২১ মার্চ, ২০১৬ ১১:৫১

বিএনপির কাউন্সিল কি শুধুই নাটক?

আবু হেনা

বিএনপির কাউন্সিল কি শুধুই নাটক?

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেখলাম বিএনপির চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হলো। নাটকটা ভালোই করেছে। কাকে নির্বাচিত করা হলো? দুজনই আসামি। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি। আরেকজন তো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা—যেখানে আইভি রহমানসহ অনেককে হত্যা করা হয়, মানি লন্ডারিং দুর্নীতির মামলায় পলাতক আসামি। সে পলাতক আসামির নাম ইন্টারপোলে। ইন্টাপোলে যার নাম আসামি হিসেবে ওয়ান্টেড হিসেবে আছে সে হলো বিএনপি নেতা। তাহলে সে দল মানুষকে কী দেবে?

প্রধানমন্ত্রীর শেষ প্রশ্নটির উত্তর এদেশের জনগণের জানা। বিএনপি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম) বাংলাদেশের মানুষকে অনেক কিছু দিয়েছে। মহিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘বিএনপি সময় অসময়’ বইটিতে এর কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়েছে; জিয়াউর রহমান সেনানায়ক থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়েছিলেন। বিএনপি নামের একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি, যা টিকে আছে আজও। তার নেতৃত্বের স্ফুরণ ঘটেছিল ১৯৭১ সালেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে। তার উত্থান ছিল নাটকীয়তায় ভরা। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। ...২৫ মার্চের মধ্যরাতে জিয়ার নেতৃত্বে অষ্টম বেঙ্গলের বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করলেন। এর আগে জিয়া সবার কাছে আনুগত্য চেয়েছিলেন। ...একটা চরম মুহূর্তে জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছিলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে মেজর মীর শওকত আলী, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ, ক্যাপ্টেন সাদেক হোসেন, লে. শমসের মবিন চৌধুরী, লে. মাহফুজুর রহমান এবং অষ্টম বেঙ্গলের অন্যান্য বাঙালি সদস্য ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন। একই বইয়ে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বিভাজনের রাজনীতির বিয়োগান্ত শিকার হয়েছেন যে কয়েকজন জিয়াউর রহমান তাদের একজন। জিয়া শেখ মুজিবকে নেতা মানতেন এবং সব সময় তার সম্বন্ধে ইতিবাচক কথা বলতেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে যথেষ্ট সম্মান দেয়নি। ‘সেক্টর’ কমান্ডাররা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা বইতে শাহরিয়ার কবির মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা বীরের সম্মান দিতে জানি না। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলাদেশের একজন মাত্র মুক্তিযোদ্ধার ছবি আছে, বুকের ওপর দুহাত আড়াআড়ি করে দাঁড়ানো। তিনি জিয়াউর রহমান।’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে যে ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলেছিল ক্ষমতার লড়াই আর রাজনৈতিক উথালপাতাল। ১৫ আগস্ট মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণ এবং সামরিক আইন জারি, তারপর খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, একই দিনে চার জাতীয় নেতাকে কারাগারে হত্যা এবং ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের দিন খালেদ মোশাররফসহ শীর্ষ সামরিক অফিসারদের হত্যা— এসব কিছুর মাঝখানে সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ই এক বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল। এ অবস্থায় মানুষ একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি চেয়েছিল। আর এ প্রেক্ষাপটেই জিয়াউর রহমানের একটি দেশপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে এবং বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর একটি বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক : ‘...রাজনৈতিক শূন্যতা তখন ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছিল। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভূত বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, উত্পাদন ও সমাজকর্ম সমন্বিত রাজনীতি দিতে পারবে এমন রাজনীতির জন্য দেশ ও জাতি তাকিয়ে ছিল অনেক আশা-ভরসা নিয়ে। কেননা এগুলোই ছিল মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনা।’

জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর অফিসারদের জনপ্রশাসনে এনে সিভিল-মিলিটারি দ্বন্দ্বের ভারসাম্য রাখার নীতি প্রণয়ন করলেও প্রশাসন থেকে তিনি যথাসম্ভব সামরিক বাহিনীকে দূরে রেখেছিলেন। জিয়া তার সরকারের সম্পূর্ণ দলীয়করণও করেননি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে তিনি নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামস্-উল হক। পরিকল্পনামন্ত্রী ফসিহ উদ্দিন মাহতাব, কৃষিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) নুরুল ইসলাম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক, শিল্পমন্ত্রী এস এম শফিউল আযম এবং অর্থমন্ত্রী ড. এম এন হুদা। তিনি অর্থনীতিতে ব্যক্তিপুঁজি এবং ব্যক্তিমালিকানার গুরুত্ব দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় সংসদের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রাখেন। তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ওপরই বিএনপির ভিত রচনা করে গেছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি ২০৭ আসনে জয়ী হয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ৭ মে ১৯৮৬ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয় তাতে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। পরে ২৮টি মহিলা সদস্য যুক্ত হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৮টি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিএনপির সংসদে আসন ছিল ১১৬টি। এরপর ২০০১ এ বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে বিএনপি ১৯৩টি আসন পায় এর সঙ্গে যুক্ত হয় ৩৬টি মহিলা আসন। ফলে মোট আসন হয়ে যায় ২২৯টি। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির আসন ছিল ৩০টি। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা সর্বমোট ১০২৮টি আসনে জয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারাই এ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, জনগণের সেবা দিয়েছেন, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির স্থাপন করেছেন, গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎ আর টেলিফোন সংযোগ। এই দল জনগণের সরাসরি নির্বাচনে নির্বাচিত দুজন রাষ্ট্রপতি জাতিকে উপহার দিয়েছে। বেগম খালেদা তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুবার বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৫ম সংসদে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত রচনা করে এবং ৬ষ্ঠ সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের প্রচলন করে। ১৯৯১ সালে ভ্যাট পদ্ধতি চালু করে বিএনপি এদেশের রাজস্ব প্রশাসনের বৈপ্লবিক গতি সঞ্চার করে। দলের চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অসত্য নয়। এ কথা সত্য যে, তারা দুজনই বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত আসামি। কিন্তু তারা কেউই আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নন। তাদের নির্বাচনের মধ্যে কোনো নাটকীয়তা নেই। বরং বিএনপির গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়া গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তার এবং তার পুত্র তারেক রহমানের নির্বাচন একই সঙ্গে কাউন্সিল অধিবেশনের আগেই সমাপ্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সে অনুযায়ী একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তফসিল ঘোষিত হয়েছে এবং কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় কমিশন দুজনকেই নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় মোট কাউন্সিলরদের তিন ভাগের দুই ভাগ প্রস্তাবের অনুকূলে ভোট দিয়ে সংশোধনী গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই নির্বাচন গঠনতন্ত্র মতে বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।

অতএব, ১৯ মার্চ ২০১৬ বিএনপির যে ‘জাতীয় কাউন্সিল’ অনুষ্ঠিত হলো— তা এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘জাতীয় কাউন্সিল’ নামে দলের একটি জাতীয় কাউন্সিল থাকবে যার গঠন পদ্ধতি নিম্নরূপ হবে— প্রতি উপজেলা/থানা নির্বাহী কমিটির (মহানগর থানাসহ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; ২) প্রতি পৌরসভা নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; ৩) প্রতি জেলা নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; ৪) প্রতি মহানগর নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; ৫) প্রতি জেলা ও মহানগর নির্বাহী কমিটির কর্তৃক মনোনীত প্রতি জেলা ও মহানগর হতে দুজন মহিলা সদস্য; ৬) পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যবৃন্দ; ৭) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ; ৮) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ; ৯) চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত উপরে বর্ণিত ১) হতে ৮) এর মোট সদস্য সংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ।

গঠনতন্ত্রের পৃষ্ঠা ১১-তে বর্ণিত ‘জাতীয় কাউন্সিলের মূল দায়িত্ব ও ক্ষমতা হলো দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের ৩৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত বিধান অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দের সরাসরি ভোটে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে ৩ বছরের জন্য দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। দলের সাংগঠনিক কাঠামোর গঠন প্রণালী অনুযায়ী উপজেলা/ থানাভুক্ত প্রতিটি ইউনিয়নের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে দলের উপজেলা/থানা কাউন্সিল গঠিত হবে। এই কাউন্সিল দুই বছর মেয়াদি ১০১ জনের অনূর্ধ্ব একটি উপজেলা নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত করবে। একইভাবে দলের পৌরসভা কাউন্সিলের মাধ্যমে পৌরসভা নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। এসব কমিটি জেলা কমিটি অনুমোদন দেবে। দলের জেলা কাউন্সিল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জেলাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা/থানার ও পৌরসভার নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের দিয়ে গঠিত হবে। অতঃপর কাউন্সিল সদস্যদের মধ্য থেকে দুই বছর মেয়াদে কাউন্সিল সদস্যদের মধ্য থেকে ১৫১ জনের অনূর্ধ্ব একটি জেলা নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে।

দলের গঠনতন্ত্রের ১১ পৃষ্ঠা থেকে ২০ পৃষ্ঠায় দলের সাংগঠনিক নীতিমালা ও কাঠামো সন্বন্ধে বিস্তারিত বলা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় দফতরে রক্ষিত নথিপত্র অনুযায়ী গত ৮-১১-২০১৪ এ যে জেলা/মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল তারও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত ৯ আগস্ট ২০১৫ দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা/ মহানগর সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিটির বিষয় ছিল : দলকে অধিকতর সংগঠিত ও সক্রিয় করা প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়; ‘দলের বিভিন্ন পদে দীর্ঘ দিন ধরে অধিষ্ঠিত অনেক পদধারী নেতা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য, অনিচ্ছুক, নানা কারণে অক্ষম কিংবা স্বভাবগত ভীতি ও আপসকারিতার কারণে অথবা ব্যক্তিগত পারিবারিক কিংবা পেশাগত কারণে নিজ জেলা/মহানগর/উপজেলা/থানা/পৌর এলাকায় দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার ফলে দলের কার্যক্রম দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ব্যক্তির অনেকেই কোনো দায়িত্ব পালন না করেও নিজেদের পদ ও নেতৃত্ব ধরে রাখার লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠনে বাধা সৃষ্টি করে থাকেন এবং যোগ্য ও নতুন নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরিবর্তে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে।’ ‘অনিবার্য কোনো কারণে অথবা নেতৃত্বের অনীহা কিংবা অবহেলার কারণে যথাসময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ/পুনঃগঠন/গঠিত না হওয়ার ফলে দল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটার কোনো বিকল্প নেই।’  ‘এই লক্ষ্যে আপনাদের জেলা/মহানগরাধীন উপজেলা/থানা/ পৌর এলাকায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করে তাদের প্রতিনিধিদের সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখের মধ্যে জেলা/মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য আপনাদের দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।’ দুর্ভাগ্য, ৯ আগস্ট ২০১৫ এর পর দীর্ঘ ৭ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু চেয়ারপারসন কর্তৃক অনুমোদিত ও নির্দেশিত, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পক্ষে স্বাক্ষরিত পত্রটির নির্দেশনাবলি পরিপালিত হয়নি। পরিপালিত হলে অনেক আগেই সবকটি উপজেলা/জেলা/ থানা/পৌর থানা কমিটিগুলো গঠন হয়ে যেত এবং ২০০০ নির্বাচিত কাউন্সিলর ১৯ মার্চ ঢাকায় কাউন্সিলে যোগদান করত এবং চেয়ারপারসনসহ অন্য সব কর্মকর্তাকে নির্বাচিত করে দলের একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারত, যা এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। শেষ অবধি ৯ আগস্ট এর চিঠির কথাগুলোই স্বপ্রমাণিত হলো; ‘এসব ব্যক্তির অনেকেই কোনো দায়িত্ব পালন না করে ও নিজেদের পদ ও নেতৃত্ব ধরে রাখার লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠনে বাধা সৃষ্টি করেন এবং যোগ্য ও নতুন নেতা-কর্মীদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরিবর্তে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন।’ আজ এদের কারণেই পুরো কাউন্সিলটিই প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯ মার্চ কাউন্সিলরবিহীন যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলো— তা দলকে এগিয়ে নিতে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা তা এখন দেখার বিষয়।  

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর