বুয়েটের ১৯৯১ ব্যাচের আট ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে ১৯৯৩ সালে গড়েছিলেন ‘অষ্টক-৯১’। বুয়েটে প্রতিবছর একবার সব ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের নিয়ে সারাদিন উৎসব হতো। বিশেষ করে বুয়েটের শেষ বছর পুরোটাই ছিল অষ্টকময়। বুয়েট থেকে পাশ করার পর দেশে থেকে যাওয়া সহপাঠিরা বছরে অন্তত একবার অষ্টকের ডাকে সাড়া দিয়ে সবাই মিলিত হচ্ছে।
অপরদিকে উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও ‘অষ্টক-৯১’ এর পুনর্মিলনী হলো এই প্রথম। তাই আয়োজক অঙ্গরাজ্য হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়ার সহপাঠি ছাড়াও অন্য রাজ্যের বন্ধুদেরও উৎসাহ-উদ্দীপনায় কমতি ছিল না। নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি করে স্লোগান ঠিক করা হয় ‘২৫ বছর এবং তারও অধিক’। মূল আয়োজনে সহায়তা করেছে বিভিন্ন প্রান্তের সহপাঠিরা। তৈরী করা হয় ব্যানার, টি-শার্ট, স্যুভেনির আর নানারকম উপহার-সামগ্রী।
বিভিন্ন দিক থেকে সকলেই গত মাসের মাঝামাঝি ক্যালিফোর্নিয়ার আসিলমার কনফারেন্স সেন্টারে জড়ো হলেন। প্যাসিফিক গ্রোভ শহরটাই প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে। মূল অনুষ্ঠানের প্রাঙ্গণ থেকে দুই পা ফেললেই সমুদ্রসৈকত। কত বছর পর অর্ধশত বন্ধু একত্রিত হওয়ায় পুরো কনফারেন্স সেন্টার ভিন্ন এক আমেজে আবিষ্ট হয়। তাই হৈ হুল্লোড়ের প্রথম ধাক্কায় ভেসে গেলো শুরুর দিকে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা। তারপর সবাই মিলে রাতের খাওয়ার পর শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আমেরিকার জাতীয় সংগীত আর একটা স্মৃতিচারণমূলক ভিডিও প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিভাগ অনুযায়ী একে একে উপস্থিত সবাইকে মঞ্চে এসে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো। মূল অনুষ্ঠান শেষে অনেক রাত পর্যন্ত চললো বুয়েট স্টাইলে আড্ডা।
পরদিন সকালের প্রথম আকর্ষণ ছোটদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অষ্টকের বন্ধুদের দিয়েও সাজানো হলো গান আর কবিতার আসর। এরপর মিছিল করে সাগরপাড়ে গেলেন সকলে। ছোটদের জন্য বালি দিয়ে খেলা আর ঘুড়ি উড়ানোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি বড়রাও অনেকদিন পর এই সুযোগে একটু ঘুড়ি উড়িয়ে নিলেন। বড়োদের জন্য বিচ ভলিবলের আয়োজন থাকলেও দলবেঁধে একে অন্যকে পানিতে চুবানোর কাজেই ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। এই ডামাডোলে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের কাছাকাছি চলে গেল কারো মনেই ছিল না। রাতে ফ্লোরিডা থেকে আসা এই প্রজন্মের তারকা শিল্পী শোভন আনোয়ারের কনসার্ট। সন্ধ্যার আগেই সবাই সেজেগুজে কনসার্ট হলে হাজির। তিন ঘণ্টার এই কনসার্টে ছিল নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় গানের সাথে দলবেঁধে নাচ। আমেরিকার খ্যাতনামা বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষপদে কর্মরত ইঞ্জিনিয়াররা ডুবে গেলেন ছাত্র-জীবনের খুনসুটিতে।
৩ দিনের নানা কর্মসূচি শেষে সকলে আবারও অন্য কোন শহরে একত্রিত হবার সংকল্পে নিজ নিজ ঘরে ফেরেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা