সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্থির পিঁয়াজ

ইকবাল খন্দকার

অস্থির পিঁয়াজ

♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোট ভাই বললো, চিন্তা করে দেখলাম, একটু চালাক না হলে ঢাকা শহরে টেকা মুশকিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, বাসা ভাড়া যে হারে বাড়ছে, এ অবস্থায় চালাকি করে আয়-রোজগার না বাড়ালে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। আমি বললাম, কী চালাকি করবি?  ছোটভাই বললো, আমি যে বাসায় ভাড়া থাকি, সেই বাসায় বেডরুম দুইটা। একটাতে আমি ঘুমাই, অন্যটা বলতে গেলে ফাঁকাই থাকে।  এ জন্য আমি ঠিক করেছি একটা চালাকি করবো। মানে ওই রুমটার সদ্ব্যবহার করবো। এতে আমার হাতখরচও চলবে, ভাড়ার টাকাটাও জোগাড় করা যাবে সহজেই। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, এত প্যাঁচাচ্ছিস কেন? ছোটভাই বললো, পেঁয়াজের দাম কী পরিমাণ বেড়েছে, জানেন? আমি বললাম, জানি। তারপর বল। ছোটভাই বললো, না, মানে যে রুমটা ফাঁকা আছে, সেই রুমে যদি আধহাত উঁচু করে মাটি ভরাট করে পেঁয়াজ লাগিয়ে দিই, ভালো হয় না? নিজেরাও খেলাম, বিক্রিও করলাম। আমার এক বন্ধু বললো, ফিলিপাইনে কিন্তু পিঁয়াজ জিনিসটা মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়। মানুষ পিঁয়াজের বিনিময়ে এটা কেনে, সেটা কেনে। আমাদের দেশেও পিঁয়াজের বাজার যে পরিমাণ অস্থির, যে পরিমাণ দাম পিঁয়াজের, আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই পিঁয়াজের বিনিময়ে দামি দামি জিনিস কেনা যাবে। পাশেই ছিল আরেক বন্ধু। সব শোনার পর সে বললো, এরকম সিস্টেম চালু হলে মন্দ হবে না। ও, ভালো কথা। গরম তো একটু বেশি পড়েছে, একটা এসি কেনা দরকার। আচ্ছা, কয় পিস পিঁয়াজের বিনিময়ে একটা এসি পাওয়া যেতে পারে? আমার এক টন একটা এসি হলেই চলবে। আমি বললাম, এক টন এসির জন্য সম্ভবত এক টন ওজনের একটা পিঁয়াজ হলেই চলবে। আমি শিওর না। শিওর হয়ে পরে জানাবো। আমার এক ভাবি বললেন, পিঁয়াজের দাম বেড়ে দারুণ উপকার হয়েছে। এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। আমি বললাম, এটা আপনি কী বলছেন ভাবি? পিঁয়াজের অস্থির দামে সবাই যেখানে অস্থির, সেখানে কিনা আপনি শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন! কীভাবে সম্ভব? ভাবি বললেন, আপনার ভাইয়ের একটা বদভ্যাস আছে। প্রচুর তেলে ভাজা জিনিস খায়। বিশেষ করে পুরি-সিঙ্গারা। এর চেয়ে বড় বদভ্যাস হচ্ছে, পুরি-সিঙ্গারার সঙ্গে বিপুল পরিমাণে পিঁয়াজ খায়। কিছুদিন আগে যখন পিঁয়াজের দাম কম ছিল, তখন পুরি-সিঙ্গারার দোকান থেকে প্রচুর পিঁয়াজ দিত। আপনার ভাই সেগুলো খেয়ে যখন বাসায় আসতো, বিশেষ করে হাঁ করে ঘুমাতো, তখন পিঁয়াজের গন্ধে পুরো ঘর ভরে যেত। এখন পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরি-সিঙ্গারার দোকানদাররা পিঁয়াজ দেয় না বললেই চলে। সেও খেতে পারে না। অতএব বাসায় এসে যতই হাঁ করে ঘুমাক, পিঁয়াজের গন্ধে আর ঘর ভরে না। কি শান্তি না? আমার এক দুলাভাই ফোন করে জানতে চাইলেন আমি কোথায়। আমি একটা জায়গার নাম বললাম। তিনি বললেন আমি যেন বাজারে যাই। কারণ, তিনি এক কেজি পিঁয়াজ কিনবেন। আমি বললাম, কেনেন। আমার আসতে হবে কেন? দুলাভাই বললেন, না, মানে কেনার পর পিঁয়াজগুলো নিয়ে একা বাসায় ফিরতে ভয় পাচ্ছি। তুই সঙ্গে থাকলে ভরসা পাই। দামি জিনিস তো!

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর