আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি, প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা ঋণ করেছিস। তা প্রেমিকার কাছ থেকে ঋণ করতে গেলি কেন? বন্ধু বলল, আন্দাজে কথা বলিস না তো! আমি প্রেমিকার কাছ থেকে কোনো ঋণ-টিন করিনি। প্রেমিকার কাছে যেতে পারি না অন্য কারণে...
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘ছোট ঋণে বড় অনিয়ম’ শিরোনামের খবরটি পড়ে আমরা জানতে পেরেছি মেধা (!) থাকলে কত ছোট জায়গায়ও কত বড় অপকর্ম করে ফেলা সম্ভব। কতিপয় মেধাবী (!) ঋণের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আর একবার যে টাকা পকেটে ঢুকে যায়, সে টাকা কি আর বের হয়ে আসতে চায়? আসতে চায় না বলেই দেশে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে দিন-দিন। উনারা নানান কূটকৌশল করে ঋণ নেন, তারপর সেটা হয়ে যায় চিরঋণ। মানে আজীবনের জন্য পরিশোধের অযোগ্য। কিছুদিন আগে আমার পাশের বাসার তর্কাতর্কি শুনে ভালোই অবাক হয়েছিলাম। তর্ক হচ্ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে। তর্ক শুনে বুঝলাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল ছোটভাই। কিন্তু যথাসময়ে ফেরত দেয়নি, দেওয়ার লক্ষণও নেই। তো আমি অবাক হয়েছিলাম মূলত বড় ভাইয়ের কথা শুনে। তিনি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বলছিলেন, তুই আমার কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিস না ক্যান? তুই কি আমাকে ব্যাংক পেয়েছিস?
বোঝেন অবস্থা। তার মানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেটা ফেরত না দিলেও চলে—এমন একটি ধারণা সাধারণের মনেও ঢুকে গেছে। যদিও এ ব্যাপারে মোটেও একমত নয় আমার কাছের এক ছোটভাই। তার কথা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর সেটা পরিশোধে গড়িমসি করবে বা মেরে দেওয়ার চিন্তা করবে, এটা সবার পক্ষে সম্ভব না। এর জন্য রাঘববোয়াল হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যাংক আমাদের মতো আম-পাবলিককে ঋণ দেবে কী, আমাদের সঙ্গে যা আচরণ করে! সত্যিই এটা খুব কষ্টদায়ক। আমি বললাম, ব্যাংক তোর সঙ্গে এমন কী খারাপ আচরণ করল, যার কারণে তুই কষ্ট পেলি? ছোটভাই বলল, আপনি চিন্তা করতে পারেন ব্যাংক সামান্য একটা কলম দিয়েও আমাদের বিশ্বাস করে না।
একটা কলম দেয় লেখার জন্য, সেটাও দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকে। নাহ, ব্যাংকের ভিতর থাকতে আর ভালো লাগছে না। চলেন ব্যাংক থেকে বের হয়ে দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ঋণের দিকে চোখ ফেরানো যাক। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল ঋণ নিয়ে। সে বলল, আর বলিস না, ঋণ শব্দটা শুনলেই আমার ভয় করে। আর এজন্য প্রেমিকার কাছেও যেতে পারি না। আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি, প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা ঋণ করেছিস। তা প্রেমিকার কাছ থেকে ঋণ করতে গেলি কেন? বন্ধু বলল, আন্দাজে কথা বলিস না তো! আমি প্রেমিকার কাছ থেকে কোনো ঋণ-টিন করিনি। প্রেমিকার কাছে যেতে পারি না অন্য কারণে। আর কাছে যাব কী, তার নাম উচ্চারণ করতেই তো আমার ভয় করে। আমি বললাম, তার নাম উচ্চারণ করতে ভয় করবে কেন? বন্ধু বলল, কেন আবার, তার নাম উচ্চারণ করলেই ঋণের কথা মনে পড়ে যায় যে! আমি বললাম, তার নামটা কী বল তো! বন্ধু বলল, রিনিত।
আমার এক দুলাভাই বললেন, আমি মনে করি, বাঙালির চেয়ে সেরা ভাষাবিদ দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আহা! তারা একেকটা বাক্য কত চিন্তা-ভাবনা করে আবিষ্কার করেছে! একদম পারফেক্ট। আমি বললাম, দুয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাবে কি? দুলাভাই বললেন, দুয়েকটা উদাহরণের দরকার নেই।
একটা উদাহরণই যথেষ্ট। বাঙালি যে কত দক্ষ ভাষাবিদ, তার প্রমাণ এই বাক্যটা। তুই চিন্তা কর, ঋণ নেওয়ার সময় এই বাক্যটা ইউজ করলে যে ঋণটা কোনো দিন ফেরত দিতে হবে না, এই চিন্তা বাঙালির মাথায় কীভাবে এলো? যেহেতু এসেছে, অতএব বাঙালিকে কি আমরা যে কারও চেয়ে জিনিয়াস বলতে পারি না? আমি বললাম, পারি কি পারি না, সেটা পরের ব্যাপার।
আগে শুনি কোন সেই বাক্য, ঋণ নেওয়ার সময় যেটি ইউজ করলে মনে হবে আর কোনো দিন ঋণটা ফেরত দিতে হবে না বা দেওয়া হবে না। দুলাভাই বললেন, বাক্যটা হচ্ছে ‘আপনার এই ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না’। আহা কী বাক্য! একই বাক্যে বিনয়, একই বাক্যে ঋণ ফেরত না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। এ যে একের ভিতরে দুই।