২৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:১৬

বিচার না হওয়ায় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বেড়েছে: টরন্টোয় আলোচনায় অভিমত

আহসান রাজীব বুলবুল, কানাডা

বিচার না হওয়ায় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বেড়েছে: টরন্টোয় আলোচনায় অভিমত

বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার বাংলাদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির ভাংচুর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের পেছনে নষ্ট রাজনীতির উসকানি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’র আলোচনায় অংশ নিংয়ে তারা এই কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কবি আসাদ চৌধুরী, টরন্টোর ডেনফোর্থ ইসলামিক সেন্টার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফারুক আহমদ এবং টরন্টো হিন্দু কালচারাল সোসাইটি ও মন্দিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিবু চৌধুরী। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংকট কোথায়!’ শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তারা হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘরে হামলাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে দুর্বৃত্তদের আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। 

কবি আসাদ চৌধুরী তার আলোচনায় স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকে উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক ঘাত প্রতিঘাত এবং সৌহার্দের অনবদ্য চিত্র তুলে ধরে বলেন. পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস সন্দেহ মানুষের ক্ষতি করে, তাদের ছোট করে দেয়। আমরা এখন পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহের মধ্যে বসবাস করি। এটা দূর করতে হবে। সংখ্যায় যারা বেশি তাদেরই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।  

তিনি হিন্দুদের উপর হামলাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকের উপর অত্যচার হয়েছে তার বিচার হতে হবে। হিন্দু কী মুসলমান এটা কোনো কথা না, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার করার ক্ষেত্রে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না।’ 

ডেনফোর্থ ইসলামিক সেন্টার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফারুক আহমদ হিন্দু- মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে প্রচারণার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ‘ইন্টারফেইথ হারমোনি’র চর্চা বাড়ানো গেলে সাধারন মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বাড়বে।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকারমসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং ইসলামী নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পরপরই বায়তুল মোকারমসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম সাহেবরা হামলা না করার ফতোয়া বা নির্দেশনা দিলে সেটি কার্যকর হতে পারতো।
 
টরন্টোর বিভিন্ন মসজিদে আগামী শুক্রবার জুমার খুতবায় বাংলাদেশে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উপর নিপীড়নের বিপক্ষে ইসলামের নির্দেশনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমামদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

টরন্টো হিন্দু কালচারাল মন্দিরের সাবেক সভাপতি শিবু চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের উপর হামলা নির্যাতনের বিচার না হ্ওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। নিজ দেশে আমরা কেন নিপীড়িত হবো। নিজ দেশের আইন কেন আমাদের সুরক্ষা দেবে না।

নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তার আলোচনায় বলেন, ‘ধর্মের অবমাননা হয়েছে- এমন গুজব শুনেই কেন মানুষ হিন্দুদের উপর হামলা শুরু করে- তার মনস্তাত্তিক দিক নিয়ে গবেষণা দরকার।’ ধর্মীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার প্রয়োজন কী না সে ব্যাপারেও মনোযোগ দেয়ার তাগিদ দেন তিনি।

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর