২১ মে, ২০২২ ০৯:৪৪
ওয়াশিংটনে থিঙ্কট্যাংকের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল

‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের এখানে সফরের দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু’র সাথে তার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসে এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্সের সাথে তার ক্যাপিটল হিলের লংওয়ার্থ অফিসে বৈঠক করেন।

প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’ (আইআরআই) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেয়।

এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। দলের সদস্যরা হলেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, নাহিম রাজ্জাক এমপি এবং কাজী নাবিল আহমেদ এমপি।

বৈঠকসমূহে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শহীদুল ইসলাম-সহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’র (আইআরআই) সাথে একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেয়। আইআরআই-এর প্রেসিডেন্ট ড. ড্যানিয়েল টুইনিং আইআরআই পক্ষে নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে আইআরআই-এর এশিয়া বিভাগের পরিচালক জোহানাকাও, ডেপুটি ডিরেক্টর রোন্ডামেস, সহযোগী পরিচালক ম্যাট কার্টার, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোহুল্লাহ নিয়াজি, বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালের প্রথমদিকে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রতিনিধি দলটি উল্লেখ করেছে যে, সরকারের প্রচেষ্টাকে অন্যান্য সমস্ত রাজনৈতিক দল দ্বারা সমর্থন ও সহায়তা  করা দরকার। কারণ তাদের সকলেরই ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য আইআরআই-এর সহায়তাকে প্রতিনিধি দলটি স্বাগত জানান।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু-র সাথে বৈঠকে সংসদীয় দলটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
অ্যাম্বাসেডর লু কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন এবং এর ভ্যাকসিন বিতরণ ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলে অভিহিত করেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ সহযোগিতাকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে মন্তব্য করে  উভয় পক্ষ আইসিটি খাতে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সিলিকন ভ্যালি ও বাংলাদেশ হাই-টেকপার্কের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছে।

সফররত প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দ্রুত প্রত্যার্পণে বাইডেন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তারা র‌্যাব ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তুলে ধরেন। প্রতিনিধি দলের নেতা ফারুক খান দুদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ওপর জোর দেন।

শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অবকাঠামো প্রকল্পে বৃহত্তর বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডিএফসি অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ এবং চলমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। 

কংগ্রেসম্যান ইভান্সের সাথে বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্র হাউস ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কংগ্রেসম্যান ডোয়াইট ইভান্স ফিলাডেলফিয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তার বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে কংগ্রেসম্যান ইভান্স আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের যুক্তরাষ্ট্রে সফর ওয়াশিংটন-ঢাকা সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তার অব্যাহত সমর্থনের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারিতের আশ্বাস দিয়েছেন।

সংসদীয় প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তার প্রশংসা করেছে। তারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমারের উপর মার্কিন সরকারের চাপ অব্যাহত রাখার জন্য কংগ্রেসম্যান ইভান্সকে অনুরোধ করেছেন।

উভয়পক্ষই ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ব্যাপারে একমত প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর