২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২০:৪৬

বলাকায় দস্যুবধ রহস্যের গভীরে

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী:

বলাকায় দস্যুবধ রহস্যের গভীরে

বাংলাদেশ বিমানের 'ময়ূরপঙ্খী' উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই ময়ূরপঙ্খীতেই উড়াল দিয়ে পাইলটকে জিম্মি করে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী শেষ পর্যন্ত কথা বলতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথেই! বাংলার কমান্ডোরা কৌশলে বধ করলেন তাকে। প্যারা কমান্ডো, নৌ কমান্ডো, সোয়াতসহ যৌথকমান্ডকে স্যালুট জানাই দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য। এভাবে মাত্র ৮মিনিটের অভিযানে যাত্রী ও ক্রুসহ প্রায় দেড়শ প্রাণ রক্ষা আর প্রায় চার ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সমাপ্তির এমন সফলতা নজিরবিহীন। 

তবে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরের দিনে এমন বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টা ও কথিত "মাহদী"র আবির্ভাবের শানে-নযুল ভাবিয়ে তুলতেই পারে জনতাকে! শুরু থেকেই ঘটনাটি ক্রমশ যেন রহস্যের গভীরে যেতে বসেছে। নাম-পরিচয় থেকে সহযাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের বয়ানে বেড়েছে রহস্যময়তা।

মাহমুদ পলাশ, পলাশ আহমেদ কিংবা মাহিবি জাহান! কিংবা নায়িকা সিমলার বন্ধু বা স্বামী কিংবা ব্যর্থ প্রেমিক বা 'মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক' যে নাম-পরিচয়েই রহস্যবৃত এই যুবককে (নিহত বিমান ছিনতাইকারিকে) নতুন নতুন করে চেনা হোক না কেন, ঘটনাটি হালকাভাবে উড়িয়ে দেয়ার কোন কারণ নেই। 

কোন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন, আর কেউ বলছেন 'তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী'। কেউ বলছেন তার হাতে পিস্তল ছিল আর তা দিয়ে অভিযানের সময় গুলিও ছোঁড়া হয়। আবার কেউ বলছেন সেই পিস্তলটি ছিল খেলনার। 
 
এদিকে, এই যুবকের ফেসবুক ওয়ালে দেয়া একাধিক অস্ত্র সম্বলিত ছবি দৃশ্যমান। তার সাথে যদি খেলনা পিস্তলই ছিল তবে প্রশ্ন উঠে এও, তবে কী সিমলার প্রেমিকের শক্তি এতোই বেশি যে- খেলনার পিস্তল থেকেও গুলি বের হয়? প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাওয়ার বিষয়টিও যদি সত্যও হয় তবে একথা ভাববার অবকাশ নেই যে, প্রেমিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই প্রধানমন্ত্রীর স্মরণাপন্ন হতে চাইছিল এ যুবক। ফেসবুক পোস্ট ছিল– ‘ঘৃণা নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে।’ এই ঘৃণা কী নিছক প্রেমিকার প্রতি, না কোল দল বা মতাদর্শের?
 
উন্নয়ন অগ্রগতির চ্যালেঞ্জ আর রোহিঙ্গা-মিয়ানমার ইস্যু এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের থাবা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে নিয়ে যখন প্রতিবেশী ও দূর প্রভাবশালী রাষ্ট্রশক্তি উৎকন্ঠায় তখন এই ঘটনায় ভাবনার জগতে এমন নাড়া!
 
চকবাজারের আগুনের হল্কায় ৭০ জনের মৃত্যু শোক না কাটতেই এমন ঘটনা। ঘটনাটির মাত্র ক'ঘন্টা আগেই চীনের শতভাগ ঋণ সুবিধায় প্রায় হাজার কোটি টাকায় নেয়া 'বঙ্গবন্ধু টানেল'র বোরিং(খনন) কাজের সফল উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। একই সাথে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েরও উদ্বোধন করেন তিনি। এই তো কিছুদিন আগেই চীন থেকে সাবমেরিন এনে এই চট্টগ্রামের পতেঙ্গাতেই তার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গোপসাগরের সীমানা বৃদ্ধি হয়ে মানচিত্রের সাথে যুক্ত হয়েছে যেন আরেকটি বাংলাদেশ ভূমি আমরা পেয়েছি সমুদ্রসীমা বিজয়ের আন্তর্জাতিক আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। মহাকাশও বিজয় করেছে বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার। এমন অর্জনের ধারাবাহিকতায় টানেলের যুগে প্রবেশের মত সাফল্যের নতুন পালক যুক্ত হওয়ার দিনেই বা কেন হবে বিমান ছিনতাই! এ ঘটনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অদম্য অগ্রযাত্রা নিয়ে চিন্তাশীল মনে নানা প্রশ্ন আসতেই পারে। 

ভূ-রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন তাদের কিংবা উপমহাদেশের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে, প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নেয়া আর বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় সাফল্যে নিয়ে যাবার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আকাশপথে চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে না যেতেই বিমানের এই দস্যু হানা কেন? তবে কী এই দস্যু হানা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধ শক্তির কাজ? এর নেপথ্যে সরকার বা প্রশাসনকে কোন পক্ষের বার্তা বা সতর্কতা কিংবা হুমকি নয়তো ?

প্রশ্ন উঠতেই পারে নিরাপত্তা চোখ ফাঁকি দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এই দস্যু অস্ত্র বা খেলনাঅস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করলোইবা কীভাবে? কে বা কারা সেক্ষেত্রে তার সহযোগী? তাকে শেষপর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করতে পারলে বের হয়ে আসতো সত্যাসত্য । তা যখন সম্ভব হল না তখন সতর্কতাই জরুরি। প্রয়োজন প্রশাসন, দল ও নাগরিক সচেতনতা।
 
লেখক: সহ-সভাপতি, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

সর্বশেষ খবর