স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি বলেছেন, ‘চলমান ৫ বছর হচ্ছে আমাদের ট্রেনিং পিরিয়ড। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদের ৪৭ জনকেই এ ট্রেনিং নিতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে থেকে। কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারলেই পরবর্তী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় কোন সমস্যায় পড়তে হবে না’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ‘মমতাময়ী মা’ হিসেবে অভিহিত করে আরো বলেন, ‘আমরা যে ট্রেনিং নিচ্ছি সেটি তিনিই (শেখ হাসিনা)উল্লেখ করেছেন।
জাতিসংঘের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে যোগদানরত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদকে ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুরের প্রবাসীরা অভ্যর্থনা জানায়।
উল্লেখ্য, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি আসন থেকে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। এর আগেও তিনি একই এলাকার এমপি ছিলেন।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারের এ সংবর্ধনা সমাবেশ সঞ্চালনা করেন হোস্ট কমিটির সদস্য-সচিব ও জামালপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
সমাবেশের জন্যে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডা. মুরাদকে অভিনন্দন জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রস্থ বঙ্গবন্ধু আইনজীবী সমিতির সভানেত্রী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত রিয়েল এস্টেট এজেন্ট মোর্শেদা জামান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনি ডা. বিজলি।
স্বাগত বক্তব্য দেন জামালপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি শাহাদৎ হোসেন বাবু। এছাড়াও ডা. মুরাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে আরো শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এমরান খান, খায়রোল বাশার আরিফ, শফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, সেলিনা রহমান এবং শাহেন শাহ।
অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর জাতীয় সঙ্গীত এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। উইক ডে হওয়া সত্বেও উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। এক পর্যায়ে অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য।
উল্লেখ্য, ডা. মুরাদের বাবা এডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে টানা ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন ২২ বছর। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ সারাটি জীবন বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। এ সমাবেশ থেকে মরহুম মতিউর রহমান তালুকদারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাও করা হয়।
ডা. মুরাদ তার মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যত পরিকল্পনার আলোকে বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় ইতিমধ্যেই ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। শীঘ্রই সকল জেলায় ১০০ শয্যার একটি করে কিডনি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল এবং হৃদরোগ-চিকিৎসা কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এসবই বঙ্গবন্ধু কন্যার ভিশনারী লিডারশিপের ফসল।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সকল জেলা সদরে একটি করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। এসবকে কার্যকর রাখতে সরকারের আন্তরিকতায় কমতি নেই। তিনি বলেন, মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জামালপুরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, আমার রাজনৈতিক শিক্ষক সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আজমের আন্তরিক আগ্রহে গত ৫ বছর ৪০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আমি তার আশির্বাদে চলতি মেয়াদে আরো বেশী অর্থে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আগ্রহী। সে প্রত্যয়ে কাজ করছি। আপনারা দোয়া করবেন যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় চলমান অভিযাত্রায় শেখ হাসিনার একনিষ্ট কর্মী হিসেবে থাকতে পারি।
সমাবেশে এলাকার ভক্ত-অনুরক্তরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। ক্রেস্ট প্রদান করা হয় হোস্ট কমিটির পক্ষ থেকে।
এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের উন্নয়নের ঘটনাবলির আলোকপাত করেন। কন্সাল জেনারেল তার বক্তব্যে বহুজাতিক এই সমাজ তথা কুইন্সে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি জাগ্রত করতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কটি কর্মসূচির তথ্য উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, সাদিয়া ফয়জুননেসা এখানে যোগদান করেছেন ৮ মাস হলো। এরইমধ্যে কমিউনিটিকে মুলধারার সামনে নতুন এক পরিচয়ে উপস্থাপনে অনেক দূর এগিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট তাকে ‘ডিক্লাশেন অব অনর’ সম্মানে ভূষিত করেছেন।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে আশরাফুজ্জামান সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, কর্মদিবসেও বিপুলভাবে সাড়া দিয়ে প্রকারান্তরে ডা. মুরাদের প্রতি সকলের গভীর মমত্ববোধ ও আস্থার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ঐক্যের এ ধারা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন