শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
যেভাবে গড়ে তুললেন কৃষি ফার্ম

দেশি-বিদেশি সবজি চাষে সাফল্য আজাদের

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

দেশি-বিদেশি সবজি চাষে সাফল্য আজাদের

করোনাকালে দেশে ফিরে মালয়েশিয়া ফেরত যুবক মো. আজাদ মিয়া নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন কৃষি ফার্ম। বিদেশি সবজিসহ দেশীয় নানা জাতের সবজি চাষে প্রাথমিকভাবে গবেষণায় সাফল্য লাভ করে এ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন।

দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় ৮ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ শেষে এবার ৩৩ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন শুধু সবজি। তিনি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা সদরের পাড়াগর্মা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা মো. আকমল হোসেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার।

গ্রামের মানুষও হয়েছেন অবাক। তাদেরও বেশির ভাগই কৃষি কাজ করেন। তবে সবাই পড়াশোনা জানা নয়। মো. আজাদ ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া যান। বাংলাদেশের সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হন তিনি।

কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো আজাদ মিয়া জানান, ২০২০ সালে তিনি মালয়েশিয়া থেকে চলে আসেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস তার ওপরও প্রভাব ফেলেছে। তবে সেখানের লিমকক উইং নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি (পিএইচডি) পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি সমাপ্ত হয়নি। তবে হয়েছে কৃষির বিপ্লব। ছোটবেলা থেকে তার কৃষির প্রতি ঝোঁক থাকলেও ছিল না কোনো সাহস।

কিন্তু তিনি মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন বিভিন্ন কৃষি ফার্ম পরিদর্শন করে বেশ অনুপ্রাণিত হন। এরপর আসার সময় বকচয়, চইসহ বেশ কিছু সবজির বীজও নিয়ে আসেন দেশে। দেশে এসে তিনি তার সেখানকার সব জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ঘটিয়ে ফেলেন বিপ্লব।

গ্রামে এসে পৈতৃক ৮ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। সঙ্গে যোগ দেয় তার ছোট ভাই সাদ ইবনে হোসাইন। তিনিও ময়মনসিংহের পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেন। শুরু হয় দুই ভাইয়ের কৃষি চাষ। কোনো শ্রমিক রাখেন না। এরপর  জমিতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেন। বিভিন্ন জাতের শাক, শসা, বকচয়, চই, সিং চই, চাইনিজ ক্যাবেজ ইত্যাদি চাষ করেন গত দুই বছর। ফলনও হয় বেশ। এরপর পরীক্ষামূলক সবজি বাজারজাত করে তারা সাফল্য পান। ময়মনসিংহের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়তে থাকে। শুরু হয় ব্যাপক পরিসরে। সর্বমোট ৩৩ শতাংশ জমিতে এই সবজি এবার থেকে বাণিজ্যিকীকরণ করেন। সবজিগুলো ২১ দিন থেকে ৩১ দিন পর্যন্ত বেড়ে থাকে। যে কারণে ধাপে ধাপে তুলে বিক্রি করতে পারেন।

এতে লাভবানও হন। মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তারা। ফলে গ্রামের  কৃষকরাও ঝুঁকছেন সবজি চাষে। শীতকালে গ্রামটিকে এখন সবজি গ্রাম নামেই চেনেন সবাই।

গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গ্রামটি ইতোমধ্যে বেশ নাম কুড়িয়েছে। কৃষিকেন্দ্রিক গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এদিকে গ্রামটিতে ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছেন বিদেশ ফেরত আজাদ মিয়া। তিনি শুধু সবজি চাষই করছেন না। এবার সূর্যমুখী চাষ করছেন আরও ৩০ শতাংশ জমিতে। সব মিলিয়ে তিনি মোট ১২ কাঠা অর্থাৎ ১২০ শতাংশ জমিতে ‘খোরাক এগ্রো’ ফার্ম নামে কৃষি ফার্মটি করেছেন।

আজাদ মিয়া জানান, বিদেশি সবজির সঙ্গে তিনি দেশি সবজিও চাষ করছেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এখন খোরাক এগ্রো ফার্মে চাষ হচ্ছে বকচয়, চই, কিং চই, চায়নিজ বাঁধাকপি, জাপানি শসা, অ্যারাবিয়ান শসা, রঙিন ফুলকপি, ভিয়েতনামি লাল কাঁঠাল, চেরি টমেটো, বিটরুট, সাদা করলা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।

নিজের দেড় একর জমিতে এসব বিদেশি সবজির পাশাপাশি বিশেষভাবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি ও খরগোশ। সেগুলোর মধ্যে আছে লাভবার্ড, ককাটেল, বাজিগর, প্রিন্স, বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু ও বিভিন্ন বিদেশি মোরগ। এ পাখিগুলোর কোনো কোনোটির প্রতি জোড়ার দাম ১০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। নিজেদের দোকান থেকে স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয় এগুলো। কিন্তু বেশির ভাগ পাখি বিক্রি হয় অনলাইনে। এখান থেকেও প্রতি মাসে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আয় করেন আজাদ মিয়া ও সাদ। ভোর থেকে খামারের কাজ শুরু করেন দুই ভাই। তাদের সহযোগিতা করেন বাড়ির নারীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, শুধু বিদেশি নয়; তারা দেশি করলা ও লাউ চাষ করছেন। এবার দেড় লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন বলেও তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর