প্রতিটি গাছে ঝুলছে লম্বা লম্বা কলার মতো মরিচ। এসব মরিচ ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা। এই মরিচ প্রথম দিকে হালকা সবুজ থাকলেও পুষ্ট হলে সবুজ রং ধারণ করে। প্রচুর পরিমাণে মরিচ ধরায় গাছে গাছে খুঁটি দেওয়া হয়েছে। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে চাষ হচ্ছে বিদেশি জাতের ব্যানানা মরিচ। জাতীয় যুব পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা পলিনেট হাউসে বাণিজ্যিকভাবে নতুন জাতের এই মরিচ চাষ করছেন। বিশেষ জাতের এই মরিচে ঝালের ঘ্রাণ থাকলেও খেতে ক্যাপসিকামের মতো।
সোহেল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি গত ডিসেম্বর মাসে বগুড়ার এক নার্সারি থেকে ৩০০ ব্যানানা মরিচ ও ২০০ ক্যাপসিকাম চারা এনে রোপণ করি। লাগানোর দুই মাস পর থেকে ফলন শুরু হয়। ব্যানানা মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় ও মূল্যবান সবজি। এটিকে আমাদের দেশে মিষ্টি কলা মরিচও বলা হয়। দেশে ব্যানানা মরিচ খাওয়ার প্রচলন বেশি না থাকলেও ক্রমেই এর কদর বাড়ছে। দেশের অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। খামার থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই মরিচ। এটি প্রচুর পরিমাণে ধরে, ওজনে বেশি হয়। গাছ অনেক বড় ও বেশিদিন ফলন দেওয়ার কারণে এই মরিচ চাষে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছি। বিদেশে এই মরিচের প্রচুর চাহিদা থাকায় অন্যান্য সবজির মতো এটি রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ইস্ফাত জেরিন মিনা বলেন, ‘সালাদ, পিৎজা, নুডুলস, চপসহ অভিজাত বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ক্যাপসিকামের পাশাপাশি ব্যানানা মরিচ ব্যবহার করছি। এটি স্বাদে অনন্য। আমরা রাজশাহী থেকে ক্যাপসিকাম কিনে রেস্টুরেন্টের চাহিদা পূরণ করি, এতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে এবং কোয়ালিটি কিছুটা কমে যায়। এখন হাতের নাগালে বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক থেকে প্রয়োজনীয় ক্যাপসিকামের পাশাপাশি ব্যানানা মরিচ পাচ্ছি। এতে পরিবহন খরচ লাগছে না এবং তাজা পণ্য পাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হওয়ায় আমাদেরও উপকার হচ্ছে। এই মরিচের চাষ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’ সাপাহার উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত বর্মণ বলেন, ব্যানানা মরিচ সাপাহারে প্রথমবারের মতো চাষে সাফল্য এসেছে। এই মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ভালো। মিষ্টি মরিচ খরা ও গোড়ায় পানি জমা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয়।