৮ মে, ২০১৯ ১৫:১২

অগ্রগতির বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বিস্ময়

অধ্যক্ষ সুমনা ইয়াসমিন

অগ্রগতির বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বিস্ময়

বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়। এদেশের প্রতি যারা বৈরী মনোভাব পোষণ করে সেই পাকিস্তানও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুকরণীয় বলে অভিহিত করছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনরাও সুযোগ পেলেই বলছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা। 

পাকিস্তানের খ্যাতনামা পদার্থবিদ পারভেজ হুদভয় রাজনীতি ও সামরিক নীতি থেকে স্বাস্থ্য খাত- সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃষ্টিকাড়া অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম কারণ হলো, দেশটি নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও উন্নয়ন থেকে দৃষ্টি সরায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান উন্নয়নের চেয়ে ভারতকে টেক্কা দিতে গিয়েই নিজেকে নিঃশেষ করে ফেলছে। 
পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় ‘কেন পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে’ শিরোনামের এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালে ‘শূন্য’ থেকে ২০১৮ সালে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারে। অন্যদিকে একই বছর পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ছিল আড়াই হাজার কোটি ডলারেরও কম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তানি ওই খ্যাতনামা পদার্থবিদ বলেছেন, বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ পাকিস্তানের চেয়ে চার গুণ বেশি। বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণও পাকিস্তানের অর্ধেকের চেয়ে কম। দুই দেশের এসব পার্থক্যের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, জনগণের উন্নয়ন পাকিস্তান সরকারের কাছে কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। নীতিনির্ধারকরা সামরিক দিক থেকে ভারতকে টেক্কা দেওয়াই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করেছেন। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি উদার। 
পারভেজের মতে, পাকিস্তানের জন্য যা শিক্ষণীয় তা হলো, ট্যাংক বা ক্ষেপণাস্ত্রের দিক থেকে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া অসম্ভব। ছাদের ওপর থেকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে তলে তলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা সৌদির নির্দেশনা মেনে চলে পাকিস্তান কিছুই করতে পারেনি। পাকিস্তানকে অবশ্যই ‘যুদ্ধের অর্থনীতি’ বর্জন করে ‘শান্তির অর্থনীতির’ পথে হাঁটতে হবে। পাকিস্তানি পদার্থবিদদের মূল্যায়ন পাকিস্তানি শাসকদের শুভবুদ্ধির বিকাশে ভূমিকা রাখলে তাতে সে  দেশের মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমন দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও সহাবস্থানের  ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে উঠবে।
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়। গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’ অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশ একদিন পাকিস্তানের অংশ ছিল। ১৯৭১ সালে এই বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেকটাই শূন্য হাতে। সেই বাংলাদেশ আজ বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে। নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার ২০ লাখ কোটি টাকা। গত এক দশকে দেশের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার যে হারে বিনিয়োগ করেছে, তাতে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধের মামলায় বিজয় থেকে শুরু করে অনেক অর্জন গত এক দশকে। রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন যেকোনো বাধা পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। দেশের সড়ক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসেছে জোয়ার। অর্থনৈতিক সক্ষমতায় বাংলাদেশ যে আর পিছিয়ে নেই, তা জেনেছে বিশ্ব। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আজ বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ড বাংলাদেশ বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। আয়তনে বিশ্বের ৯৪তম দেশ হয়েও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং ধান ও মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ শীর্ষ অবস্থান বাংলাদেশের। দেশের বাজেটের আকার বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২৪ শতাংশে। বেড়েছে রপ্তানি। মাত্র দুই কোটি ডলার রিজার্ভ ছিল যে দেশের, সেই রিজার্ভ এখন তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশ। এখন প্রয়োজন এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়া।
গত ১০ বছরে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার মানদণ্ড পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪৩, আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইসওয়াটার কুপার হাউস (পিডাব্লিউসি) বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ, ২০৫০ সালে আরো পাঁচ ধাপ এগিয়ে আসবে ২৩ নম্বরে। বাংলাদেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ উল্লেখ করে বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার বলেছে, এশিয়ায় টাইগার বলতে এত দিন সবাই হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে বুঝত। এর বাইরেও এশিয়ায় একটি ইমার্জিং টাইগার রয়েছে, যেটি হলো বাংলাদেশ। গত জানুয়ারি মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’-এ ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।

এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি খাতগুলো সচল রেখে আধুনিকায়ন করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নতুন শিল্প, যেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার ভূমিকা কাম্য।

লেখক: অধ্যক্ষ, উত্তরা ইউনাইটেড কলেজ ও সভাপতি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর।

সর্বশেষ খবর