১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:০৪

ভ্যালেন্টাইন ডে’র স্মৃতি

নাইম আবদুল্লাহ

ভ্যালেন্টাইন ডে’র স্মৃতি

প্রতীকী ছবি

দেশ থেকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে এসেছি। সময়টা ক্রিসমাসের আগে আগে। কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছি। ক্যানটাকি ফ্রাইড চিকেন (কেএফসি) থেকে ইন্টারভিউের জন্য ফোন এলো। স্টোর ম্যানেজার রিচার্ড গ্যালের মুখোমুখি হয়েছি।

আমি কি তোমাকে ‘আবু’ নামে ডাকতে পারি। আমি বিষণ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। রিচার্ড বিষয়টা বুঝতে পেরে খানিকটা ব্যাখ্যার সুরে বললো, আসলে আমরা নামের প্রথম শব্দটা ব্যবহার করে ডাকতেই বেশি স্বাছন্দ বোধ করি। তাছাড়া তোমার সারনেমটার উচ্চারণও একটু কঠিন। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। রিচার্ড আমার সিভি দেখে ইন্টারভিউ শুরু করলো-

তুমি কেন কেএফসি’তে কাজ করতে আগ্রহী? আমার সোজা সাপটা উত্তর। প্লেন থেকে অকল্যান্ডে নেমেই প্রথম কেএফসি দিয়ে লাঞ্চ করেছি। সেই স্বাদ এখনো জিহ্বায় লেগে আছে। 

তোমার কি প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট কিংবা লাইসেন্সে আছে? আমি একমাসের মতো অকল্যান্ডে এসেছি। আমার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিন্তু কোনো গাড়ি নেই। তবে তুমি এই মলের সামনে দাঁড়িয়ে যদি চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডাকো তাহলেই আমি শুনতে পাবো। আই মিন আমি শপিং মলের উল্টা পাশেই থাকি।

রিচার্ড মুচকি হেসে বললো, অভিনন্দন আবু। তুমি আজ থেকে আমাদের সাথে কাজ করবে। আমি প্রথমে তোমাকে কিচেনে কাজের দায়িত্ব দেবো। আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিচেনে কেন? রিচার্ড আমার হতাশার কথা বুঝতে পেরে কাঁধে হাত রেখে বললো, মেট শুরুতে কিচেনে কাজ করলেই তুমি সব প্রডাক্ট গুলোর নাম ও গুনাগুন জানতে পারবে। তারপর ফ্রন্ট ডেস্কে গেলে তুমি সহজেই কাস্টমারদের অর্ডার নিতে পারবে।

তিন শিফটে কাজের রোস্টার থাকে। কখনো সকালে, দুপুরে কিংবা রাতে। প্রথমদিন জেনি’র সাথে কাজ শুরু করলাম। ও আমাকে ফুড প্রিপারেশন ও হাইজিন শিখাবে। তারপর একটা কুইজ পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। জেনি অকল্যান্ড ইউনিতে পড়ে আর পার্ট টাইম কাজ করে। সে খুব হাসি খুশি মেয়ে।

রাতের শিফটে কাজ দিলে আমার খুশি লাগে। কারণ রেস্টুরেন্ট বন্ধের পর যে খাবার অবশিষ্ট থাকে তা আমরা স্টাফরা ভাগ করে বাসায় নিয়ে আসি। আমরা চার বাঙ্গালী বন্ধু একটা বাসায় থাকি। আমার রুমমেটরাও একই কারণে আমার রাতের শিফটে কাজ থাকলে বেজায় খুশি। ওরা ফ্রাইড চিকেন, বার্গার, সালাদ, রুটি, চিপসের অপেক্ষায় গভীর রাত অব্দি জেগে থাকে। প্রথম প্রথম ওরা সবই পছন্দ করতো। আস্তে আস্তে আমদের খাবারের প্রতি বিরক্ত হতে থাকলো। মাস ছয়েক পর কেউ চিকেন ড্রাম সটীক ছাড়া অন্য কিছু ছুঁয়েও দেখতাম না।

জেনি আমার শিফটে থাকলে কিংবা কাজের ব্রেকে অনেক কথা হয়। একদিন অফ ডে’তে ওর গাড়িতে করে আমাকে বাসা থেকে তুলে অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাড়া ক্যাম্পাস দেখায়। ড্রিঙ্ক করায় ক্রিসমাস পার্টি শেষে আমি ওকে রাতে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেই।

আমিও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কাজ কমিয়ে দেই। ওর সাথে মাঝে মধ্যে শিফটে দেখা হয়। এরই মধ্যে জেনি এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি আমরা একদিন সবাই মিলে সেলিব্রেট করি।

অনেক বছর পর আমি অকল্যান্ড হাসপাতালে চাকুরী পাই। রোগীদের ফাইল স্ক্যান করতে গিয়ে জেনি হার্ডসন নামের একটি ফাইলে রাখা তার ডেথ সার্টিফিকেটে আমার চোখ আটকে যায়। সাড়া অফিস জুড়ে তখন ভ্যালেন্টাইন ডে’র সেলিব্রেশন চলছে। চোখ থেকে বেরিয়ে আসা দুফোটা পানি মুছে হল রুমের দিকে এগিয়ে যাই।

লেখক: সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর