‘মা’ হচ্ছেন ভালোবাসা ও নির্ভরতার ছায়াবৃক্ষ। মা সন্তানের শক্তির উৎস, প্রেরণার উৎস, ভবিষ্যৎপথ প্রদর্শক। মা সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর সকল সম্পর্কের উর্ধে। মা-দের সম্মান জানানোর দিন মা দিবস।
আমাদের সমাজ বাস্তবতায় মা দিবসের মাহাত্ম্য অনেক বেশি। সময়ের তাগিদে মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর ও চিরন্তন মমত্ববোধ, শ্রদ্ধা আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই শিথিল হয়ে আসছে। একদিকে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সন্তানকে থাকতে হচ্ছে মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে, অপরদিকে সন্তানের অবহেলার শিকার হয়েও অনেক মা বাবার ঠিকানা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম বা একাকী নিঃসঙ্গ নিবাস।
পৃথিবীতে মায়ের সম্মান সবার ওপরে। প্রতিটি মায়ের সন্তান নিরলস সাধনায় ব্রতী হোক, মায়ের দুধের ঋণ শোধে আমৃত্যু নিজেকে উৎসর্গ করুক। বিশ্ব মা দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রথম ‘মা দিবস’-এর প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’, যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশে উদযাপন করা হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।
মা দিবস উদযাপনের ধারণাটি প্রথম মাথায় আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের। তবে ‘আধুনিক’ মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। শান্তিকর্মী অ্যান জার্ভিস যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকার নারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা নিয়ে প্রচার ও কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি নারীদের সংঘবদ্ধ করেন এবং আমেরিকার কিছু জায়গায় প্রচারণা চালান টমেটোর চারা যেন সবাই মা দিবসের পরই রোপণ করেন। তার আগে নয়। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারী অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে ‘মা দিবস’টি উদযাপন করার জন্য।
সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রবিবার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করলেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তার হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে মা দিবস পালিত হয়। কারণ দিবসটি উদযাপনের সূত্রপাত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তবে বেশীর ভাগ দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিনটি পালিত হয়।
অনেক দুঃখের সঙ্গে বলছি, মা দিবসে সবাই তাদের মাকে নিয়ে বিভিন্ন ছবিেফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এগুলো দেখে আমার খুবই কষ্ট অনুভব হচ্ছে। আমি হতভাগা আমার মায়ের সাথে কোন ছবিই সংগ্রহে রাখতে পারি নাই। আমার মা ২০০১ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে মারা গেছেন। আমি প্রতিনিয়ত মায়ের অভাব অনুভব করছি। মনে হয় মা ছাড়া আমার দুনিয়া অন্ধকার। মায়ের মত আপন এই দুনিয়ায় আর কেহই নয়। তাই আজকের দিনে সবাইকে বলব যাদের মা আছে তারা কখনই মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমার অভাগিনী মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন পরপারে আমার মা শান্তিতে থাকেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সভাপতি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন ও সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন