সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

লাভ ইন বইমেলা

যারা বইমেলায় প্রেম করতে আসে, তাদের প্রেমের কবিতা পড়ে আমোদিত হওয়ার টাইম নেই। তবে বইটা যদি মাগনা দিস, তাহলে তাদের উপকারে আসতে পারে...

ইকবাল খন্দকার

লাভ ইন বইমেলা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোট ভাইকে ফোন করলাম জরুরি একটা কাজে। সে ফোন রিসিভ করেই বলল, ভাই, কী বলবেন, তাড়াতাড়ি বলেন। নিতান্তই আপনি ফোন দিয়েছেন দেখে ধরেছি। নইলে ধরতামই না। আমি বললাম, বল কী হয়েছে। মানে কেন কষ্টের মধ্যে আছিস, যন্ত্রণার মধ্যে আছিস। ছোট ভাই বলল, কেন যন্ত্রণার মধ্যে থাকব না, তাই বলেন। প্রতি বছরই বইমেলায় এসে যখন অসংখ্য জুটি দেখি, তখন মনটা হু হু করে। তাই পছন্দের একজনকে নিয়ে মেলায় ঢুকেছিলাম। ইচ্ছা ছিল মেলায় ঘুরতে ঘুরতে যখন আমার প্রতি তার মন দুর্বল হবে, তখন সুযোগ বুঝে প্রেমের প্রস্তাবটা দিয়ে ফেলব। কিন্তু সেই কপাল আর হলো না। এখন ইচ্ছা হচ্ছে গাছের সঙ্গে কপাল বাড়ি মারি। আমি বললাম, বাড়ি মেরে কপাল ভাঙার আগে কী হয়েছে, ভেঙে বল। ছোট ভাই বলল, কী আর হবে বলেন। আমার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতেই সে বলল এক তরুণ লেখকের বই নাকি কিনবে। কিনে দিলাম। সে বলল সেই তরুণ লেখকের অটোগ্রাফ নেবে। তারপর তরুণ লেখক যেই তাকে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানিয়ে অটোগ্রাফ দিল, সে ধুম করে তার প্রেমে পড়ে গেল। এখন সেই তরুণ লেখক আর আমার হবু প্রেমিকা বসে বসে ফুসকা খাচ্ছে। আমার এক বড় ভাই বললেন, বইমেলায় নাকি আজকাল খুব প্রেম হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সময় এই প্রচলনটা ছিল না। তখন বইমেলায় প্রেম না হলেও বইয়ের মাধ্যমেই প্রেম হতো। মানে বইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে আমরা লাভ লেটার দিতাম। আমি বললাম, জি, সেদিক থেকে একটু চেঞ্জ এখন এসেছে। এখন বইয়ের ভিতর ঢুকিয়ে লাভ লেটার না দিলেও ম্যামো দেওয়া হয়। মেলা থেকে নতুন বই কিনলেই সেটা পাবেন। বড় ভাই আমার কথায় বোধ হয় খানিকটা বিরক্ত হলেন। তাই আর দাঁড়ালেন না। দুদিন আগে আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আজকাল নাকি ভ্যালেন্টাইন্স ডের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে বইমেলায়। সবাই নাকি লাল পাঞ্জাবি পরে মেলায় যায়। আমি বললাম, কথা সত্য। আপনিও কিন্তু যেতে পারেন। প্রতিবেশী বললেন, যেতে তো পারিই। কিন্তু আপনার ভাবী আর আমার ভালোবাসা এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে লাল পাঞ্জাবি পরা ঠিক হবে না। আরে ভাইরে, আমাদের ভালোবাসার রংই যেখানে নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে লাল পাঞ্জাবি পরে আর কী হবে? আমি বললাম, তাহলে এক কাজ করতে পারেন। লাল পাঞ্জাবি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে সেটা পরে মেলায় যেতে পারেন। আশা করি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধোয়া মানে নষ্ট রঙের পাঞ্জাবি দেখেই সবাই বুঝে ফেলবে আপনাদের ভালোবাসাটা কোন লেভেলে আছে। আমার এক বন্ধু বলল, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে আমি একটা কবিতার বই বের করতে যাচ্ছি। অবশ্যই প্রেমের কবিতার বই। যাতে বইমেলায় যারা আসবে, তারা বইটা পড়ে আরও আমোদিত হতে পারে। আমি বললাম, যারা বইমেলায় প্রেম করতে আসে, তাদের প্রেমের কবিতা পড়ে আমোদিত হওয়ার টাইম নেই। তবে বইটা যদি মাগনা দিস, তাহলে তাদের উপকারে আসতে পারে। কী ধরনের উপকার জানিস? মেলায় হালি হালি টিভি ক্যামেরা থাকে তো! প্রেমিক- প্রেমিকারা ভয়ে থাকে কখন কোন টিভির ক্যামেরার সামনে পড়ে যায়। তুই যদি সবাইকে একটা করে বই মাগনা দিস, তাহলে তারা বইটা দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁটাচলা করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। বন্ধু এবার বলে উঠল, তাহলে তো বইটা বাচ্চাদের ফোর কালারের বইয়ের মতো বড় বানানো দরকার ছিল। কারণ, ছোট বইয়ের চেয়ে বড় বই দিয়ে মুখ ঢাকা সুবিধা।          

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর