৪ এপ্রিল, ২০২০ ২২:৪৪

মহামারী ডেকে আনছি, মর্মান্তিক পরিণতির কথাই ভাবছি না!

পীর হাবিবুর রহমান

মহামারী ডেকে আনছি, মর্মান্তিক পরিণতির কথাই ভাবছি না!

পীর হাবিবুর রহমান

আমরা আগাম প্রস্তুতি নিতেও পারিনি। করোনাক্রান্ত ইতালি থেকে আসা প্রবাসীদের দেশে দেদারছে ঢুকতে দিয়েছি পরীক্ষা ছাড়াই। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন দিতে পারিনি। তারা সমাজে ছড়িয়েছে, মিশেছে। করোনারভাইরাস ছড়িয়েছে। আমরা লকডাউনে যাইনি পৃথিবীর মতোন। আমরা সরকারি ছুটির ফাঁদে ফেলেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে কার্যত দেশকে লকডাউনে দিয়েছি। গরিবের ঘরে সরকার খাবার দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা, মানবিক মানুষ সাহয্যের হাত বাড়িয়ে  দিয়েছে।

সরকার সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে থাকতে বলেছে। সচেতনতাই রক্ষাকবচ, পারলে ঘর থেকে বের না হতেই বলেছে। সামাজিক দূরত্ব ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে মাঠ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনতো মাঠেই ছিল। অসেচতন জনতার বেপরোয়া একটা অংশ সমাগম আড্ডাবাজিতে লিপ্ত হলো। ছুটিতে পাগলের মতোন কোটি মানুষ গ্রামে গেল। সামাজিক দূরত্ব সমাগম নিশ্চিতে পুলিশ অ্যাকশন অনিবার্য ছিল। কিন্তু আমরা একদল হায় হায় করে উঠলাম পুলিশকে নির্দয় বলে। গুজব ছড়ালাম। পুলিশ অ্যাকশনে থেমে গেল। জনস্রোত যখন গ্রামমুখী হলো ভয় পেলাম। গ্রামেও করোনা ছড়িয়েছে আশঙ্কা অনেকের।

সরকার ছুটি বাড়ালো ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। কথা নেই, বার্তা নেই মালিকরা গার্মেন্ট খুলে দিলেন। ঢাকামুখী জনস্রোত আবার! গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে গ্রামে যাওয়া সবাই ফিরছে। এখন ফেরিসহ সব পথে সামাজিক দূরত্বের নিষেধাজ্ঞা, ঘরে থাকার নির্দেশ ভেঙে আবার লোকসমাগম হচ্ছে ঢাকায়! সবখানে শিথিলতা, অসেচতনতা, স্ববিরোধীতা! এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ঙ্কর আশঙ্কা কতগুণ বাড়লো কেউ বলতে পারবেন?

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে চীনে ৫০ হাজার মানুষ করোনায় মারা গেছে। তারা সত্য লুকিয়েছে এমন অভিযোগ আগে থেকেই? চীনের ভয়াবহতা থেকে ইউরোপ আমেরিকা শিক্ষা নেয়নি বলে এখন মৃত্যুর নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে।

ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পরিণতি কি ভয়ঙ্কর এখন পৃথিবী দেখছে। তারা চীনের পর উদাসীন ছিল। কার্যকর প্রতিরোধ গড়েনি। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙেই পড়েনি কঠিন যুদ্ধ করেও লাশ ও আক্রান্তের মিছিল থামাতে পারে না। লাশের প্যাকেট খুঁজে আমেরিকা। উফ! কি ভয়াবহ অবস্থা। মিলানের কবরে লাশের জায়গা নেই!

ইউরোপ আমেরিকায় মিনিটের হিসাবে চলছে মৃত্যুর সংখ্যা। চিকিৎসকরা ক্লান্ত অবসন্ন। আরও চিকিৎসক চায় নিউ ইয়র্ক। প্রতাপশালী হোয়াইট হাউস অসহায়। উন্নত দুনিয়ার যদি মহামারীতে এতো আক্রান্ত, মৃত্যু ও চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন দশা হয়, আমাদের মহামারী দেখা দিলে কি ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে? কেউ ভাবছেন? ইতালিতে আক্রান্তের ৪৫ দিন পর, স্পেনে ৫০ দিন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ দিন পর মহামারী দেখা দেয়। আমরা আক্রান্ত হই ৮ মার্চ। ৩০ দিন হয়নি। আক্রান্ত ও মহামারী হলে কি পরিণতি হবে?

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১১ লাখ ৩৯ হাজার। মারা গেছে ৬১ হাজার। সুস্থ ২ লাখ ৩৬ হাজার।পুরো পৃথিবীই লড়ছে। নিয়ন্ত্রণে কোথাও আসছে না। ত্রাসের রাজত্ব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ।তার মানে এটা বাড়ছেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরুতে করোনা সংকটের কথা অস্বীকার করে এখন যেনো নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ চলছে। আমাদের সামাজিক দূরত্ব তৈরির ব্যর্থতা কি সামনে মহাবিপর্যয় নিয়ে আসবে না? মক্কা-মদিনায় যেখানে কারফিউ, এখানে জামাতে নামাজ থেকে পূণ্যস্নানে সমবেত হতে হচ্ছে মুসলমান ও হিন্দুদের! আমাদের হাটবাজার সবখানেই সমাগম। এমনকি করোনাক্রান্তের বাড়ির সামনেও উৎসুক জনতার ভীড়।

তবে কি আমরাই করোনার মহামারীকে ডেকে আনছি? মহামারী দেখা দিলে ১৮ কোটি মানুষের দেশে পরিস্থিতি কত বেদনার হবে ভাবছি? ইউরোপ আমেরিকা যেখানে ব্যর্থ আমাদের পরিণতি কি হবে?

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর