১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০৯:৪৭
গল্প

ভালোবাসার সীমানায় রংধনু

আব্দুল্লা রফিক

ভালোবাসার সীমানায় রংধনু

প্রতীকী ছবি

এলজিইডির হেড অফিসে নিজের রুমের জালানা দিয়ে উদাস মনে তাকিয়ে আছে পাশের বিল্ডিং এর ছাদে, বাহারি রকমের ফুলের সমারোহে লাল গোলাপ গাছটির দিকে দৃষ্টি যেন আটকে আছে .... অনেকক্ষণ .... গোলাপ ফুল দেখলেই মনের ভিতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে যায় ....

জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেবের খাতা যেন খুলে যায়, আশফাক বুয়েট থেকে পাশ করে এই অফিস এ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছে প্রায় পাঁচ বছরI

হঠাৎ অফিস এর রিসেপশন ডেস্ক থেকে টেলিফোন এ বাস্তবতায় ফিরে এল আশফাক, ওপাশ থেকে, ‘স্যার একজন ভদ্র মহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়’

‘কি নাম ভদ্রমহিলার? কোথা থেকে আসছে?’

‘স্যার কিছুই বলছে না, আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে বলতে চায়’

‘ওকে, আমার রুমে পাঠিয়ে দাও‘

কয়েক মিনিট পর রুমে প্রবেশ করলো ‘সোমা’। অবাক হয়ে দেখছে আশফাক, মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না, পরিপূর্ণ একজন মহিলায় পরিণত হয়েছে সোমা, আকাশী রং শাড়ির সাথে কপালের টিপ ..ভীষণ সুন্দর লাগছে I ‘স্যার! কেমন আছেন?’ সোমা আশফাকের নার্ভাস ভঙ্গি মনে হলো বেশ এনজয় করছে...!

‘স্যার আপনি ঠিক আগের মতই আছেন, দেখেন তো আমি এখনো বাচ্চা মেয়ে আছি কিনা? বসতে বলবেন না ?’ আশফাক সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ‘অবশ্যই বসো! বসো! তুমি কবে দেশে ফিরলে? কেমন আছো ? সেই যে গেলে আর কোনো যোগাযোগ হলো না।’

‘স্যার আমি কিন্তু অনেকগুলো চিঠি লিখেছি কিন্তু কোনো উত্তর দেননি। আমার ধারণা আপনি সবগুলো চিঠিই পেয়েছেন।' গড় গড় করে সোমা তার জমানো কথা বলেই চলেছে...
ততক্ষণে আশফাক বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠলোI

‘স্যার আপনি কিন্তু আমার সব প্রশ্নের উত্তর এখনো দেননি?’

‘বাচ্চা মেয়ে একটা !’ - খুব ছোট্ট আশফাক উচ্চারণ করলো

‘স্যার আমি এখনো বাচ্চা মেয়ে?’

‘শাড়িতে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে’

‘তাই নাকি? এ জাতীয় কথা আপনি আবার বলতে পারেন স্যার ? ’ আরো অনেক কথাই বলছে সোমা, থামছেই না যেন!

***

আশফাক ফিরে গেলো তার বুয়েট লাইফ এ …মনে হচ্ছে এইতো সেদিন, আশফাক সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে, তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে সোমাকে পায় ছাত্রী হিসাবে ... দশম শ্রেণীর ছাত্রী ... ভিকারুন্নেসা স্কুলে পড়েI সোমাকে পড়ানো শুরু করার আগে আশফাককে ওর বাবা ও মার কাছে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে::  ‘সোমা আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে, বাচ্চা মেয়ে, আমরা চাই তুমি ওর সায়েন্স এর সাবজেক্টগুলো পড়াবে... বুয়েটের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র তুমি নিশ্চয় খুব ভালো পড়াবে, এবিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই! আমরা চাই ও ইন্টারমিডিয়েটে পরীক্ষার পর বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের ব্যবসার হাল ধরবে কারণ সে আমাদের ছেলে এবং মেয়ে দুটোই I আমরা, আমি এবং সোমার মা, একটা কথা খুব পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই তোমরা কোনো ভাবেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে না এবং পড়ানো শুরুর আগে এবিষয়ে তোমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে... সোমার পড়াশুনার কোনো সমস্যা আমরা মেনে নিবো না’ !

তুমি কি বলো আশফাক ?

‘আমি একশত ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে প্রতিজ্ঞা করছি - আপনারা যা বলছেন তার একচুল নড়াচড়া হবে না’

এরপর পড়ানো শুরু,,, প্রথম দিন সোমাদের বাসায়...

‘স্যার আমার যে পড়তে একদম ভালো লাগে না!’

‘কি করতে ভালো লাগে?’

‘ঘুরতে, আড্ডা দিতে’

‘বই বের করো, দেখি কোথায় তোমার দুর্বলতা?’

‘স্যার আজ প্রথম দিন, কোনো পড়াশুনা নয়’

‘তাইলে আমি চলে যাই?’

‘না স্যার, গল্প করবো’

‘বাচ্চা মেয়ে একটা, তাহলে শিশুতোষ থেকে একটি গল্প শুনাই’

‘আপনাদের বুয়েটের গল্প বলেন’

হঠাৎ ওর মা আসাতে আশফাক বলে উঠলো, খালাম্মা আজকে আমি যাই, পরের দিন থেকে পুরোদস্তুর পড়াশুনা শুরু হবে’

‘তোমার ছাত্রী কেমন?’

‘মনে হচ্ছে ভালো ছাত্রী। কিন্তু একদম পড়তেই চায় না, তোমার খুব কষ্ট হবে।’

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিলো……!

দ্বিতীয় দিনও সে পড়াশুনায় মনোযোগ দিচ্ছিলো না... আর এভাবেই দিন গড়িয়ে যাচ্ছিলো... সোমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা এগিয়ে আসছিলো... একপর্যায়ে সে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়ে গেলো... আসলে সোমা ছিল বেশ মেধাবী ছাত্রী, আশফাকের বেশ বেগ পেতে হয়েছে ওকে পড়াশুনায় মনোযোগী করাতেI দিন গড়িয়ে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলো একসময় ম্যাট্রিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে এলো।

হঠাৎ সোমা বায়না ধরলো 'স্যার পরীক্ষায় শেষ দিন আপনার সঙ্গে ঘুরবো, না বলতে পারবেন না কিন্তু ! '

'বাচ্চা মেয়ে একটা ! কোথায় যাবো? সবাইতো হাসবে ! তোমাকে নিয়ে শিশু পার্কে যেতে পারি শুধু। কিন্তু তোমার বাবা মার অনুমতি ছাড়া আমি যেতে পারবো না।

'সেটা নিয়ে চিন্তা করেন না আমি মাকে বলে ব্যবস্থা করবো'

শেষের পরীক্ষার একদিন আগে সোমার মা বললো 'আশফাক কাল পরীক্ষা শেষে ওকে একটু সময় দিও, ড্রাইভারকে বলা আছে'
কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো সোমার মার দিকে .... মিন মিন করে উঠলো ..... ‘ঠিক আছে খালাম্মা ....!’
যথারীতি পরীক্ষা শেষে সোমার সঙ্গে দেখা - 'বাচ্চা মেয়ে চলো শিশু পার্কে যাই !'
'স্যার, মার পারমিশন নেওয়া আছে, সব এখন আমার কথামতো হবে'
'কোথায় যাবে শুনি'
'স্যার গাড়িতে উঠেন, প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই! ওখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটাবো, তারপর ডিনার খাবো রেস্টুরেন্ট এ, মা বলেছে রাত ৯টার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে।'
সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে ঢুকেই সোমার পাগলামি যেন কয়েকগুন বেড়ে গেল .... কথার খৈ ফুটছে যেন .... কিছুতেই থামছে না ...
একটি বেঞ্চ দেখে দুজনে বসে পড়ল …I
'স্যার খুব ইচ্ছে করছে .... আপনাকে .... বলেন কিছু মনে করবেন না?'
'কি করতে ইচ্ছে করছে বলতো?'
'কিছু বুঝে উঠার আগেই সোমা আসফাককে জড়িয়ে ধরলো .... স্যার আপনি খুবই ভালো মানুষ ....!'
'বাচ্চা মেয়েটা করে কি? ভুল মানুষকে জড়িয়ে ধরেছো মেয়ে .... ছাড়ো ....! আমি শুধুই তোমার টিচার ... অন্য সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো ....!'
'কেন স্যার?'
'কারণ তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে, তোমাকে পড়াশুনা করে অনেক দূর যেতে হবে'
'স্যার আপনি পাশে থাকলে আমার পড়াশুনার কোনো ক্ষতিই হবে কারণ আপনি আমার অনুপ্রেরণা ...'
'ঠিক আছে অনেক পাকামি করেছো, চলো কোনো রেস্টুরেন্ট এ যেয়ে বসি'
'চলুন স্যার .... সরি!’
'কেন বলতো?'
'আপনাকে খুব বিব্রত করলাম'
'নারে বাচ্চা মেয়েটি, তুমিতো আমার সেরা ছাত্রী'
'কথা বল... তুমি চুপ থাকলে আমার ভালো লাগবে না'
'সোমা কিছুটা চুপসে গেলো'
রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে সোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আশফাক বুয়েটের হলে ফিরল I
সময় পেরিয়ে একসময় রেজাল্ট বেরিয়ে গেলো .... সোমা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে .... ওর বাবা মা খুব খুশি
সোমার মা ওদের বাসায় দাওয়াত করলো ওর উদযাপন করার জন্য ....
যথারীতি আশফাক ওদের বাসায় গেল ... সোমা ওর অনেকগুলো কাজিন এর সঙ্গে পরিচয় করে দিলো .... সবাই মিলে ওর রুমে গেল ... বোঝা গেলো ওর কাজিনরা একটু নিরিবিলি পরিবেশ তৈরী করে দিলো….
'স্যার আপনি কি জানেন আমি আপনাকে কতটা পছন্দ করি?'
'জানি তো, পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে তুমি খুব কেয়ার করতে'
'না স্যার ... আমি অন্য কিছু বলছি'
'বাচ্চা মেয়ে একটা .... আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ .... আমি তোমার জন্য ভুল মানুষ .... তোমার জন্য অনেক স্মার্ট, সুন্দর, শিক্ষিত ছেলে অপেক্ষা করছে'
'কেন ভুল মানুষ বলছেন স্যার?'
'এর উত্তর আমি তোমাকে দিবো তোমার পড়া শেষ হওয়ার পর, যদি তখন দেখা হয়! আজ না !'
'ঠিক আছে স্যার, কিন্তু আমি আপনাকে সব সময়ই বলবো,"আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি, জানি এটা একতরফা তারপরেও বলবো!'
'বাচ্চা মেয়ে, বলে কি? চলো তোমার বাবা মা সঙ্গে দেখা করি...!'

তারপরেও আরো কয়েক ঘণ্টা সোমাদের বাসায় রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরল আশফাক .... নিজের পড়াশুনায় মনোযোগ বসাতে পারছে না কিছুতেই ... না মনকে কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না... সোমার বাবা মার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কোনোভাবেই ভঙ্গ করা যাবে না... প্রশ্নই ওঠে না!

তারপর সোমার ইন্টারমিডিয়েটের পড়াশুনা শুরু হয়ে গেছে। সে মাঝে মধ্যে পাগলামি করলেও পড়াশুনার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে ... আর একারণেই আশফাক টেনশন ছাড়া নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারছে….I
দেখতে দেখতে ওর ফার্স্ট ইয়ার শেষ হয়ে এলো .... একদিন হঠাৎ কলেজ ড্রেস পরে বুয়েটের হলে এসে হাজির
‘স্যার চলেন আপনাকে খাওয়াবো’
‘তুমি যে কলেজ থেকে এসেছো, তোমার মা জানলে কি হবে বলতো?’
‘স্যার আমি যে আপনাকে খুব ভালোবাসি অবশ্য একতরফা ভাবে .... আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করলো ... তাই ছুটে এলাম .... আপনি অখুশি হবেন জেনেও!’
‘পাগল মেয়েটা বলে কি? বাচ্চা মেয়ে একটা ! তুমি তো বুঝতেই পারছো না যে আমি তোমার জন্য কোনোভাবেই সঠিক ব্যক্তি নই!’
‘কিছুই বুঝতে চাই না, আমি শুধু আপনাকে কিছুক্ষণ দেখেই চলে যাবো ‘
‘পাগল একটা মেয়ে’
আশফাকের মনে এক ধরনের ভয় কাজ করছে যদি ওর বাবা মা জেনে যায় ... তখন কি হবে?
যাই হোক তাড়াতাড়ি করে লাঞ্চ সেরে সোমাকে রিকশায় উঠিয়ে দিলো ….I

এরপর দেখতে দেখতে সোমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সময় হয়ে এলো, পাশাপাশি টোফেলের প্রস্তুতি নিয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার পর টোফেল দিবে, পরীক্ষায় ভালো করবে এ ব্যাপারে আশফাক অনেকটাই নিশ্চিত I
পরীক্ষার শেষ দিন আবারও পাগলামি। সোমার সাথে সময় কাটাতে হবে। ওর মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রেখেছে... আর একটা বিষয়ে আশফাক 'উত্তর খুঁজছে - সোমার মা'র অনুমতি দেয়ার কারণ' I 

এবার খাবার সাথে নিয়ে লং ড্রাইভ করে চন্দ্রায় পার্কে .... ওখানে পৌঁছার পর ওর পাগলামি কয়েকগুন বেড়ে গেলো... এই পার্কে সোমা আগেও এসেছে  .. একটা বটবৃক্ষের নিচে যেয়ে তারা দুজনে বসে পড়লো .... কথার মালা গেঁথেই চলেছে ....!
'স্যার আমাকে একটা কথা দিতে হবে'
'কি কথা বলোতো ?’
'বাইরে গিয়ে পড়া শেষ করা পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করবেন'
'বাচ্চা মেয়েটা বলে কি! আমি কেন অপেক্ষা করবো ? আমি তোমার জন্য ভুল মানুষ  ... ভুল মানুষকে কখনো ভালোবাসতে নেই'
'স্যার প্লিজ প্রতিজ্ঞা করেন! প্লিজ! প্লিজ!'
'ঠিক আছে  ... আমাকে কথা দাও.... তুমি তোমার পড়াশুনাকে অগ্রাধিকার দিবে'
'থ্যাংক ইউ স্যার'
বলেই সোমা আসফাককে শক্ত করে জাপটে ধরলো …..!
'এই যে মেয়ে  .... আমাকে ছাড়ো  .... তোমার মা বাবা জানলে  .... সবকিছু ওলোটপালট করে দিবে...'
'জানে জানুক ! তাতে আমার কি! আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি ! আমি আপনার কাছে ফিরে আসবো !'

'কিন্তু মেয়ে তোমার তো আমার অবস্থান জানা উচিত'
'কিছুই জানতে চাই না স্যার'
'পাগল মেয়ে একটা... তোমার মত পাগল আর কেউ এই পৃথিবীতে আছে কিনা আমার সন্দেহ'
'আমি তো শুধু আপনার জন্যই পাগল স্যার'
এভাবে আরো বেশ কিছুক্ষণ পার্কে কাটিয়ে সোমাকে বাসায় নামিয়ে বুয়েট এর হল এ আসলো আশফাক.... নিজের পড়াশুনায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছে... কিন্তু কিছুতেই পারছে না ... সোমার বাবা মা কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙার কোনো সুযোগ-ই নেই!  আশফাক সিদ্ধান্ত নিলো নিজের পড়াশুনার দোহাই দিয়ে সোমাকে দূরে দূরে রাখার চেষ্টা করবে I

একসময় টোফেল পরীক্ষা দিলো সোমা, বেশ ভালো স্কোর করলো ... ইন্টারমিডিয়েট এ রেজাল্ট ও ভালো হলো... আমেরিকায় এ ভর্তি হলো... যাওয়ার টিকেট কনফার্ম হয়ে গেলোI  সোমা জেদ ধরলো এয়ারপোর্টে যেতে হবে ...

কিন্তু  আশফাক এয়ারপোর্ট এ যাবে না  ... নিজের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে ... সোমার বাড়াবাড়ি ওর বাবা মা চোখে পড়ে যেতে পারে! সিদ্ধান্ত নিলো  ... ঐদিন ঢাকার বাইরে চলে যাবে ... এভাবেই সব ঠিক হয়ে থাকলো...!
কিন্তু কে শোনে কার কথা? ওর ফ্লাইট এর আগের দিন বুয়েট এর হল এ এসে হাজির  ....!

'স্যার আমি আপনাকে না দেখে ফ্লাই করবো তাই কি হয় ? আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন এটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমি যে আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি! বলেই আশফাকের বুকের যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং অঝোরে চোখের পানি ফেলতে শুরু করলো!’
'বাচ্চা মেয়ে একটা, আমাকে ছাড়ো! তোমার জন্য আমার শুকামনা! পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে আসো দেখা হবে !'
একসময় সোমা বিদায় নিলো.... কিন্তু আজ কেন জানি আশফাক ছটফট করছে ... পাগল মেয়েটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে কেন? কোনো উত্তর নেই ...!
সোমা চলে যাওয়ার পর প্রতি মাসে একটি করে চিঠি লিখতো ... প্রত্যেকটা চিঠি স্তরে স্তরে সাজানো আছে  ....!

***
'স্যার কি এত ভাবছেন? স্যার! স্যার! '
সোমার উচ্চ কণ্ঠে আশফাকের ভাবনায় ছেদ পড়লো... ফিরে তার এলজিইডি অফিস রুমে …!
সত্যি সত্যিই সোমা তার সামনে বসে হাসছে…  সময় কত দ্রুত চলে গেছে … আমেরিকা থেকে পড়া শেষ করে ফিরে এসেছেI

'সরি! এতক্ষণ স্মৃতির পাতায় চোখ বুলাচ্ছিলাম!  বল সোমা এখন তোমার পরিকল্পনা কি? তুমি এখন পরিণত মানুষ! কয়েক দিন পর ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব হয়ে যাবে!'

'স্যার এই প্রথম বোধহয় আপনি আমার নাম ধরে সম্বোধন করলেন...স্বীকার করলেন আমি বড় হয়ে গেছি ..!'
'স্যার আপনার চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ান প্লিজ!'
'কেন বলতো ?'
'দাঁড়ান না প্লিজ '
আশফাক চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতেই সোমা আশফাকের একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো, 'স্যার আমি জানি আপনি আমাকে ভীষণ পছন্দ করেন, এখন স্বীকার করেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন।'
'এ পাগল মেয়েটা বলে কি ? তোমার বাবা মা আমাকে কিছুতেই মেনে নিবে না? তোমার আর আমার অবস্থানের অনেক পার্থক্য '
' এটা কোনভাবেই সম্ভব নয় .... তোমার বাবা মা কাছে আমি প্রতীজ্ঞাবদ্ধ ... আমার ভালোবাসার কি বা মূল্য আছে তোমার বাবা মা'র কাছে। শোনো মেয়ে আম্র চেয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলো, আমি আশফকের কথা ভুলে যাও'
'স্যার, আমি যা বোঝার বুঝে গেছি'
'বলেন কবে আসছেন আমাদের বাসায়?'
'আবারও তোমার পাগলামি ... কেন যাবো ? আমি তো তোমার জন্য ভুল মানুষ ! অনেকবার বলেছি।'
'শুধু একবার আসেন, আর বলবো না'
'ঠিক আছে সোমা আমি যাবো তবে তোমাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে তুমি কোনো সিনক্রিয়েট করবে না তোমার বাবা মা'র সামনে'
'ঠিক আছে স্যার ! প্রমিজ !'

সোমা ওর মা'র সাথে কথা বলে প্রায় এক সপ্তাহ পর ওদের বাসায় ডিনার খেতে যেতে বললো ...।

তারপর হাজির হলো সেই দিন ... প্রচণ্ড ভয়, সংশয় মনের উপর ভর করেছে ... যাওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা?  ইত্যাদি ...

অফিস শেষ করে সন্ধ্যার একটু পর ওদের বাসার দরজায় নক করলো আশফাক  ....
হাসি মুখে ওর মা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো 'কেমন আছো আশফাক, আমাদেরকে তো ভুলেই গেছো  ... তোমার চাকরি কেমন চলছে  ... বলতে বলতে ওদের ড্রয়ইং রুমে যেয়ে দাঁড়ালো, সোমার বাবার সাথে কুশল বিনিময় সোফায় বসতে যাবে ... 
এমন সময় ওর মা  বললো 'যাও সোমা রুমে আছে... ভিতরে যাও'
'খালাম্মা  ... আশফাক বিশ্বাস করতে পারছে না ... আমতা আমতা করতে থাকলো ....'

সোমার মা মিট মিট করে হাসছে এবং আবার বলে উঠলো, 'বোকা ছেলে ! আমরা সব জানি! যাও সোমার রুমে!'

ধীরে ধীরে সোমার রুমে ঢুকে গেলো...
'স্যার এখন বলেন আপনি আমাকে ভলোবাসেন।'
'বাচ্চা একটা মেয়ে... ' বলেই সোমাকে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরলো আশফাক। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর