বাবা ২০০৬ সালে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে নিখোঁজ হন। আজও খোঁজ মেলেনি দেলোয়ার খানের। দুই ছেলে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মা মরিয়ম বেগম। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করাচ্ছেন দুই ছেলেকে।
অভাবের সংসারে মায়ের কষ্ট লাঘবে দুই ভাই লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করে আর্থিক জোগানও দিচ্ছেন। কিন্তু ছোট ছেলে মো. নাঈম খান লেখাপড়ার পাশাপাশি অ্যাপ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন নাঈম। তিনি চলতি বছরে আলিম পরীক্ষা দিয়েছেন। এখন ফলাফলের অপেক্ষায়। দাখিল পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল করেছেন। নাঈম পাথরঘাটা উপজেলা সদর ইউনিয়নের নিজলাঠিমারা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন খানের ছেলে। লেখাপড়ার ফাঁকে দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অ্যাপস তৈরি করছেন।
উপকূলীয় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে বরগুনার পাথরঘাটার সব সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় সব সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই হাতের মুঠোয় আনতে তৈরি করেছেন ‘আমার পাথরঘাটা’ নামে একটি অ্যাপ। এঅ্যাপটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবে সাধারণ মানুষ। এ অ্যাপের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫টি ফিচার। সেগুলো হলো অনলাইন সেবা, অ্যাম্বুলেন্স, আমাদের কথা, ইউপি সদস্য, উদ্যোক্তা, উপজেলা প্রশাসন, খবর, জনপ্রতিনিধি, জাতীয় হেল্প সেন্টার, ট্রাক সার্ভিস, ডাক্তার, দর্শনীয় স্থান, পল্লীবিদ্যুৎ, পুলিশ, ফটোগ্রাফার, ফায়ার সার্ভিস, বাস, বাসা ভাড়া, রক্তদাতা, রেস্টুরেন্ট, সাংবাদিক, স্থানীয় পেজ, হাসপাতাল, হোটেল। এগুলো ছাড়াও আরও বেশকিছু ফিচার যুক্ত করার কাজ চলমান।
এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু করে দীর্ঘ এক বছর পরিশ্রম করে এ অ্যাপটি তৈরি করেছেন নাঈম। এটি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ। ২০১৯ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন, ২০২১ সালে নাঈম জাহাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় গভীর সমুদ্রে জাহাজের দিক নির্ণয়, জাহাজের সিরিয়াল তালিকা, আবহাওয়ার বার্তা, জোয়ার-ভাটার তথ্য, জাহাজের লোকেশন ট্র্যাকিং করা, মেরিন প্রশিক্ষণ সেন্টারের তথ্য, জাহাজের ধারণক্ষমতার পরিমাপের তথ্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা দিতে ‘নাবিক’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন। যদিও তা প্লে স্টোরে যায়নি। বর্তমানে এ অ্যাপটি নিয়েও কাজ করছেন।
‘আমার পাথরঘাটা’ নামের অ্যাপটির প্রতিষ্ঠাতা নাঈম বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি পাথরঘাটাকে নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা জাগে। তখনই একটি অ্যাপস তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই। অ্যাপসটির মধ্যে থাকবে পাথরঘাটার সব প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের তথ্যসমূহ।। যাতে করে উপজেলার সব মানুষ খুব সহজে হাতের মুঠোয় জরুরি সেবাগুলো পেতে পারে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ‘২০২১ সালের ‘নাবিক’ নামে যে অ্যাপটির কাজ স্থগিত ছিল, সেটি আবার চালু করব। খুব শিগগিরই নাবিকও প্লে স্টোরে যাবে। অভাবের সংসারে লেখাপড়ার পাশাপাশি এ কাজ কীভাবে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কাজেও অর্থের প্রয়োজন, আমার ভাই সংসারসহ আমার লেখাপড়ার খরচ জোগান দিচ্ছেন। আমি দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি, তা দিয়ে অ্যাপের অর্থের জোগান দিই।