ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন মানিকগঞ্জের মেয়ে রৌশনারা রহমান। ডাকনাম দুলন। যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। রৌশনারা ওই শহরের প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন রৌশনারা রহমান। অল্প ভোটের ব্যবধানে সে সময় পরাজিত হন তিনি। এর আগে লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ১৪ মে বিপুল ভোটে যুক্তরাজ্যের রামসগেইটের মেয়র নির্বাচিত হন রৌশনারা। তার শৈশব, কৈশোর কেটেছে যুক্তরাজ্যেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি বিদেশ পাড়ি জমান। মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও দেশের টান কমেনি। প্রতি বছরই দেশে আসেন। নিজের গ্রামে মানবসেবায় প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠন নানা প্রজেক্ট ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সহায়তা দিয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে তার বেড়ে ওঠা ছিল চমকপ্রদ। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১২ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশের ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই অদ্ভুত কাণ্ড করেন তিনি। লন্ডনে বাংলাদেশি রিকশা ছুটছে এই দৃশ্য প্রবাসী বাংলাদেশি তো বটেই, স্থানীয় লন্ডনবাসীদেরও অবাক করেছিল। রৌশনারার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর গ্রামে। তার বাবার নাম প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রৌশনারা সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন সিঙ্গাইর উপজেলার ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্থানীয় তালেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। সে বছরই মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী হন। সেখানে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন আইন বিষয়ে। ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন সেখান থেকেই। পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রামসগেইট শহরে রৌশনারার রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও রয়েছে। স্বামী রেজাউর রহমান জামানও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রৌশনারার বাবা এলাকায় একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের নামে নিজ গ্রামে রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এলাকাবাসীর কাছে আস্থাভাজন একজন হয়ে ওঠেন। রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে তিনি প্রতি বছর বন্যার সময় ত্রাণ, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ফি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেন। যুক্তরাজ্যে সক্রিয় রাজনীতি ও ব্যবসায় ব্যস্ত থাকলেও রৌশনারা প্রতি বছরই দেশে আসেন।