১ মার্চ, ২০১৬ ১২:১৪

সাহস আর ধৈর্যের চেয়ে কোনো বড় শক্তি নেই

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

সাহস আর ধৈর্যের চেয়ে কোনো বড় শক্তি নেই

এশিয়া কাপ টি-২০ হচ্ছে আমাদের দেশে। সেদিন ছিল ভারত-পাকিস্তানের খেলা। যেখানে পাকিস্তান খুবই খারাপ করেছে। ৮৩ রানে খেলা শেষ। এটা আশা করা যায় না। কিন্তু বাস্তবে তাই হয়েছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে টিভিতে খেলা দেখছিলাম। দর্শকের মধ্যে কয়েকজনকে পাকিস্তানের সমর্থক দেখে ভালো লাগেনি। মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে হলে কোনো পাকিস্তানির দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে না। মন বিষিয়ে যায়। তবু এশিয়ার বাইরে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে খেলা হলে হয়তো পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া যায়। কিন্তু এশিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করা আত্মহত্যার নামান্তর। কিন্তু তা-ও অনেককে করতে দেখি। হ্যাঁ, গত বিশ্বকাপে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে যে অন্যায় করেছে তার ক্ষমা হয় না। অমন জালিয়াতি তারা না করলেও পারত। কিন্তু তার পরও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন আত্মঘাতী ব্যাপার।

এ পর্যন্ত তিন খেলায় বাংলাদেশ একটিতে হেরে দুটিতে জয়ী হয়েছে। আরব আমিরাতকে হেলাফেলা করলেও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বেশ শক্তপোক্ত মনে হয়েছে। বাংলাদেশ আরব আমিরাতের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই খেলেছে। আমরা হারি-জিতি ধৈর্য নিয়ে খেলা দরকার। কিন্তু আমাদের ধৈর্যের বড় বেশি অভাব। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেদিনের খেলায়ও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। টি-২০-তে দুজন খেলোয়াড় সোজা হয়ে দাঁড়ালে কী হয় তা রবিবারে দেখা গেছে। ২ রান, ২ উইকেট, ২ ওভার ২ বল— শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। অথচ ৩ উইকেটে সাকিব আল হাসান আর সাব্বির  ১১২-১৩-তে নিয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মতো সিংহের সঙ্গে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জয় গর্ব না করে উপায় কী? ওর আগেও ভারতের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের হাতে ওই ক্যাচ ছুটে না গেলে সেদিনের ফল কী হতো বলা যায় না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের ক্রিকেট দলকে বলব সাহস আর ধৈর্যের চেয়ে বড় কোনো শক্তি বা সম্পদ দুনিয়ায় নেই। তাই কোনো কিছুতে লোভাতুর না হয়ে হার-জিতকে একইভাবে নিয়ে খেলায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ বিজয়ের সুবাদে ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভ কামনা জানাচ্ছি।

লিখেছিলাম ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করলে কী হতো আর না করায় কী হয়েছে। যে যাই বলুন, স্বাধীনতা যেভাবে আসার সেভাবেই এসেছে। যারা হাঁস-মুরগির ডিমের মতো সহজে স্বাধীনতা চেয়েছিল তাদের হয়তো মনঃপূত হয়নি। জনগণ থেকে প্রায়-বিচ্ছিন্ন একটা সরকারের সঙ্গে যুঝতে আজ যেখানে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেখানে আমাদের নেতৃবৃন্দ দারুণ কৌশলী হয়ে কাজকর্ম না করলে বিজয় আসত না। শুধু ছপ্পন ধরে থেকে ত্রুটি ধরা সহজ। কিন্তু কাজের কাজ করা অত সহজ না। যারা পাকিস্তানের সেবক ছিলেন সামরিক-বেসামরিক যেই হোন, পাকিস্তানের পতনের আগে তারা তেমন কেউ আমাদের সঙ্গে আসেননি, লাখের মধ্যে মাত্র কয়েকশ এসেছেন। এখন যেমন বর্তমান সরকারকে গদিতে রাখতে রক্ত ঘাম করছেন, গণেশ উল্টে গেলে তারা কেউ ঘাম ঝরাবেন? মোটেই না। বাতাসের দিকে পাল তুলবেন। এটা কোনো দোষের নয়। এটা সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সারা জীবনের নিয়ম বা কৌশল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব বুঝলেও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কোনো দিন বোঝেননি, এখনো বোঝেন না। তাই যারা হাঁস-মুরগির আণ্ডার মতো সকাল-বিকাল বিনা পরিশ্রমে স্বাধীনতা চেয়েছিলেন তাদের দোষ দেওয়ার কী আছে? আজও অনেকে ছপ্পন ধরে আছে আওয়ামী লীগ ভীষণ অপ্রিয়, তাদের সরকারে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই, সুযোগ পেলেই বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে। কিন্তু আশি মণ ঘিও জুটবে না, রাধাও নাচবে না। পরের ধনে পোদ্দারি সহজ হলেও কষ্ট করে আয় করে পোদ্দারি করা খুব কঠিন।

২৫ মার্চ হানাদার পাকিস্তানিরা সর্বত্র এক বিভীষিকা সৃষ্টি করার পরও সরকারি-বেসরকারি, সামরিক-বেসামরিক লাখ লাখ বাঙালি পাকিস্তানের পদলেহন করেছে। মুরগির ডিম পেতেও অপেক্ষা করতে হয়, মুরগিকে পাল-পোষ করে বড় করতে হয়, তবেই ডিম পাড়ে। এমন কষ্টও যারা করতে চায়নি তাদের নিয়ে কী বলব?  তখন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯ জেলা ছিল। ১৯টা জেলার কয়টা ডিসি, কয়টা এসপি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল? পাবনার ডিসি নূরুল কাদের, আর কে? আমার তো তেমন মনে পড়ে না। প্রায় সব সরকারি কর্মচারীই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বন্দনা করেছে, কায়মনে পাকিস্তান রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন যারা রাজনীতিতে এসেছেন তাদের কত সমালোচনা বা গালাগাল করা হচ্ছে। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর বহু বাঙালি পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে থেকে লুটতরাজ, হত্যা, ধর্ষণ, করেছে। কেউ কেউ তো তাদের নাম করে না। ফিরোজ সালাউদ্দিন নামে এক কর্নেলকে দেখেছি। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গভবনে গভর্নর মালেকের মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকায় এলে তিনিই মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। মানে ১৫-সাড়ে ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রাদেশিক গভর্নরের মিলিটারি সেক্রেটারি। তারপর রাতারাতি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সচিব। দেশ বা সরকার বদলাতে পারে, কিন্তু তাদের বদল নেই। তারা চিরস্থায়ী। ১০ জানুয়ারি দেশে এসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হলে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী হন রাষ্ট্রপতি। পাকিস্তান হানাদারের এই অনুগত ব্যক্তি ফিরোজ সালাউদ্দিন সেদিনও ছিলেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব। পাকিস্তানের অনুগত দালাল যারা তারা এক দিনে বাংলাদেশ সরকারের নতুন কর্মচারী হয়ে গিয়েছিলেন। এটাই জাতির দুর্ভাগ্য। প্রবল পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তে ডুবিয়ে মারতে পেরেছিলাম বলেই এত বড় বড় অসংগতির পরও আমরা এখনো বেঁচে আছি, টিকে আছি।

কত অভিযোগ আমাদের ওপর, আমাদের নেতাদের ওপর। জনাব এ কে খন্দকার যুদ্ধের সময় ভারতে ছিলেন। এক দিনের জন্য কোনো যুদ্ধে অংশ নেননি। বিমানবাহিনীর লোক তার তো যুদ্ধ করতে বিমান দরকার, তা পাবেন কোথায়? পাকিস্তানি একটি যুদ্ধবিমান উড়িয়ে নেওয়ার মুরোদ হয়নি। তাই আজ যত বড় কথাই বলুন, বসে বসে খাওয়া ছাড়া তার তেমন কাজ ছিল না। তিনি নিজেই বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর হানাদারদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তাকে কলকাতা নিউমার্কেট থেকে ধরে আনা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক কাজের খেতাব কমিটির তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। নীতিমালা ছিল প্রত্যক্ষ সম্মুখযুদ্ধে যারা সাহসী ভূমিকা পালন করবেন তাদের উত্সাহিত করতে তত্ক্ষণাত্ বীরত্বসূচক পদক দেওয়া হবে। প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদকে বীরত্বসূচক খেতাব দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যদি কাউকে খেতাব দেওয়া হয় তাহলে সবার আগে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং অন্য নেতৃবৃন্দকে দিতে হয়। সেই সময়ের সব কজন এমএনএ, এমপিকে দিতে হয়। ছাত্রনেতা, যুবনেতা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে দিতে হয়। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীকেও দেওয়া হয়নি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য। অথচ জনাব এ কে খন্দকার কোনো সম্মুখযুদ্ধে অংশ না নিয়ে নিজের খেতাব নিজেই নিয়ে নিয়েছিলেন। এরাই কেউ কেউ ভারতে নিরাপদে থেকে বলার চেষ্টা করছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভারতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বা বোঝাপড়া না করে তাদের অথই সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সত্যিই যদি যোগাযোগ না হতো, শরণার্থীদের কথা বলছি না, সামরিক-বেসামরিক কর্মচারীদের কথা বলছি, পাকিস্তানি কর্মচারী হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে এক পা দিতেই তাদের কারাগারে ঢোকানো হতো। খালি হাত-পায়ে গেলেও ছাড় দেওয়া হতো না। আর যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের ফাঁসি না হলেও যাবজ্জীবন কোর্ট মার্শাল হতো। কষ্ট হলেও জামাই আদরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। তাই নব্য পণ্ডিতদের ধারণামত ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা না করে আকারে-ইঙ্গিতে ‘আক্কেল মানকে লিয়ে ইশারা হি কাফি’ তেমন ঘোষণা করে আমাদের মঞ্জিল মকসুদে পৌঁছতে যে পথ দেখিয়ে ছিলেন, সেটাই ছিল যথার্থ। ভালো শিকারির মতো আমাদের নেতা কাজ করেছিলেন। সাপও মরেছে, লাঠিও ভাঙেনি। আর সরাসরি ঘোষণা দিলে অপরিণামদর্শী হিসেবে নেতাকে তো ফাঁসিতে ঝোলানো হতোই, আমরা শত বছরে স্বাধীনতা পেতাম না। মাঝখান থেকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হতাম। জনতার আদালতে পাকিস্তানিদের বদলে আমাদের আসামি হিসেবে দাঁড়াতে হতো।

কী লিখি ছাই, বড় জ্বালায় আছি। এই সেদিন একটা ভাই তার দুইটা ছোট্ট ছোট্ট বৈমাত্রেয় ভাইকে শ্বাসরোধে মেরে ফেলেছে। গ্যাসের চুলায় বিস্ফোরণ ঘটে চারজনের একটা পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। দুই সন্তানসহ কর্তা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। যে মহিলা বেঁচে আছেন তারও অবস্থা ভালো নয়। পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালিদের হত্যা করে এক গর্তে মাটিচাপা দিত। সেদিন শুনলাম হবিগঞ্জে চারটি শিশুকে হত্যা করে একত্রে মাটিচাপা দিয়েছে। কত কিছু ভাবী পিতাকে নিয়ে লিখব, তার পিতৃত্ব নিয়ে লিখব। কিন্তু যখনই এসব দেখি এলোমেলো হয়ে যাই। যে জাতি শুধু আত্মমর্যাদার জন্য এত রক্ত দিয়েছে, ভোটাধিকারের জন্য জীবন দিয়েছে আজ তারা ভোটাধিকারহীন কাঙাল। এমন এক অথর্ব নির্বাচন কমিশন, যার কোনো সকাল-বিকাল নেই। দেশে প্রথম দলীয়ভাবে ঘোমটা খোলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। শতাধিক আসনে যেনতেন করে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছে। আইয়ুব খানও অত জনপ্রিয় ছিল না, যে রকম জনপ্রিয়তা দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল। যে দেশে পদের জন্য মানুষ জীবন দেয়, সেই দেশে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের ১৫৩টা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বাকিগুলো বিনা ভোটে। আবার ইউপি নির্বাচনে এমন আশা করা যায়? আমি চাই রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারি দলের যথাযথ মর্যাদা থাক। শুধু পুলিশের শক্তিতে নয়, জনগণের শক্তিতে রাষ্ট্র চলুক। কিন্তু সে গুড়ে বালি। জনগণ সরকারের সঙ্গে নেই, সরকারও জনগণের সঙ্গে নেই। এই দড়ি টানাটানিতে অনেকের নাভিশ্বাস উঠেছে। কে কার কথা শোনে, কেউ কারও কথা শোনে না। সবার যে ঘোড়ারোগ হয়েছে।

গত পয়লা সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-৪, কালিহাতী আসন শূন্য হলে ১৫ সেপ্টেম্বর তাতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা করেছিলাম। ওই একই দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছিল, মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর, যাচাই-বাছাই ৩ অক্টোবর, ভোট ২৮ অক্টোবর। যেই আমি অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলাম, পরদিন আবার পুনঃ তফসিল করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১১ অক্টোবর, যাচাই-বাছাই ১৩ অক্টোবর, ভোট গ্রহণ ১০ নভেম্বর। আমি ১১ অক্টোবর বৈধভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিলে ১৩ অক্টোবর যাচাই-বাছাইয়ের সময় অবৈধভাবে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করলে নির্বাচন কমিশনে আপিল করি। সেখানে কোনো প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে যাই। ২১ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্ট মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করলে ২২ অক্টোবর রিটার্নিং অফিসার আমার নামে মার্কা বরাদ্দ করলে আমরা নির্বাচন কার্যক্রম চালিয়ে যাই। এক সপ্তাহ পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। সেই ছেলেবেলা থেকেই কোর্ট-কাছারিতে চলাফেরা। মুনসেফ কোর্টের কোনো রায় জজকোর্টে আপিল হলে কখনো মুনসেফ কোর্টকে বাদী হতে দেখিনি। জজকোর্টের রায় হাইকোর্টে আপিল হলে কোনো দিন জজকোর্ট হাইকোর্টে বাদী হয়নি। নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। তার কাজ নির্বাচন পরিচালনা করা। সেই কমিশন যদি কোনো প্রার্থীর প্রতিপক্ষ হয় তাহলে সে নির্বাচন পরিচালনা করবে কী করে? মাননীয় চেম্বার জজ বিষয়টি ২ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের চারজন মাননীয় বিচারপতির ফুল বেঞ্চ সেদিন সামান্য শুনানির পর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি হাইকোর্টের এক নির্দিষ্ট বেঞ্চে পাঠান। আমাদের বিষয়বস্তু ছিল মনোনয়ন বৈধ, কি বৈধ নয়। আমরা আমাদের কাগজপত্র দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন ব্যাংকের হয়ে অনেক কাগজপত্র দিয়েছিল। তাদের কাগজপত্রেই তাদের জালিয়াতি ধরা পড়েছিল। এক নাগাড়ে আট দিন শুনানি হয়েছে। শুনানিতে জজ সাহেবরা অনেক কথা বলেছেন। আমি নিবিষ্ট মনে তাদের কথা শুনে অভিভূত হয়েছি। সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টে পাঠিয়েছিলেন ব্যাংক সম্পর্কে অমীমাংসিত প্রশ্নের মীমাংসার জন্য। শেষ পর্যায়ে মহামান্য কোর্ট একেবারে ব্যাংকের ব্যাপারে না গিয়ে বলে দিলেন সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে রিট পিটিশনটি সধরহঃধরহধনষব নয়। মহামান্য হাইকোর্ট আমাকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেছেন যা হবে নির্বাচনের পরে। অথচ নির্বাচনে অংশ না নিলে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আর আমরা প্রতিকার চেয়েছি নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের পরে নয়।

যেখানে মার্কা দিয়ে দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের আপিলের কোনো সুযোগ ছিল না। নির্বাচনের পর প্রতিকারের জন্য তাদের ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কথা, সেখানে আমাদের ট্রাইব্যুনালে যেতে বলেছেন। আমরা যথাযথ সময় সুপ্রিমকোর্টে এর প্রতিকারে আপিল করেছি। সুপ্রিমকোর্ট রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া পর্যন্ত দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। গত বুধবার রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া গেলে বৃহস্পতিবার আমরা এফিডেভিট করি। রবিবার সুপ্রিমকোর্ট ইলেকশন কমিশনকে নোটিস করে। অথচ সেই ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন সুপ্রিমকোর্টে আপিল থাকার পরও শুধু ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য ২০ মার্চ নতুন করে নির্বাচনী তারিখ ঘোষণা করেছে। জানি না, এতে করে আদালত অবমাননা হয়েছে কিনা।

     লেখক : রাজনীতিক

সর্বশেষ খবর