শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
একজন ইউরোশীয় কবি, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ

বাংলার সক্রেটিস ডিরোজিও

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

বাংলার সক্রেটিস ডিরোজিও

‘যে তর্ক করে না, সে অন্ধ গোঁড়ামিতে ভুগছে।

যে তর্ক করতে পারে না, সে নির্বোধ;

আর যে তর্ক করে না, সে ক্রীতদাস।’    - ডিরোজিও

 

‘বাংলার সক্রেটিস’ ডিরোজিও ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে একজন ইউরেশীয় কবি, যুক্তিবাদী, চিন্তাবিদ ও শিক্ষক। বহু যুগের কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বদ্ধ, জীর্ণ এই সমাজে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও বাঙালিদের সঙ্গে মনেপ্রাণে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। একাধারে শিক্ষক, কবি, সাংবাদিক এই মানুষটি তাঁর উপলব্ধি আর কর্মোদ্যমে বদলাতে চেয়েছিলেন সমাজটাকে। তার পরিণামে জুটেছিল অপমান, তাচ্ছিল্য আর দরিদ্রতা। সেকেলে রক্ষণশীল বাঙালির কাছে তিনি ছিলেন ‘দ্রজু ফিরিঙ্গি’। তিনি উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের এক অবিস্মরণীয় নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজের শিক্ষক নিযুক্ত হন। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। কেবল শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ না থেকে, তিনি ছাত্রদের নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণের বাইরে চলে যেতেন। আলোচনার ভিতর দিয়ে পড়াতেন। নিজ বিষয়ের বাইরে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে পড়াতেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের ভিতর জ্ঞান পিপাসা জাগিয়ে তোলা। এ জন্য সে সময় তাঁকে বাঙলার সক্রেটিস বলা হতো। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের মতো ডিরোজিও ছিলেন আপাদমস্তক শিক্ষক। কোনো কোনো গবেষক তাঁকে বাংলার নবজাগরণের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, পুরোধা পুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

১৮০৯ সালের ১৮ এপ্রিল ডিরোজিও জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার মহান শিক্ষক ডিরোজিওর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও অভিবাদন! মৃত্যুর দীর্ঘকাল পরেও তাঁর অনেক ছাত্রের মধ্যে তাঁর উত্তরাধিকার বেঁচে ছিল, যাঁরা ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত ছিলেন এবং যাঁদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে সমাজ সংস্কার, আইন এবং সাংবাদিকতায় বিশিষ্ট স্থান দখল করেছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর