আসছে নির্বাচনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে শনিবার (১৯ অক্টোবর) অপরাহ্নে নিউইয়র্কে ‘ভোটার রেজিষ্ট্রেশন ড্রাইভ’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্টেট সিনেটর জন ল্যু ছাড়াও ছিলেন মার্কিন রাজনীতিতে সরব ব্যক্তিরা। এই কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক সংগঠন ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক’র প্রেসিডেন্ট শামসুল হক ইউএস সিটিজেন হওয়া প্রবাসীদের কাছে প্রয়োজনীয় ফরম বিতরণের আগে কেন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া জরুরি তা ব্যাখ্যা করেন।
শামসুল হক জানান, অনেক প্রবাসী মনে করেন সিটিজেনশিপ নিলেই ভোটার হওয়া যায়। ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্যে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়-এটা অনেকেই বুঝতে চান না। সেই দায়িত্বটি পালনে আমরা বেশ ক’মাস আগে থেকে কম্যুনিটির উৎসব-আয়োজনে বুথ স্থাপন করে আসছি। এখন পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্থানে ‘ভোটার রেজিস্ট্রেশন ড্রাইভ’ এর আয়োজন করেছি। ৫ শতাধিক প্রবাসীকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া বেশ কয়েক হাজার প্রবাসীকে অবহিত করেছি যে, যাকে খুশি তাকে ভোট দিন-আপত্তি নেই। আপনি ভোট দিলেই স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হিস্যায় পরিণত হবেন। নাগরিক হিসেবে ন্যায্য অধিকারসমূহ আদায়ের পথ সুগম হবে।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার শামসুল হক আরও বলেন, বলতে দ্বিধা নেই যে, কম্যুনিটির অনেকেই মনে করেন যে, সিটিজেন হওয়ার অর্থ হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার সুযোগ সৃষ্টি করা। এমন একটি ভাবনায় বদ্ধমূল প্রবাসীরা ভোটের কদর অনুধাবন করতে চান না। আমরা মাঠে নেমেছি সেই ধারণা পাল্টে দিতে। তাহলে এই নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে বাংলাদেশিরাও বিজয়ী হতে পারবেন।
এই কর্মসূচির অপর আয়োজক সংস্থা ‘কম্যুনিটি ইউনাইটেড ডেমক্র্যাটিক ক্লাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম সনি বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টায় রয়েছি কম্যুনিটির লোকজনকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করতে। এই সিটির অধিবাসীগণের বড় একটি অংশ হচ্ছি বাংলাদেশিরা। কিন্তু নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ায় ন্যায্য হিস্যালাভে সক্ষম হচ্ছি না। সেই দৈন্যতা কাটিয়ে উঠার পথ সুগম করতে আমরা মাঠে নেমেছি।
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু এসময় বলেন, সামনের নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেজন্যেই বাংলাদেশিদের এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছি। আশা করছি সকলেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। কারণ এ বছরের নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশিদের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং প্রথম এশিয়ান আমেরিকান সিনেটর জন ল্যু আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস হচ্ছেন প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান, প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী প্রার্থী। তার বিজয়ের অর্থ হবে অভিবাসীগণের অধিকার সুসংহত হওয়া। শুধু তাই নয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস তৈরি করবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এজন্যে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব হচ্ছে কমলাকে বিজয় প্রদানে সক্রিয় থাকা।
এ সময় ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক’র অপর কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন-বাপার প্রেসিডেন্ট এরশাদ সিদ্দিক বলেন, কেন আমরা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের ক্যাম্পেইন করছি? এর একটাই উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশি তথা এশিয়ানদের মধ্যে ভোট প্রদানের আগ্রহ তৈরি করা। তারা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। ভোট প্রদানের ব্যাপারটি হচ্ছে নাগরিক দায়িত্ব।
এরশাদ সিদ্দিক আরও বলেন, অনেকেই ভোটের গুরুত্ব বুঝতে চান না। অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন করেন যে, ‘আমরা কেন ভোট দেব? আমাদের ভোট তো কাউন্ট হবে না। তিনি জানান, আমরা যদি ভোট না দেই, তাহলে তো অনেকে জানবেই না যে, কম্যুনিটি হিসেবে আমরাও রাজনীতি ও প্রশাসনে ভূমিকা রাখছি। এছাড়া ভোটে অংশ নিলেই প্রবাসীদের গুরুত্ব বাড়বে প্রশাসনে।
জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় আসা প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে উৎসাহিত করার এই কর্মসূচিতে আরও ছিলেন ‘কম্যুনিটি ইউনাইটেড ডেমক্র্যাটিক ক্লাব’ এর প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল হোসেন, মূলধারার রাজনীতিক জয় চৌধুরী, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট খালেদুজ্জামান প্রদীপ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন হচ্ছে ২৬ অক্টোবর। যারা ইতিমধ্যেই সিটিজেন হয়েছেন তারা ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন অনলাইনেও।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ