স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জনগণ একমত। কোটাবিরোধী আন্দোলন কোন জাতীয় বা জনগণের দাবি নয়। এটি চাকরি প্রার্থী ছাত্রদের একটি অংশ তাদের নিজেদের স্বার্থে কোটা বিলুপ্ত করার জন্য আন্দোলন করছে। সরকার তো কোটা বিলুপ্ত করেই দিয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা উচ্চ আদালতে মামলা করে তাদের প্রাণের দাবি মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের কোটা সংরক্ষণের দাবি প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ সেই দাবি গায়ের জোরে বন্ধ করে দিতে চায়। তারাও আদালতে যেতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি না করে কোটা বিরোধীরা গায়ের জোরে এবং তাদের বয়স ও অবস্থানের সুযোগ নিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়েই চলছে। যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন- কারও লিমিট অতিক্রম করা সুন্দর হবে না।
যাইহোক শেষতক কোটা বিরোধীরা আদালতে গিয়ে আপাতত কোটা সংরক্ষণ বন্ধ করার আদেশ পেয়েছে। এখন তারা নতুন আবদার শুরু করেছে যে কোটা সংস্কার করতে হবে। এটার সমাধান হলে তারপরে জানি আবার কি কি নতুন দাবি আসে! আবার তারা সরকারের পতন না চেয়ে বসে! সাধু সাবধান।
আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে। কোটা থাকতে হবে। প্রয়োজনে কোটা বাড়াতে হবে। শিক্ষায় অনেক বৈষম্য আছে। শহর ও গ্রামের শিক্ষার সুযোগে ব্যাপক ফারাক। এখন যে পদ্ধতিতে মেধা যাচাই হচ্ছে তা সঠিক নয়। এটি মানবসৃষ্ট কৃতিম একটি পদ্ধতি যেখানে অনৈতিক উপায়ে এবং অতিরিক্ত টাকা খরচ করে মেধা বৃদ্ধি করা হয়। গরিব ও গ্রামের সাধারণ পরিবারের সন্তানেরা সে সুযোগ পায় না। ফলে মেধা সৃষ্টিতে মানব সৃষ্ট প্রচণ্ড বৈষম্য রয়েছে। আমরা এই তথাকথিত মেধাকে মানি না। তাই চাকরির প্রাপ্তিতার বিচারে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্টির প্রার্থীদেরকে হয় কোটা সংরক্ষণ করে অথবা মেধাসম্পন্ন হওয়ার জন্য অতিরিক্ত নিয়োজিত প্রতি শিক্ষকের জন্য ৪-৫ নম্বর করে কর্তন বা হ্যান্ডিক্যাপ দিয়ে মেধার ভারসাম্য আনতে হবে। মেধাবী প্রতি প্রার্থীকে তারা ছাত্র অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে কতজন অতিরিক্ত শিক্ষকের নিকট পড়াশোনা ও চাকরির প্রয়োজনীয় মেধা অর্জনের জন্য কতজন শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়েছেন এবং তার জন্য কি কি পরিমাণ সম্মানীয় দিয়েছে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। এই হিসাব করে তার বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্য নাম্বার হতে শিক্ষক প্রতি ৪-৫ নম্বর কর্তন করতে হবে। তাহলেই সত্যিকারের মেধাবীদের প্রতি সুবিচার করা হবে।
আমি কোটা সংরক্ষণেরও পক্ষে। অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের মেধাবীদের জন্য সকল চাকরি ও সুযোগ সুবিধায় অন্তত ৩০% কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। দরকার মনে হলে সংবিধানে তা উল্লেখ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ উনার সুস্পষ্ট বক্তব্যের জন্য। আমাদের সবাইকে সীমার মধ্যে থাকতে হবে। কাউকেই লিমিট অতিক্রম করতে দেয়া যাবে না, যা সরকারের বেলায়ও প্রযোজ্য।
পরিশেষে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, সন্তান অবাধ্য হলে কি করণীয় তা প্রতিটি ভাল অভিভাবকেরা পরিষ্কার জানেন। দয়া করে অভিভাবকদের কথা শুনে সীমা রেখা টানুন। মনে করিয়ে দিতে তাই spare the cane - spoiled the Child! তবে নিজেদের দুর্বলতা থাকলে কোন কিছু করা যাবে না। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে হবে - তবে তাতে সমস্যা আরো প্রকট হবে!
“বুঝহ সুজন যে জন জানহ সন্ধান”
লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন