৩ মে, ২০২২ ১০:৫১

পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক

ইমরান খান

পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক

ইমরান খান

নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী সিদ্ধান্ত তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত উন্নয়ন সহযোগী ও দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। 

একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সেই অঞ্চলগুলোর জন্য একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের উন্নয়ন, অহংকারের প্রতীক। আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, যোগ্যতা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের ফসল।

পদ্মা সেতুটি সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সাথে যুক্ত হবে। এই সেতু যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। বিশেষত এটি ভুটান, ভারত এবং নেপালের সাথে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে বার্ষিক জিডিপিতে এটি প্রায় ১.২ শতাংশ অবদান রাখবে, দারিদ্র্য হ্রাস করবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াবে। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের দরজা খুলে দিবে এবং চট্রগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানতম স্থলবন্দর বেনাপোলের সাথে সংযুক্ত করবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলটি দেশের প্রায় ২৭ শতাংশ জুড়ে এবং এ অঞ্চলে বাংলাদেশের ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে। ২০১১ সালের এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সমীক্ষায় দেখা গেছে, মূলত দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগের অভাবে এই অঞ্চলটি স্বল্পোন্নত রয়ে গেছে। এ অঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দারিদ্র্যসীমার নিচে জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় পাঁচ শতাংশ বেশি রয়েছে।

জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিলাগুলোর সাথে ঢাকার যাতায়াত সময় ১০ শতাংশ হ্রাস পেলে অর্থনৈতিক আয় ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প মূল্যায়ণ দলিল অনুসারে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি ১.৭ শতাংশ হবে এবং এতে করে জাতীয় জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি হবে .০৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতু ছাড়াও, দেশে বর্তমানে ঢাকা মেট্রো রেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল (এইচএসআইএ) এবং যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ সহ বেশ কয়েকটি মেগা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

পরিশেষে বলছি, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়, বিশ্ববেনিয়াদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের এবং সবার ওপরে শেখ হাসিনার সক্ষমতার প্রতীক হচ্ছে পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশ্ববেনিয়া, বাংলাদেশে তাদের সুবিধাভোগীরা এবং বিএনপি-জামায়াতসহ আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পদ্মা সেতু নিয়ে যে সমালোচনা-ষড়যন্ত্র করেছিল সেই জাল ছিন্ন করে, তাদের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে এ রকম একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভবপর হয়েছে।

লেখক: সিনিয়র সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর