পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সোমবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দূতাবাসে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালোব্যাজ ধারণ করেন। এ দিন অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন, বাণীপাঠ, আলোচনা, ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দূতাবাস প্রাঙ্গণ শহীদ দিবসের ব্যানার, বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা দিবসের পোষ্টারে সুসজ্জিত করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দূতাবাস প্রাঙ্গণে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে হাইকমিশনারের সভাপতিত্বে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা পর্বে হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ভাষা আন্দোলনে শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা ও দিনটিকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়ে আলোচনা ও এর তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি।
হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলন জোরদার হয় ও ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও শফিউদ্দিনসহ আরও অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে তা চূড়ান্ত রূপ পায়।
হাইকমিশনার আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিলো বাঙালি জাতির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাঙালির নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলন। পরবর্তীতে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই বাঙালিদের যুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
হাইকমিশনার আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সকল দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলা জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনের অধিষ্ঠিত করেন। বাঙালি জাতির এই মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলনই সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষির জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
আলোচনা পর্বের পর শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে, ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক