শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাজারো নরমাল ডেলিভারি করে প্রশংসিত ডা. নাজিয়া

♦ সন্তান প্রসব করলেই মিলছে উপহার ♦ প্রসূতি রোগীদের সেবায় টিম গঠন

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম

হাজারো নরমাল ডেলিভারি করে প্রশংসিত ডা. নাজিয়া

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বছরে হাজারো নরমাল ডেলিভারি করে চিকিৎসাসেবায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মৃত্যুঝুঁঁকি এড়াতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য প্রসূতি রোগীদের হাসপাতালমুখী করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বাড়ছে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা। পাশাপাশি বেড়ে চলেছে নরমাল ডেলিভারি। সন্তান প্রসব করলেই প্রসূতিদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ওষুধ ও বিশেষ উপহার সামগ্রী। এমন উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডা. নাজিয়া বিনতে আলম লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পরে প্রসূতি রোগীদের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাক্তার ও নার্সদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করেন। ধীরে ধীরে প্রসূতি রোগীদের সন্তান প্রসবে আস্থার ঠিকানায় পরিণত হতে থাকে হাসপাতালটি। একঝাঁক ডাক্তার ও নার্স প্রসূতি রোগীদের নিয়মিত আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে রয়েছে গাইনি ও সার্জারির জন্য পৃথক দুটি অপারেশন থিয়েটার ও আধুনিক সুসজ্জিত চারটি ডেলিভারি অবজারভেশন কক্ষ ও সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন ইউনিট। এখানে প্রয়োজনের বাইরে কোনো রোগীকে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানো হয় না। গত দুই বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এ সময়ে ২ হাজার নরমাল ডেলিভারির বিপরীতে মাত্র ১৫ জনকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম প্রসূতি রোগীদের যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা করে থাকেন। তিনি রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। কোনো প্রসূতি সন্তান প্রসব করলে তিনি পরম মমতায় নবজাতককে কোলে তুলে নেন। চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি রোগীদের কারও কোনো সমস্যা আছে কি না ওয়ার্ডে গিয়ে ও সিসি ক্যামেরায় তা নজরদারি করেন।

লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো প্রসূতি রোগী সন্তান প্রসব করলে মুহূর্তেই মিলছে বিনামূল্যে ওষুধ ও বিশেষ উপহার সামগ্রী। প্যাকেটে একজন প্রসূতির চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী থাকছে। এর ফলে কোনো প্রসূতিকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন উদ্যোগ সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

সেবা নিতে আসা প্রসূতি রোগী শেফালী জানান, ‘সন্তান প্রসবের জন্য আমার স্বামী যখন সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তখন ভয়ে ছিলাম। প্রতিবেশীরাও সেখানে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে ধারণা পাল্টে যায়। ওখানে এত ভালো চিকিৎসাসেবা পাব তা কল্পনা করিনি। আল্লাহর রহমতে ডাক্তারদের আন্তরিকতাপূর্ণ প্রচেষ্টায় আমি ও আমার সন্তান সুস্থ রয়েছি।’ জমির উদ্দীন নামক এক ব্যক্তি জানান, ‘কয়েক দিন আগে আমার স্ত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। ডাক্তার ও নার্সদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সে ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। বিনামূল্যে এ সেবা গ্রহণ করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগল। এ হাসপাতালটি প্রসূতি রোগীদের জন্য নিরাপদ ও আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এখানে প্রসূতি রোগীরা কোনো রকম ভয়ভীতি ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম বলেন, ‘মৃত্যুঝুঁকি কমাতে আমরা প্রসূতি রোগীদের নিরাপদ নরমাল ডেলিভারির সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি। যোগদানের পর এখানে বিশেষ টিম গঠন করে প্রসূতি রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গত দুই বছরে এখানে ২ হাজারেরও অধিক নরমাল ডেলিভারি ও ১৫ সিজারিয়ান ডেলিভারি করা হয়। প্রসূতিসহ সব রোগীকে আন্তরিকতাপূর্ণ ও নিরাপদ সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সর্বশেষ খবর