ফকিরচাঁদ, কবি জামালুদ্দিন, হরিচরণ সেন, শ্যামচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, একিনুদ্দিন আহমদ খানবাহাদুর, অধ্যাপক আবদুল বাকি এবং হেমায়েত আলী দিনাজপুর মুসলিম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন
উত্তরবঙ্গের ইতিহাসখ্যাত দিনাজপুর বাংলাদেশের প্রাচীন জেলা। যাকে বরেন্দ্র অঞ্চলের জনপদ কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। এর সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আদিসাহিত্য হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে ভাষা আন্দোলনের সর্বপ্রথম অগ্রণী ভূমিকার নিদর্শন হিসেবে, আধুনিক মুদ্রণ পদ্ধতি আবিষ্কারের ৩০০ বছরের অধিক সময়, বাংলা মুদ্রণের ইতিহাসে, দিনাজপুরে উইলিয়ামকিন্সের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত আছে। দেশবিভাগের পরপরই ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের দাবি সূচিত হয়েছিল গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে। দিনাজপুরে সাহিত্যচর্চার দীর্ঘ অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এ জেলার সাহিত্যচর্চা দেশের সাহিত্যচর্চার অঙ্গনে একটি সমৃদ্ধ ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও সাহিত্য, নাট্যকলা, লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান এ অঞ্চলের সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। জানা যায়, দিনাজপুরের সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় ১৭৬৮ সাল থেকে। ফকিরচাঁদ, কবি জামালুদ্দিন, হরিচরণ সেন, শ্যামচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, একিনুদ্দিন আহমদ খানবাহাদুর, অধ্যাপক আবদুল বাকি এবং হেমায়েত আলী দিনাজপুর মুসলিম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন। তাদেরই প্রচেষ্টায় নাজিমুদ্দিন মুসলিম হল ও লাইব্রেরি গড়ে ওঠে, যেটি তদানীন্তন পাকিস্তানের একটি গৌরবময় প্রতিষ্ঠান। সাহিত্যচর্চার আদি প্রেরণা হিসেবে মাসিক নওরোজ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। মন্মথ রায়, অভিজিত সেন এবং হরি মাধব মুখোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকদের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার যাত্রা হয়। এ অঞ্চলের সাহিত্যের ধারা দক্ষিণ দিনাজপুর তথা পশ্চিম বাংলার সাহিত্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯১৪ সালে স্বভাব কবি নূরুল আমিনের হাত ধরে সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত ঘটলেও সে সময়ের কবি কাদের নেওয়াজ, মঈনুদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী, সোলেমান আলী প্রমুখের সান্নিধ্যে সাহিত্যচর্চা প্রাণবন্তভাবে বিকাশ লাভ করে। স্বাধীনতার পরও কবি মো. নুরুল আমিন দিনাজপুরের সাহিত্যচর্চায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নওরোজ সাহিত্য মজলিশ গঠন করে তরুণ কবি সাহিত্যিকদের উৎসাহ দিয়ে কাব্য সৃষ্টির ধারা ও পথকে এগিয়ে নিয়েছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দর্পণকাব্য, নবি কাহিনি, সৃষ্টির বিচিত্রলীলা, গুঞ্চায় উম্মিদ, নতুন ছড়া এবং তরুণদের প্রথমপাঠ। জানা যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনশর বেশি পাণ্ডুলিপি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দেয়। পণ্ডিত মহেশচন্দ্র তর্কচূড়ামণি দিনাজপুরের রাজ পুরোহিত ও সভাপতি মহাশয় ছিলেন। তিনি সংস্কৃত কাব্যের রচয়িতা ছিলেন। আলহাজ মোহাম্মদ তৈমুর ছিলেন দিনাজপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় কৃতীসন্তান। তিনি বাহাদুর বাজার মহল্লার অধিবাসী ছিলেন। অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু এ ব্যক্তি ইসলামি সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত গবেষক ছিলেন। তাঁর রচিত কোরআন প্রবেশিকা ও ‘তারা জানে না ইসলাম কি’, প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁকে একজন যশস্বী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান। অধ্যাপক আবদুল বাকী ছিলেন সত্যিকারের সাহিত্যের গৌরব। তিনি আজীবন দিনাজপুর সরকারি কলেজে শিক্ষকতা ও লেখালেখিতে নিবেদিত ছিলেন। তিনি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যচর্চা করতেন। কবি কাদের নেওয়াজ (১৯৫২ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন), আবার আ.কা.শ. নূর মোহাম্মদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের একাধারে কবি, উপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক। তাঁর প্রকাশিত গল্প ‘বুনোমেঘ কথা কয়’ (কাব্য), ‘আসছে বছর’ (উপন্যাস), এই স্বাধীনতা (ছোটগল্প) ইত্যাদি ‘মাসিক আযান’, ‘সাপ্তাহিক আদিনা’, ‘মালদহ আখিবার’, ‘নজরুলিকা’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর বাংলাদেশের প্রাথমিক যুগের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাহমুদ মোকাররম হোসেন (১৯২৩), তাজমিলুর রহমান (১৯২৫), মো. ইউসুফ আলী (১৯৩৫) ছিলেন একসময়ের স্বনামধন্য লেখক। পরে শওকত আলী (১৯৩-২০১৮), একজন বিশ্বমানের সাহিত্যিক। তিনি পশ্চিম দিনাজপুরে তৎকালীন দিনাজপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জগন্নাথ কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাস প্রদোষে প্রাকৃতজন বিশ্বসাহিত্যে এ অনন্য সংযোজন। এ ছাড়া ‘উত্তরের খেপ’, ‘নাঢ়াই’, ‘দক্ষিণায়নের দিন’সহ বিভিন্ন উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তবে ‘উত্তরের খেপ’ এবং ‘নাঢ়াই’ উত্তর জনপদের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত। এ ছাড়া বিখ্যাত ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসটি কান্তজিউ মন্দিরের ভারতীয় মিথ রামায়ণগাঁথা। শওকত আলী তথাকথিত ভদ্র জীবনের বাইরে মেøচ্ছ লোকালয় থেকে এক টুকরো জীবন সংগ্রহ করে তাঁর ‘ফাগুয়ার পর’ গল্পে যে অপরূপ কৌশলে তার রূপ সৃষ্টি করেছেন তা বাংলাদেশের
ছোটগল্পের ক্ষেত্রে এক চমৎকার নিদর্শন। তাঁর প্রথমদিকের গল্প হিসেবে এর একটি আলাদা মূল্য রয়েছে। গ্রন্থের ভূমিকায় নওরোজ সাহিত্য মজলিশের অন্যতম কিংবদন্তি পুরুষ মোহাম্মদ হেমায়েত আলী আধুনিকতার দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে বিবেচনা করলেও, এই নাম দেওয়ার একটা সার্থকতার কথা বলে গেছেন। ‘নওরোজ সাহিত্য মজলিশ, দিনাজপুর’ বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাসে বাংলার কোনো ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির মতোই আশ্চর্যজনক। ’৪৭-এর ভারত ভাগের পর জন্ম নেওয়া ‘নওরোজ’ সুনামের এ সাহিত্য সংগঠনটির অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হতে পারে। ইতিহাসখ্যাত এ সাহিত্য সংগঠনটির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন অনেক কিংবদন্তি প্রাণপুরুষ আমাদের মাঝে রয়েছেন। যাঁদের কাছে আমরা মূল্যবান তত্ত্ব এবং তথ্য জোগাড়ের কাজ করতে পারব। যাঁরা এই প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের পথপ্রদর্শক হতে পারেন। তবে আমরা দাবি জানাতে পারি যে, বাংলা সাহিত্যের আন্দোলনে বঙ্গদর্শন, সবুজপত্র, কালি ও কলম প্রভৃতি সাহিত্যপত্রের পাশে দাঁড়িয়ে সে আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল ‘নওরোজ’ পত্রিকা। অথচ ‘বাংলাকথা’ সাহিত্যের ইতিহাসে ‘নওরোজ’-এর নাম অনুচ্চারিত। উপেক্ষিত আজও। কালে-কালান্তরে ‘বাংলাকথা’ সাহিত্যের ঐতিহাসিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আমাদের এই ‘নওরোজ সাহিত্য মজলিশ’ প্রয়াস। দিনাজপুরের শিল্প সাহিত্যচর্চা বলতে মূলত এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সমসাময়িক সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চাকে বোঝানো হয়। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে সেন রাজবংশের সময়কালে দেবদেবীর প্রস্তরমূর্তির মতো ভাস্কর্য শিল্প গড়ে উঠেছিল, যা তৎকালীন শিল্পকলার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আফগান ও মোগল আমলে এই অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হয়। বর্তমানেও এই জেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন সক্রিয় রয়েছে এবং স্থানীয় মানুষকে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী করে তুলতে কাজ করছে। পরবর্তীতে যাঁরা সাহিত্যে নিবেদিত হন তাঁদের মধ্যে বেগম আজিজা এন মোহাম্মদ, তোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী, রসরাজ কবি আহাম্মদ হোসেন, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক শাহজাহান শাহ প্রমুখ ছিলেন দিনাজপুরের সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রতিভা। স্বাধীনতা-উত্তর এই ধারায় ‘বৈকালী’ নাট্যগোষ্ঠীর আয়োজনে এবং নাট্যজন শাহজাহান শাহের অনুপ্রেরণায় একদল মেধাবী সাহিত্যচর্চায় এগিয়ে আসেন। সত্তর দশকে যারা সাহিত্যে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তাঁরা হলেন- মাহমুদ আখতার, ইসলাম নূর, কাজী আখতার হোসেন, রনো ভট্টাচার্য, সালেহা খান জলি, আশিকুল্যাহ শাহ, মোহাম্মদ আমজাদ আলী, মুহাম্মদ কাদের বক্স, মাহবুব আলী, শেখ নাসিম আলী, জ্যোতি জামাল, দিলরুবা মিজু, ইয়াসমীন জামান, লায়লা চৌধুরী, মো. আবদুল হাই, সৈয়দ কেরামত হোসেন, আবুল হোসেন, ইরফান চৌধুরী, তরিকুল আলম, ভূপতি নারায়ণ রায়, জোবায়ের আলী জুয়েল, কফিল উদ্দীন প্রমুখ। পরবর্তীতে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘নবরূপী’র আহ্বানে সাহিত্যচর্চা দারুণভাবে সংগঠিত হয়। সেই আশির দশকে শুরু করে সাহিত্যচর্চায় যাঁরা সক্রিয় আছেন তাঁদের মধ্যে জুলফিকার রোনজু, ইতি ইব্রাহিম, মমিনুল ইসলাম, নিজামউদ্দীন আহমেদ রয়েল, আলী ছায়েদ, জিল্লুর রহমান, আজহারুল আজাদ জুয়েল, হাবিবুল ইসলাম বাবুল, নুুরুল মতিন সৈকত, ইফতেখার হাবিব, সোহেল করিম দিপু, জ্যাকি ইসলাম, সম্বিত সাহা, মারুফা বেগম, লুইস কামরুল, কাশী কুমার দাস ঝন্টু, শাহ্ আলম শাহী, লুনা ইয়াসমিন, নুরে আলম সিদ্দিকী, ওয়াহিদা পারভীন নীরা বিশ্বজিৎ দাশ, টিটো রেদওয়ান প্রভৃতি অন্যতম। ’৯০-এর পরে এবং সমকাল দশকে যারা সাহিত্যচর্চায় নিমগ্ন তাদের মধ্যে-নবনীতা রুমু সিদ্দিকা, বাসুদেব শীল, বিধান দত্ত, রবিউল ইসলাম, আমিন ইসলাম, ওয়াসিম আহমেদ শান্ত, অদিতি রায়, রাজ্জাক কাঞ্চন, নিরঞ্জন হীরা, কমল কুজুর, চৌধুরী মো. তারিক, সাদিক আল আমিন, দেলওয়ার হোসেন, মজেল উদ্দিন, আসাদুজ্জামান, মমিনুল বাহার খোকন, রোজিনা খাতুন, শামিম আহমেদ, ইয়াসমিন আরা রানু, অনন্য আমিনুল, চৌধুরী মৌমিস্বা, তুষার শুভ্র বসাক প্রমুখ অন্যতম। অন্যদিকে অনেক লেখক জীবনের প্রয়োজনে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। যেমন- জাহিদুল ইসলাম, নাজিব তারেক, মাজুল হাসান, মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, আহমেদ বাদল, মাসুদ পারভেজ, আনোয়ারা আজাদ, রাহেল রাজীব, নাজমুন নাহার হেলেন, মিজানুর রহমান লাবু এবং হিজল জুবায়ের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া অনেক সাহিত্য অনুরাগী এ অঞ্চলে বসবাস ও চাকরিজনিত কারণে দিনাজপুরের সাহিত্যচর্চায় মগ্ন হন। তাঁদের মধ্যে আছেন- মাসুদুল হক, জলিল আহমেদ, নিরঞ্জন রায়, লাল মিয়া এবং মেহেনাজ পারভীন। আজকের দিনে ঢাকায় নাট্য প্রযোজনা ছাড়াও দিনাজপুরের শিল্পীরা সিনেমা প্রযোজনাও করছেন। এ ছাড়া অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালী কাগজে ফিচার লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। আবার কেউ জাতীয় দৈনিকসহ উচ্চমান প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। দিনাজপুরে রয়েছে ছোটকাগজ ও সাহিত্যকাগজের নিয়মিত সমৃদ্ধ ও মানসম্মত প্রকাশনা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কোটিবর্ষ, সংগা, হঠাৎ রোদ্দুর, কবিতা নয় কালপ্রপাত, সে, শব্দশিল্প, দুন্দুভি, শঙ্খপাণি এবং রবীন্দ্রনাথ, উচ্ছ্বাস, সর্বনাম, নাক্ষত্রিক, কর্ষণ, প্রগতি, কাব্যকথা, অমৃত, হঠাৎ রোদ্দুর ইত্যাদি। দিনাজপুরের সমসাময়িক সংগঠনগুলো হলো- উদীচী, উত্তরতরঙ্গ, নবরুপী, শব্দশর, মণিমেলা ইত্যাদি। বর্তমানে দিনাজপুরে যেসব সাহিত্যকাগজ নিয়মিত বের হচ্ছে সেগুলো হলো-অগ্নিসেতু, প্রয়াসী, উত্তরাশা, বাহে, কাব্যকথা ছাড়াও পাতাসাহিত্য। প্রাচীনসাহিত্য সংগঠনের আমন্ত্রণে এবং হেমায়েত আলী লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে দিনাজপুরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আবুবকর সিদ্দিক, জাহিদুল হক ছাড়াও কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুহম্মদ নূরুল হুদাসহ আরও অনেকে। এ গদ্যে যেসব কবি-সাহিত্যিকের লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিন সাহিত্যের এ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের নাম উল্লেখ করা হলো না।
দিনাজপুরের সাহিত্যচর্চার উল্লেখযোগ্য দিক হলো- অনেকে জাতীয় কাগজসহ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যকাগজ ও ভারতের কাগজে নিয়মিত লেখালেখি করছেন। প্রকাশনার জগতে দিনাজপুর মোটেও পিছিয়ে নেই। অনেকেরই প্রায় দশ-পনেরোটি বই বেরিয়ে গেছে। দিনাজপুরের সাহিত্যচর্চা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস বহন করে, যেখানে স্থানীয় কবি, লেখক ও গবেষকরা সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদান রেখেছেন। দিনাজপুরে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ বিচারে দিনাজপুর কেবল একটি ঐতিহাসিক জেলা নয়, এটি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। এর উর্বর ভূমি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি এখানকার মানুষের মননশীলতাকে করেছে গভীর ও সংবেদনশীল। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলটি বিভিন্ন লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত। যাত্রা, পালাগান, ভাওয়াইয়া, কীর্তন এবং বিভিন্ন লোকনৃত্য এখানকার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক সময়েও দিনাজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমানভাবে সক্রিয়। বহু প্রতিভাবান শিল্পী, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই ভূমি থেকে উঠে এসেছেন, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন। এখানকার সাহিত্যচর্চা, বিশেষ করে নাট্যর্চচা, কবিতা, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধের ক্ষেত্রে, নতুন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্থানীয় সাহিত্য পত্রিকাগুলো তরুণ লেখকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও চারুশিল্প এবং কারুশিল্পেও দিনাজপুরের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। পরিশেষে বলা যায়- এ জেলাটি শুধু অতীতের গৌরব নিয়ে বেঁচে নেই, বরং নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এর শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।