ভূমিদাস নন। মনে রাখতে হবে শত সহস্র বিকৃতির মাঝে সত্য ও সুন্দরের জয় হবেই। মূক এবং অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এটাই সময়। এবারই খলনায়কদের সম্মোহন থেকে জাতি মুক্তি পাবে।     

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর