শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ার নারীদের কুমড়ো বড়ির বিপ্লব

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার নারীদের কুমড়ো বড়ির বিপ্লব

বগুড়ার বিভিন্ন পল্লীর নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। নারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরুষরাও ঝুঁকছেন এ কাজে। অল্প ব্যয়ে বেশি লাভ হয় বলে নারীরা এতে যুক্ত হন। বগুড়ার এমন গ্রামও আছে যেখানে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়। এতে গ্রামের নারীরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌরসভা দিয়ে প্রবাহিত নাগর নদের তীরে সাবলা ও কালীবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামের নারী-পুরুষ শত বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন। বাপ-দাদার পেশা তারা আজও ধরে রেখেছেন। এখানকার অধিকাংশ নারী-পুরুষ সনাতন ধর্মের। প্রায় শতাধিক পরিবার বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে। প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গৃহিণীরা বাড়ির ছাদে একত্রে দল বেঁধে, আবার কেউ কেউ মাটিতে মাদুর পেতে বড়ি তৈরির কাজ করছেন। এ গ্রামের অনেকের বাড়িতে হাতে ও মেশিনের মাধ্যমে এ কুমড়ো বড়ি তৈরি হয়। এ কাজে কারিগর হিসেবে এলাকার অসহায় নারীরা বেশি কাজ করছেন। নারীদের সঙ্গে স্থানীয় অভাবীরা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। ক্ষুদ্র কারখানায় এখন বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এক সময় পরিবারে বাড়তি আয়ের জোগান দিতে এ খাবার তৈরি করা হতো। কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে এ সুস্বাদু খাবার তৈরি হচ্ছে। শীতে প্রতিটি ঘরে চলছে কালাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। সারা বছর টুকটাক বড়ি তৈরি হলেও শীতকালই কুমড়ো বড়ি তৈরির মৌসুম। আশ্বিন-চৈত্র মাস কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রি হয় ব্যাপকভাবে। এ ব্যবসার সঙ্গে নিয়োজিত থেকে অনেকেই কাঁচা বাড়ি থেকে বিল্ডিং করেছেন। পরিবর্তন হয়েছে তাদের ভাগ্যের। শীত মৌসুমে তারা প্রতি মাসে বগুড়াসহ দেশের অন্যান্য জেলায় ৩০ লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি করছেন। এতে তারা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন। দুপচাঁচিয়া উপজেলার নাগর নদের তীরে সাবলা ও কালীবাড়ি গ্রামে সকাল থেকে বাড়ির উঠানসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় চলে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন। গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে চাটাইয়ের ওপর সারি করে বিছানো সাদা মাষকলাইয়ের তৈরি কুমড়ো বড়ি। রোদে শুকানো হচ্ছে ওই বড়িগুলো। আর মাঝে মাঝে উল্টিয়ে শুকিয়ে নিচ্ছেন নারীরা। এ কাজে এখন পুরুষরাও সহযোগিতা করছেন। সাবলা গ্রামের গৃহবধূ পপি মোহন্ত জানান, ‘১০ থেকে ১২ বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছি। প্রতিদিন রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে আমাদের কর্মযজ্ঞ। প্রথমে মাষকলাই রোদে শুকিয়ে জাঁতায় ভেঙে পরিষ্কার করে বা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাষকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটায় বেটে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তবে এখন এলাকায় মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাষকলাই ও কুমড়োর বড়ি মিহি করা হয়। এরপর দুটির মিশ্রণে কুমড়ো বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়।  কুমড়ো বড়ির কারিগর লাবণী রানি জানান, এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি কেনেন পাইকাররা। গড়ে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর