নিরাপত্তাহীন নগরীতে এবার আমার আত্মীয়া খুন। স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী, ২৪ বছরের মেয়েটির নাম আফসানা ফেরদৌস। আমার বড় ফুপুর বড় মেয়ের নাতনি। মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজির স্থাপত্যবিদ্যার শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিল।
গত শনিবার রাতে অপরিচিত মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে আফসানার মাকে জানানো হয়, আফসানার লাশ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। এরপর আফসানার মা ঠাকুরগাঁ থেকে আত্মীয়স্বজনদের বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে আফসানার মামা ও অন্যান্য স্বজনেরা দ্রুত ধানমণ্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু সেখানে লাশ নেই।
পরে অপর একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে থেকে এবার জানানো হয়, আফসানার লাশ মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে। সবাই ছুটে যায় আল-হেলাল হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ নামে একটি লাশ কাফরুল থানায় রয়েছে। এরপর কাফরুল থানায় পৌঁছানোর পর আফসানার ছবি দেখালে থানায় ডিউটিরত পুলিশ জানায়, এমন চেহারার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। রাত তিনটায় ঢাকা মেডিকেল মর্গে আফসানার লাশ শনাক্ত করে ওর মামা এবং কাজিনরা।
রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে আফসানার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ের রুহিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওর শোকার্ত মা-বাবা সেখানেই থাকেন।
যারা লাশ দেখেছে, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা মেয়েটিকে ধর্ষণের পর রশির মতো কোন কিছু গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণে একাধিক ব্যক্তি জড়িতও থাকতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।
আল-হেলাল হাসপাতাল সূত্রে যা জানা গেছে তা এরকম, গত শনিবার বিকেলে দুইজন যুবক সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে হাসপাতালের সামনে আসে। এ সময় তারা জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির জন্য স্ট্রেচার নিয়ে আসতে বলনি। হাসপাতালের লোকজন রোগীকে স্ট্রেচারে তুলে ভিতরে নেয়ার সময় যুবকেরা সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে আসছি বলে সরে পড়েন। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, হাসপাতালে আসার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মেয়েটির গলার নিচের দিকে গভীর দাগ দেখা যায়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাফরুল থানাকে জানায়। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এরপর হত্যা মামলা দায়ের করবে পুলিশ।
সাইকের ছাত্র-ছাত্রীরা আফসানা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে। মেয়েটির বন্ধু-বান্ধবরা ধারণা করছে, ওর কাছের বন্ধুরাই এ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
আমাদের পরিবারের সবাই শোকে কাতর হয়ে পড়েছে। আফসানার কানিকশালগাঁ এখন গভীরভাবে শোকার্ত। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অনুরোধ তারা যেন আল হেলাল হাসপাতাল, কাফরুল থানা ও সাইকের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে একটি শক্তিশালী প্রতিবেদন ছাপান খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার করতে।
এ সমাজে এভাবে আর কতদিন আমাদের মেয়ে-বোনেরা এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হবে বলতে পারেন কেউ?
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ