আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণশৈলীর অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। এরই মধ্যে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভবনটি তার খ্যাতি ছড়িয়েছে। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ সুন্দরবন-ঘেঁষা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল সোয়ালিয়া গ্রামে অবস্থিত এ হাসপাতালটি বিশ্বের সেরা নতুন হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। লবণাক্ত অঞ্চলের আশীর্বাদ শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটি বিশ্বের সেরা নতুন ভবন হিসেবে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০২১ স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত এখানকার কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও এলাকাবাসী। নান্দনিক ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি ২০টি ভবনের সমন্বয়ে ৪১ হাজার ৬৭২ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। হাসপাতালের মাঝখানে রয়েছে আঁকাবাঁকা খাল। কৃত্রিম এই জলাধার বৃষ্টির পানি ধরে রাখাসহ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর বিভাগকে করেছে আলাদা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ঔষধি ও ফুলের গাছ। ভবনের মাঝ প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া নান্দনিক এই খালে বৃষ্টির ধরে রাখা পানিতে গ্রীষ্মের সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ঠান্ডা থাকায় চিকিৎসাধীন রোগীদের মানসিক প্রশান্তির কাজ করছে। ছোট ছোট ইট এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে। রয়েছে প্রচুর আলো বাতাসের ব্যবস্থা। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ বাংলার জলপরিবেশে উপকূলীয় লবণাক্ততার বিষয়টি মাথায় রেখে অসাধারণ নকশা ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে স্থপতি কাশেম মাহবুব চৌধুরীর নকশা করা ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটির জন্য গত বছরের ১৬ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস রিবা পুরস্কারের জন্য বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করে।
দুই একর জমির ওপর ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত মাটির ওপরে নির্মিত এনজিও ফ্রেন্ডশিপের তৈরি এ হাসপাতাল।
পানিকে গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তোলা এ হাসপাতালটি বিশ্বের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনাকে পেছনে ফেলে স্থপতি কাশেম মাহবুব চৌধুরীর নকশা করা এই ভবনটি জিতে নিল বিশ্বসেরা নতুন ভবনের আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০২১-এর স্বীকৃতি। ২৫ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
হাসপাতালের এমআইএস অফিসার পলাশ বাড়ৈ জানান, ফেন্ডশিপ হাসপাতাল শ্যামনগরের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। আর নির্মাণ কাজ শেষে এর চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই। এখানে ছয়জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্সের মাধ্যমে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে রোগী দেখা হয়। তিনটি অপারেশন থিয়েটার ও একটি লেবার অপারেশন থিয়েটরের মাধ্যমে আলাদাভাবে চিকিৎসাধীন রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হয়। দন্ত, চোখের ছানি, জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা, হৃদরোগ, অর্থোপেডিক, ঠোঁটের তালু কাটা, বার্ন, ডায়াবেটিক, ফিজিওথেরাপি, স্ত্রী রোগ ও শিশু রোগ নির্ণয়সহ বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা আউটডোর চালু থাকে।
তিনি আরও জানান, ‘হাসপাতালটির ভবনটি আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হওয়ায় আমরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়ে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে।’ হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক অসীম ক্রিস্টোফার রোজারিও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস রিবা পুরস্কারের জন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নাম ঘোষণা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গর্বিত এবং আনন্দিত। এ হাসপাতালে শুধু সাতক্ষীরা নয়, দেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’