বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১৪২ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড ভ্রমণকন্যা আজমেরী বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, চায়না রেডিও, টাইম অব ইন্ডিয়া, সুইডেন রেডিও, ব্রায়ান টু, লেবানন টিভি, ডুমা রেডিওসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজের গল্প তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়।
খুলনার মেয়ে কাজী আসমা আজমেরী ছোটবেলা থেকেই ঘোরাঘুরি পছন্দ করেন। ঘুরে বেড়ানোর শখ আর আগ্রহকে পুঁজি করে ২০০৯ সালে কাজী আসমা আজমেরী নেমে পড়েন বিশ্বভ্রমণে। এরপর থেকে এক এক করে বিশ্বের ১৪২ দেশ ছুঁয়েছেন বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে। তার বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদ দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে আসমা বড়। খুলনা থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক করেন। একই বিষয়ে এমবিএ করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এসে জানালেন নিজের বিশ্বভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। আসমা আজমেরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাকে অনেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট গার্ল বলে ডাকে। আমার পাসপোর্টটা আমার সিম্বল। যা দেখে আমাকে অনেকেই চিনতে পারেন, আমি বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্ট গার্ল। আর বাইরের দেশে আমাকে গ্রিন পাসপোর্ট গার্ল বলে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে এ পর্যন্ত ১৪২ দেশ ভ্রমণ করার। আর ১৪২তম দেশ ছিল ওমান। আমার শুরুটা ছিল ২০০৯ সালে যখন একটা বন্ধুর বাসায় যাই। আমার বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তখন আমি খুব এক্সাইটেড থাকি এবং বলি, আমিও একসময় বিশ্বভ্রমণ করব। তো আমার বন্ধুর আম্মু বলেন, তুমি তো মেয়ে। তুমি কী পারবে? আমি বললাম, মেয়েদের টিকিটের দাম কি ছেলেদের থেকে বেশি যে পারব না। এটি বলায় সেখানে সবাই আমাকে বেয়াদব বলেন। আমার খুব রাগ হয় এবং ইগোতে আসে। আমরা ইউনিভার্সিটিতে তো সবাই একই বই পড়ি তাহলে কেন এ বৈষম্যটা হবে একটা ছেলে পারবে কিন্তু একটা মেয়ে পারবে না। আমি প্রথম নেপালে যাই ২০০৯ সালের পয়লা মে।
নেপালে যাওয়ার পর এভারেস্ট দেখি। সেটি দেখে আমি বিস্মিত হই। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি; আমি তো চয়েজ করিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করব। কিন্তু আমি ইচ্ছা করলেই ঘুরে বেড়াতে পারি। তখনই আমার সেই স্বাদ জাগে। সেখান থেকেই আমার ঘুরে বেড়ানো শুরু।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম আমার টাকা ছিল না। তখন আমার বাবার কাছে যাই। আমার বাবাটা ‘না’ বাবা। উনি সব কিছুতেই না বলেন। আমার আম্মু আমাকে সব সময় সাপোর্ট করেন। আমার আম্মু আমার যে গহনা ছিল সেটি বিক্রি করে ভ্রমণ শুরুর ব্যবস্থা করেন। এরপর আমার জমানো টাকা এবং চাকরির যে টাকা তার পুরোটাই ভ্রমণের জন্য খরচ করি।
আমি ২০২০ সালে যখন প্রথমবার ভিয়েতনামে যাই আমার ফিরতি টিকিট ছিল না। হোটেল বুকিং করা ছিল না এবং আমাকে সেখানে ডিপোটেড করে ও আমাকে ২৩ ঘণ্টা রেখে পরের ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেয়। যার ফলে আমার খুব মন খারাপ হয়।
পরে আমি একই বছরের মে মাসে আবার বোটে করে চলে যাই সাইপ্রাস। সাইপ্রাসে যখন যাই তখন বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভিসা ফ্রি থাকে। কিন্তু পাসপোর্টে ভিসা ফ্রি লেখা থাকলেও সেখানে গিয়ে হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নিয়ে যেতে হয়। মিনিমাম রিকয়্যারমেন্ট পার ডে ১০০ ডলার। সব কিছু নিয়েই আমি সাইপ্রাসে যাই। সেখানে শুধু গ্রিন পাসপোর্ট থাকায় আমাকে ঢুকতে দেয় না।
কয়েক ঘণ্টা সেখানে বসিয়ে রেখে ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে অবৈধ অধিবাসীদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। তখন আমি ২৭ ঘণ্টা আটক থাকি এবং প্রতিজ্ঞা করি বিশ্বের সব স্থানে এই সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে ঘুরব এবং বাংলাদেশি মানুষ যে বিশ্বভ্রমণ করতে পারে তা দেখাব। এভাবেই পথচলা।
আসমা আজমেরি বলেন, ২০১২ সালে আমি ৩২তম দেশ নিউজিল্যান্ডে যাই। নিউজিল্যান্ডের রেডক্রসে আমি চাকরি করতাম। ২০২১ সালে আমি সেই চাকরি ছেড়ে দেই। আমার যে সেভিংসয়ের টাকা ছিল এবং বাংলাদেশে একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে যে টাকা আসে তা দিয়ে এখন ভ্রমণ করি। প্রতি দেড় বছর চাকরি করি। সেই টাকায় ছয় মাস বিশ্বভ্রমণে বের হই।