দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণাগারের ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে ফুটল বাচ্চা। গবেষকদের এই সফলতায় দেখা দিয়েছে আশার আলো। এতে দেশে উটপাখি পালন ও বংশবিস্তারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। এর মাধ্যমে উড়তে না পারলেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উটপাখির বংশবিস্তারে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিল বাংলাদেশে। দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধি, বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের জোগান দেওয়ার বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। ২০১৯ সালের প্রথম হাবিপ্রবির খামারে একটি উটপাখি ডিম দেয়। পরে ডিমটি ভেঙে যায়। দীর্ঘ গবেষণা আর চেষ্টার পর অবশেষে ইনকিউবেটরে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর সফলতা পেলেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গবেষকদের দাবি, ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। আরও সুখবরের সম্ভাবনা রয়েছে।
হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে ১১ জুলাই উটপাখির ডিম থেকে এই বাচ্চা ফোটে। বাচ্চাটির ওজন ৯৪৮ গ্রাম। দেড় মাস আগে ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১৯টি ডিম বসানো হয়। বাচ্চাটির সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন গবেষকরা। জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির (আরএসটিইউ) ভিসি প্রফেসর ড. এম এ গাফফার মিয়া ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২১টি উটপাখির বাচ্চা আনেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় তিনি খামার করে গবেষণা শুরু করেন দেশের আবহাওয়ায় উটপাখির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য।
এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ) ভিসি এম এ গাফফার মিয়া, হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রাশেদুল ইসলাম, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রেশন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. উম্মে সালমা, ডেইরি অ্যান্ড পোলট্রি সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান মিঠু, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, এনাটমি ও হিস্ট্রলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. খাদিজা আল ফেরদৌস, পিএইচডি গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম ও উটপাখির খামারি এলমিস অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী সুলতান ইফতেখার ওয়ালী। জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাবিপ্রবিতে ২০১৫ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম দুটি উটপাখির বাচ্চা আনা হয়। পরে ছোট-বড় মিলে আরও ১৯টি উটপাখি আনা হয়। হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসেই ভেটেরিনারি ভবনসংলগ্ন এক বিঘা জমিতে খামার স্থাপন করে গবেষণা শুরু করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল পরিবেশে গবেষণা বাধাগ্রস্ত হওয়া ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটায় ২০২১ সালে সদর উপজেলার গোপালগঞ্জের রানীগঞ্জ এলাকায় খামারি ও ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখার ওয়ালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি হয়। এরপর উটপাখিগুলো তার খামারে লালনপালন হতে থাকে। ওই খামারে উৎপাদিত ডিম থেকেই বাচ্চা ফোটানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।