শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে

একটি সেলুন। সেলুনে শোভা পাবে কাঁচি, ব্লেডসহ চুল কাটার নানা উপকরণ। কিন্তু এখন এসব অপরিহার্য অনুষঙ্গের পাশে স্থান হয়েছে মুক্তচিন্তার প্রতীক ও মননশীলতার স্মারক খ্যাত বইয়ের। সেলুনের কর্নারে বক্স করে বুক সেলফে রাখা হয়েছে বিষয় বৈচিত্র্যের নানা গ্রন্থ। আগত গ্রাহকরা সেখান থেকে বই নিয়ে পড়ছেন। জ্ঞান আহরণ করার সুযোগ হয়েছে চুল কাটার জন্য অপেক্ষমাণ সময়টাতে। এভাবেই জ্ঞানের দ্যুতি ছড়াচ্ছে ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ শীর্ষক অভিনব এক কর্মসূচি। চট্টগ্রামসহ সারা দেশ এবং বিশ্বের চারটি দেশে চলছে এ কর্মসূচি। জানা যায়, ২০১৮ সালের ২০ জুন ‘অবসরে বই পড়ুন’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা করে ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’ নামের ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি। প্রথমে নোয়াখালীতে রতনের সেলুনে বই ও আলমিরা বিতরণের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। কবি গোলাম মাওলা জসিমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিটি সেলুনে দেওয়া হয় নানা বিষয় বৈচিত্র্যের ২৫ থেকে ৩০টি বই। এখানে স্থান পায় বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও উপন্যাসিকদের বই।   

সারা দেশে আছে এ সেলুন পাঠাগার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, সন্দ্বীপে আছে মোট ৫২টি সেলুন পাঠাগার। বর্তমানে চট্টগ্রামেই আছে ১০টি। বাংলাদেশ ছাড়াও বর্তমানে বিশ্বের চারটি দেশে আছে সেলুন পাঠাগার। এগুলো হলো- সাউথ আফ্রিকা, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও ভারত।  ভারতের কালকাতা, জয়দেবপুরে আছে চারটি সেলুন পাঠাগার। এসব দেশের বাংলাদেশি সোসাইটিতে এ সেলুন পাঠাগারের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।

‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’র উদ্যোক্তা ও পরিচালক কবি গোলাম মাওলা জসিম বলেন, বর্তমান প্রজন্ম এখন ক্রমশই অতিমাত্রায় অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগ ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বইয়ের পাঠক। তাই পাঠবিমুখতা দূর করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে আমার এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, সেলুনে মানুষ চুল কাটতে এসে কিছু সময় অবসরে বসে থাকেন। এই সময়ে মানুষের হাতে একটি বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। সময়টুকু মানুষের বইয়ের সঙ্গে কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বই পড়ার চর্চাটা বাড়বে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সেলুন পাঠাগারের সংখ্যা।  

‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’র প্রধান সমন্বয়ক মোশারফ ভূঁইয়া পলাশ বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির জয়-জয়কার। ইন্টারনেটের যুগে বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই বইয়ের প্রতি প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াতে সেলুন পাঠাগার কর্মসূচি শুরু করা হয়। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বই পড়ার একটা নবচেতনা তৈরি হবে। বই পড়ার মানসিকতা জাগবে।

সর্বশেষ খবর