আর মাত্র দুদিন পর আগামী ৩১ শে আগস্ট মালয়েশিয়া পালন করবে স্বাধীনতা লাভের ৬২ তম বার্ষিকী (হারি মারদেকা)। দিবসটি উদযাপনের জন্য সরকারি সংস্থা গুলো ছাড়া সাধারণের মাঝেও দেখা যায় ব্যাপক প্রস্তুতি। এ উপলক্ষ্যে পুরো দেশজুড়ে থাকে সাজ সাজ রব। শহর, গ্রাম, আর অলিগলি সাজানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন লাল, নীল, সাদা আর হলুদের সংমিশ্রনে তৈরি মালয়েশিয়ান পতাকায়।
স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরও ছেয়ে গেছে পতাকা সংবলিত নানা রকম ব্যানার ও ফেস্টুনে।
দিবসটি পালনে মালয়েশিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দেশটির স্বাধীনতা দিবসে এবারের স্লোগান- 'সায়াংগী মালয়েশিয়াকু, বেরসেহ মালয়েশিয়া' (মালয়েশিয়া আমার ভালোবাসা, পরিষ্কার মালয়েশিয়া)।
এবারের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এ উপলক্ষ্যে পুত্রাজায়ার বেশ কয়েকটি সড়ক ও কিছু স্থান গত ২০ শে আগস্ট থেকে সাময়িক বন্ধ রেখে চলছে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থা গুলির স্বাধীনতা দিবসের কুচকা আওয়াজ প্রশিক্ষন, অধিবেশন ও মহড়ার প্রাক প্রস্তুতি।
মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি। পৃথিবীর মানচিত্রে নিজস্ব ভূখণ্ড নিয়ে মালয় জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে এই দিনে।
১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে রক্তপাতহীন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি।
মালয়েশিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
মালয়েশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগেও মালয় অঞ্চলে মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সুদূর অতীতে এ অঞ্চলে হিন্দু-বৌদ্ধ শাসকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩ শতকে এই উপদ্বীপে ইসলামের আগমন ঘটে। ১৫ শতকে মালাক্কান সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক কারণে মধ্য এশিয়া, ভারত ও আরবদের সঙ্গে মালয়ের সংযোগ স্থাপিত হয়।
গত ৩ দশকে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি লাভ করে। যার জন্যে পুরো বিশ্ব একবাক্যে ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত নেতৃত্বদানকারী মাহাথির মোহাম্মদকে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজও তার দেয়া ‘ভিশন ২০২০’ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।
১৯৭০ সালেও মালয়েশিয়ার অধিকাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। ১৯৭১ সালে নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে মালয়েশিয়া। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৯০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়াতে দারিদ্র্যের হার বিস্ময়করভাবে কমে আসে।
মালয় ভাষা মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা। এখানে ইংরেজী ভাষা সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে আরও প্রায় ১৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, বুগিনীয় ভাষা, দায়াক ভাষা, জাভানীয় ভাষা এবং তামিল ভাষা উল্লেখযোগ্য।
মালয়েশিয়ার ১৩টি রাজ্য (নেগেরি) হল জোহর, কেদাহ, কেলান্তান, মেলাকা, নেগেরি সেমবিলান, পাহাং, পেরাক, পারলিস, পুলাউ, পেনাং , সাবাহ, সারাওয়াক, সেলাঙ্গর এবং তেরেঙ্গানু। আর ৩টি এলাকা কুয়ালামলামপুর, লাবুয়ান ও পুত্রাজায়া শহরসহ একটি ফেডারেল টেরিটরি (ওয়িলাইয়াহ পেরসেকুতুয়ান)।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। তবে বৌদ্ধ, তাও, হিন্দু, শিখ, খ্রীস্টান এবং অন্যান্য উপজাতীয় ও সংখ্যালঘু ধর্ম স্বাধীনভাবে পালিত হয়। এখানে মালয় ও আদিবাসী মিলে রয়েছে সর্বমোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। এছাড়া চীনা ২৮ ভাগ, ভারতীয় ৮ভাগ এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী রয়েছে ৪ ভাগ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন