১৭ মার্চ, ২০১৬ ১০:৩৩

কবি রফিক আজাদের মহাপ্রয়াণ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

কবি রফিক আজাদের মহাপ্রয়াণ

গত ১৫ মার্চ ছিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্মদিন। আজ ১৭ মার্চ দেশের জনক, আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। তারপর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিন। মার্চ মানেই সংগ্রাম, মার্চ মানেই স্বাধীনতা, মার্চ মানেই সংগ্রামের মাস। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত লিখি। সেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্মও মার্চে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বয়সের সঙ্গে আমার লেখার বয়সেরও একটা লয় তাল হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম ‘বজ্রকথন’ শিরোনামে ছাপত। শুনেছি মঙ্গলবার অনেকেই নাকি লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকে। হঠাৎ ২-১ পর্ব বাদ পড়লে তাগিদের চোটে কিছুটা বুঝতে পারি। লিখতে লিখতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চে টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী উপনির্বাচনের আপিলের রায় হয়েছে। রায়ে উপনির্বাচন আবারও স্থগিত করা হয়েছে। একজন আইনবীদের ছেলে হিসেবে কখনো-সখনো হোঁচট খেলেও বিচার বিভাগের প্রতি আমার গভীর আস্থা আছে। রায় পক্ষে গেলেও যেমন, বিপক্ষে গেলেও বিচারককে সম্মানের চোখে দেখার চেষ্টা করি। তবে কেন যেন হাইকোর্টের রায় আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি, দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে সেই দেশে একটা উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য নাকি যোগ্য নই— এটাই ছিল আমাকে নিয়ে বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু হাইকোর্ট সেদিকে না গিয়ে রায় দিয়েছিলেন আমার রিট পিটিশনটি যথাযথ নিয়মে চলার মতো নয়, গড়াগড়ি দেওয়ার মতো হয়েছে— এ সম্পর্কে আমরা আপিল করেছিলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিন এমনিভাবে পাঠকের মন জয় করে এগোনোর চেষ্টা করলে সফলতা তাদের কদম চুমবে, পাঠক প্রিয়তায় হবে সবার সেরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করছি।

১২ মার্চ আমার প্রিয় কবি রফিক আজাদ পরলোকে চলে গেছেন। ৭৫ বছর বয়সে তার পরলোকগমন আমি স্বাভাবিকভাবেই বিবেচনা করতাম। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা কবি হিসেবে, প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনের কবি হিসেবে তার যতটুকু স্বাধীন দেশে জায়গা পাওয়ার কথা ছিল তা তিনি পাননি। বঞ্চনা আর অবহেলা ছাড়া মনে হয় স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার পাওয়ার মতো আর কিছু নেই। তিনি গত শনিবারে ইহজগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে এক শনিবারে সখিপুরের মহানন্দপুরে কবির সঙ্গে আমার দেখা। টাঙ্গাইলের মানুষ হিসেবে অনেক আগে থেকেই তাকে জানতাম চিনতাম। কবি রফিক আজাদ, সায্যাদ কাদির, মাহবুব সাদিক, বুলবুল খান মাহবুব, কবি আবু কায়সার এরা সবাই আমার পরিচিত এবং রণাঙ্গনের সাথী। মুক্তিযুদ্ধে অনেক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক জড়িত ছিলেন। কিন্তু কবি রফিক আজাদের মতো প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনে কামানের গর্জন শুনে এক হাতে রাইফেল নিয়ে অন্য হাতে কলম কেউ চালাননি। আনোয়ারুল আলম শহীদের তত্ত্বাবধানে তখন কেবলই হাতে লিখে সাইকোস্টাইল করে রণাঙ্গনে পত্রিকা বের করা হচ্ছে। মুক্তাঞ্চলে এক বিরাট প্রভাব পড়েছে রণাঙ্গন পত্রিকার। ছোট বোন রহিমা, শুশু রণাঙ্গনে কাজ করত, কবিতা লিখত। রফিক আজাদও রণাঙ্গনে শামিল হন। অনেক কবি-সাহিত্যিকের অগ্নিঝরা লিখুনী মুক্তিযুদ্ধে অভাবনীয় অবদান রেখেছে। কিন্তু কবি রফিক আজাদ, বুলবুল খান মাহবুব, সায্যাদ কাদির, মাহবুব সাদিক এরা ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। এদের এক হাতে ছিল কলম, অন্য হাতে রাইফেল স্টেনগান, মেশিনগান।

একদিন এক রাজনৈতিক সভা করে দুপুরে কাঞ্চনপুর হয়ে ফিরছিলাম। সঙ্গে ৩-৪টা গাড়ি। কোথাও গেলে এখনো রাস্তার দুই পাশে কখনো বেশি কখনো কম লোকজন দাঁড়ায়। সেদিন এক বাড়ির দেউড়ি বেড়ায় কয়েকজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা ছোট্ট উদাম বেশ নাদুসনুদুস বাচ্চা তার মাকে ঠেলা দিচ্ছিল, ‘ওই মা, মা, ভাত দিলি না? পেটে যে আগুন ধরছে। পুইড়া গেল। মা ভাত দে।’ বাচ্চার আপন মনে মায়ের কাপড় টেনে বারবার বলা কথা আমার কানে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ছিল ’৭৩ এ কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতার কথা। তখন সারা দেশে এক অস্থিতিশীল অবস্থা। পাকিস্তানি হানাদাররা আমাদের কাছে নিদারুণভাবে হেরেছিল। কিন্তু তখনো বাংলাদেশে শিল্প, সাহিত্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিতে পাকিস্তানের ভিত খুব একটা দুর্বল ছিল না। প্রকাশ্য না হলেও তখনো পাকিস্তানি দালালরা বহাল তবিয়তে ছিল। আর জাসদ গঠিত হওয়ায় মুসলিম লীগ, জামায়াতসহ অন্য অনেক স্বাধীনতাবিরোধী সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ব্যর্থ করার জন্য সারা দেশে চলছিল ষড়যন্ত্র। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে অভাব তো ছিলই, পাটের গুদামে আগুন, কলকারখানা ধ্বংস, আওয়ামী লীগ নেতাদের গুপ্তহত্যা এর মধ্যে কবি রফিক আজাদ একদিন লিখে বসলেন ‘ভাত দে হারামজাদা’। তখন বাংলাদেশ বেতার আর বিটিভি ছাড়া তেমন প্রচার মাধ্যম ছিল না। পত্রিকা ছিল বেশ কয়েকটি। পত্রিকাতে ফলাও করে ছাপা হয়, বিবিসি প্রচার করে— এসব দেখে-শুনে আমিও কিছুটা কষ্ট পাচ্ছিলাম। স্বাধীনতার পর কবি রফিক আজাদ আমার প্রাণ ছুঁয়ে ছিলেন। রফিক আজাদ মুক্তিযুদ্ধের কবি, স্বাধীনতার কবি, খেটে খাওয়া মানুষের ভালোবাসার কবি। তিনি রণাঙ্গনে যেমন কলম ধরেছেন, তেমনি রাইফেলও ধরেছেন। আমি তাকে অস্ত্র ধরা শিখিয়েছি। তাই বুকের মধ্যে তার জায়গা ছিল অনেক।

‘ভাত দে হারামজাদা’ লেখার জন্য কবি রফিক আজাদের জেল হয়েছে, হুলিয়া জারি হয়েছে। এক সকালে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসে দুপা জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে বলেন, ‘স্যার আমারে বাঁচান। আমার যে জেল হয়ে গেছে। জেলখানা আমার ভালো লাগবে না। আমি কবি মানুষ জেলখানায় বসে বসে কী করব?’ রফিক আজাদ কখনো আস্তে কথা বলতে পারত না। তার কথা দূর থেকে শোনা যেত। মা রফিক আজাদকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। বাবর রোডের ছোট্ট বাড়ি, কবি রফিক আজাদের কণ্ঠস্বর তার কানে যেতে সময় লাগেনি। বৈঠকখানায় এসে রফিক আজাদকে আমার পা ধরে থাকতে দেখে নিজ হাতে কবিকে টেনে তুলে শোফায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে? তোমার মুক্তিযুদ্ধের গুরু, তার কাছে কোনো কিছু বলতে হলে পা ধরতে হবে কেন? তুমি তার যোদ্ধা। তোমায় ছায়া দেওয়া তার দায়িত্ব। কোনো চিন্তা করো না। যে জন্য এসেছ শান্তভাবে বল। বজে র যা করার অবশ্যই করবে। কিন্তু তুমি বাবা বঙ্গবন্ধুকে এভাবে হারামজাদা বলতে গেলে কেন? এটা কিন্তু বাবা ভালো করোনি।’ মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাস্তা খেয়েছো?’ না সূচক উত্তর পেয়ে বললেন, হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে নাও। যতক্ষণ এখানে আছো চিন্তার কিছু নেই। ঝাড়া দিয়ে কবি উঠলেন অনেকটা বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের মতো বাবরি দুলিয়ে। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেলেন। মনে হলো বেশ কিছুদিন শান্তি মতো খাবার খাননি। তখন এখনকার স্ত্রী কবি দিলারা ছিল না, তখন রফিক আজাদের স্ত্রী আমার সহপাঠী রহিম মৌলভীর মেয়ে বকুল। কবির নাস্তা খাওয়া শেষ হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সত্যিই আপনি বঙ্গবন্ধুকে এত বড় গালি দিলেন? আমাকেও কি দিতে পারবেন?’ মনে হয় কবি যেন জ্বলে উঠলেন। জ্বলবারই কথা, পেটে দানা পানি পড়লে, নিজেকে নিরাপদবোধ করলে তখন আর কবিদের হীনমন্যতা থাকে না। স্বরূপে তারা বেরিয়ে আসে। কবি বললেন, কোথায় বঙ্গবন্ধুকে গালি দিলাম? আমি শুধু আমার ক্ষুধার জ্বালার কথা বলেছি, মানুষের কথা বলেছি। গ্রামগঞ্জের বাচ্চারা মায়ের কাছে কীভাবে খাবার চায়। খুব ক্ষুধা লাগলে বলে না, মাগো ভাত দে, ভাত দিলি না, ভাত না দিলে তোরে খামু কিন্তু, বলে না?’ আঁতকে উঠে সম্বিত ফিরে পেলাম। সত্যিই তো কত জায়গায় কত বাচ্চার অমন কথা শুনেছি। আইয়ুব-মোনায়েমের আমলে বাবা-বড় ভাই যখন জেলে আমাদের পরিবার ভেঙে গুঁড়িয়ে তছনছ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় আমি আমার ছোট ভাই বোনেরা কতবার মার কাছে অমন করে কান্নাকাটি করেছি, চিৎকার করেছি।

কবি ৩-৪ বার ‘ভাত দে হারামজাদা’ পড়ে শুনালেন। কবিরা সাধারণত ভালো কবিতা আবৃতি করতে পারেন না। বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ শুনেছি। কিন্তু তার ছেলে সব্যসাচীর কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী আর কবির কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ এক ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’ কবি কণ্ঠের রেকর্ড যেমন শুনেছি, তেমনি বিখ্যাত আবৃতিকার প্রদীপ ঘোষের কণ্ঠে ‘দেবতার গ্রাস’ সে এক অসাধারণ হৃদয়ে ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। তারপরও কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ শুনে আমি উত্তর পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল কবি তো মোটেই সরকারকে গালি দেয়নি, বঙ্গবন্ধুকে তো নয়ই। বরং বঙ্গবন্ধুকে কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে যাওয়া থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। উত্তেজনায় ঘেমে যাচ্ছিলাম। আমি সাধারণত অমন উত্তেজনাবোধ করি না। হানাদারদের মুখোমুখি হয়েও করিনি। সময় কাটতে চাচ্ছিল না। কবিকে বাড়িতে রেখে বিকালে গণভবন সুগন্ধায় গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখেই বলছিলেন, ‘কি রে কাদের! তোর কবি রফিক আজাদ আমাকে অমন গালাগাল করছে কেন? সত্যিই কি আমি অমন কাজ করছি?’ বঙ্গবন্ধুর কথায় আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল। কতটা আঘাত পেলে কেউ অমন বলে। আমি বললাম, না। কবি আপনাকে গালাগাল করেনি। আপনাকে যথার্থ পিতার জায়গা দিয়ে বিপদ থেকে সতর্ক করতে চেয়েছে। ‘কী বলিস? অমনভাবে এই দুঃসময়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে ভাত দে হারামজাদা বললো। তারপরও তুই বলছিস ও খারাপ বলেনি। কী বলিস?’ কবি আমায় যেভাবে যা বুঝিয়েছিলেন আমিও নেতাকে সেভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। এখন খেয়াল নেই হয় মোহাম্মদ আলী, না হয় ফরাসউদ্দিন কেউ একজন ছিলেন। কবিতাটি আনতে বললেন। আমি ২-৩টি জায়গা কয়েকবার পড়ে শুনালাম। পিতা তার আসন থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘ঠিকই তো, তোর কবি ঠিক বলেছে, ঠিক লিখেছে। ওকে এখনই নিয়ে আয়।’ কবি আমার বাসাতেই ছিল। তাকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নেওয়া কোনো কঠিন ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই তাকে নিয়ে গেলাম পিতার কাছে। গিয়ে সালাম করার সঙ্গে সঙ্গে মাথার চুল ধরে টেনে তুলতে গিয়ে পিতা বললেন, ‘এই হারামজাদা, কবি হলেই এমন লেখে?’ কবি রফিক আজাদ বেশ মুখোর ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘এই যে আমার মাথার চুল ধরে টেনে তুলতে হারামজাদা বললেন— এটা কী? এটা কি ক্ষুুব্ধ হয়ে, নাকি ভালোবেসে বলেছেন?’ বঙ্গবন্ধু তব্দা ধরে বসে পড়লেন। কবি তার ‘ভাত দে হারামজাদা’ শুনালো ৪-৫ বার। পিতা অভিভূত হলেন। বুকে নিয়ে বারবার আদর করে বললেন, ‘তুই আরও লিখবি। এটাই তো কবিতা। মানুষের কথা তোরা না বললে কে বলবে?’ আমাকে বললেন, ‘কাদের, ওকে মাঝে মাঝে নিয়ে আসবি। ও আমাকে কবিতা শুনাবে। কবিতা শুনলে মন পরিষ্কার হয়।’ সঙ্গে সঙ্গে মনসুর ভাই, না মালেক ভাই কে যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, বললেন ‘ওর মামলা আমি তুলে নিলাম। আমি বেঁচে থাকতে ওর নামে যেন কোনো মামলা না হয়।’ এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই কবি আমার প্রিয় মানুষ বিপদে আপদে কত কাছে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে কত কষ্ট করেছেন। নির্বাসিত জীবনে বর্ধমানে গিয়ে আমার প্রথম লেখা ‘স্বাধীনতা ’৭১’ কী নিষ্ঠার সঙ্গেই না ঝালাই বাছাই করেছেন। ইত্তেফাকে রবিবারে যখন কাজ করতেন তখন আমার এক লম্বা সাক্ষাৎকার ছেপেছিলেন। দিলারার সঙ্গে কবে তার বিয়ে হয়, কবে বকুলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি— এর অনেক কিছুই জানতাম না। বিয়ের পর রফিক আজাদের স্ত্রী দিলারাও বর্ধমানে বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছে। দিলারাও একজন কবি এবং খুব ভালো মানুষ। ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কবি রফিক আজাদের প্রাণহীন মুখ দেখে যখন ফিরছিলাম, কবির পরিবার-পরিজন বারবার বলছিল, ‘কবির তো কোনো মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই। তাই সে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়। এ জন্য আপনি ব্যবস্থা করেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক পা থেকে মাথা পর্যন্ত একজন সজ্জন রাজনৈতিক মানুষ। তাই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ফোন করেছিলাম। শুনে ‘ইন্না লিল্লাহি’ পড়ে বলেছিলেন, আমি সব ব্যবস্থা করছি। আপনি আমায় দোয়া করবেন। আমিও বলেছিলাম, দোয়া করি, আপনার স্ত্রীর চাইতেও আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মর্যাদা রাখবেন। কবি রফিক আজাদ নেই। আর কোনোদিন কাউকে জ্বালাতে আসবে না। গত সোমবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। দয়াময় পরম প্রভু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তবাসী করেন এবং তার স্বজনদের এই আঘাত সইবার শক্তি দেন— আমিন।


লেখক : রাজনীতিক।


বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা

সর্বশেষ খবর